odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Saturday, 15th November 2025, ১৫th November ২০২৫
সভাপতি/সাধারন সম্পাদকের পাল্টাপাল্টি প্রেস বিজ্ঞপ্তি

শ্রীনগর উপজেলা যুবলীগে ইউনিয়ন কমিটি ঘোষনা নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি । 

odhikar patra | প্রকাশিত: ২০ November ২০২২ ০৩:৪০

odhikar patra
প্রকাশিত: ২০ November ২০২২ ০৩:৪০

গতবছর ডিসেম্বরে  মুন্সিগঞ্জ জেলার  শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও  কমিটি ঘোষনা না করেই সম্মেলন শেষ করে উপজেলা যুবলীগ। ইউনিয়ন যুবলীগের সম্মেলনে কমিটি ঘোষনা বিষয়ে ঐসময় উপজেলা যুবলীগের সাধারণ-সম্পাদক হাজী নেছার উল্লাহ সুজন গনমাধ্যমকে জানান, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি ঘোষনা না করে, প্রার্থীদের বায়োডাটা নেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি বায়োটাডা দেখে প্রার্থীদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন।  

দীর্ঘ ১১ মাস পরে গত ১২ নভেম্বর শনিবার উপজেলা যুবলীগের প্যাডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে ৯ টি ইউনিয়ন যুবলীগের আংশিক অনুমোদন দেয় উপজেলা যুবলীগ । ঘোষিত কমিটির কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পোস্ট করা হলে তা মূহুর্তে ছড়িয়ে পরে। সাথে সাথে উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ নেতা কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ঘোষিত কমিটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ফিরোজ আল মামুন ও সাধারণ সম্পাদক  হাজী নেছার উল্লাহ সুজন। 

ঘোষিত কমিটির অনুমোদনের স্বাক্ষর জাল অভিযোগ করে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ফিরোজ আল মামুন তার নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেন, কোন এক কুচক্রীমহল শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে মিথ্যা বিভ্রান্তমূলক অপপ্রচার চালাচ্ছে। পরে গত রবিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জানান,  গতকাল ১২ নভেম্বর শনিবার, সোস্যাল মিডিয়া/ ফেসবুকের মাধ্যমে একটি কুচক্রি মহল শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সুনাম নষ্ট করার লক্ষ্যে শ্রীনগর উপজেলাধীন ৯টি ইউনিয়ন কমিটি উক্ত কুচক্রি মহলের পছন্দের লোকদের নাম ব্যবহার করে শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের প্যাড ব্যবহার করে এবং শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আমাদের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর স্কেনীং এর মাধ্যমে জাল করে যে কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে অপপ্রচার করা হয়েছে তাহা আমাদের শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের অনুমোদিত কমিটি নহে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেন ঘোষিত কমিটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কমিটি। এই কমিটির কোন বৈধতা নাই। তিনি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আর জানান, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কমিটির বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের  ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতারা অবগত নহে। তাই উক্ত কমিটির কোন বৈধতা নাই।  

অপরদিকে, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী নেছার উল্লাহ সুজন গত সোমবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলেন, গত ১২নভেম্বর শনিবার শ্রীনগর উপজেলাধীন ৯টি ইউনিয়নের কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। আমরা সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক দুইজনে একত্রিত হয়ে এবং জেলা সাধারন সম্পাদক ফেরদৌস আলম খানের উপস্থিতিতে দুজনে একসাথে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে সই এবং স্বাক্ষর করিয়াছি। এই ৯টি ইউনিয়নের কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদ শ্রীনগর উপজেলা যুবলীগ নিজস্ব প্যাডে লিখিত আকারে সই এবং স্বাক্ষর সম্পন্ন করিয়া কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। তাই উক্ত কমিটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট নয়, যদি ভিত্তিহীন হতো তাহলে আমি এবং আমার সভাপতি শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ এর ফিরোজ আল মামুন এবং আমি সাধারন সম্পাদক হাজী নেছার উল্লাহ সুজন সহ আমার এবং সভাপতির সই এবং স্বাক্ষর দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হতো। তিনি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আর উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত দুই নেতা উক্ত কমিটির বিষয়ে অবগত আছেন। এদিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাল্টাপাল্টি প্রেস বিজ্ঞপ্তির কারণে ঘোষিত কমিটি মিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। 

জানা যায়, উল্লেখিত ইউনিয়নের মধ্যে রয়েছে শ্রীনগর, বাঘড়া, ভাগ্যকুল, কুকুটিয়া, তন্তর, বীরতারা,  হাঁসাড়া, শ্যামসিদ্ধি, ও ষোলঘর ইউনিয়নের নাম। ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে যুবলীগের প্রস্তাবিত সভাপতি ও সাধরণ সম্পাদকের ওই তালিকায় উঠে আসে এলাকায় বিতর্কিত বেশ কয়েকজনের নাম। দলীয় নেতাকর্মীরা ভুয়া এই কমিটির তালিকা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘোষিত কমিটির এক ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি বলেন, কয়েক দিন পূর্বে জেলা কমিটির সাধার সম্পাদক ফেরদৌস আলমের সামনে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ফিরোজ আলম মামুন ও সাধারণ সম্পাদক হাজী নেছার উল্লাহ সুজনের স্বাক্ষরে ৯টি ইউনিয়ন কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আবার সে কমিটি তারা ভুয়া বলছে ব্যাপারটা এখনো বুঝতে পারছি না। এই নিয়ে এখন আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বের ভিতরে রয়েছে। নাম প্রাকাশে অনিচ্ছুক এক ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা বলেন এর পেছনে উপজেলা যুবলীগের নেতৃত্ব স্থানীয়দের বানিজ্য ও উর্ধতন এক যুবলীগ নেতার হাউজিং ব্যবসাকে পোক্ত করার দুরভিসন্ধি রয়েছে। 

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবলীগে সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আলম খান বলেন, গত কয়েকদিন পূর্বে আমার সামনে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজ হাতে লিখে এই কমিটি গুলোর অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদনের কপি গুলোও আমার কাছে রয়েছে। এই কমিটি ঘোষনা নিয়ে সাধারণ সম্পাদক অস্বীকার করছে না। কিন্তু সভাপতি অস্বীকার করছে কারন সে পূনরায় কমিটি নিয়ে  পদ বাণিজ্য করবে।  

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাজাহান খান বলেন , উপজেলা যুবলীগের সভাপতি যদি স্বাক্ষর না করে থাকে তাহলে তো এই কমিটি হবেনা। কমিটি তো এমনিই বাতিল। তিনি বলেন কমিটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এক মত হয়ে স্বাক্ষর করতে হবে। এবং সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক যদি মতের অমিল থাকে এবং নিয়ম বহির্ভূত ভাবে যদি কিছু করে থাকে তা হলে লিখিত অভিযোগ পেলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্তা নেয়া হবে। 

স্থানীয় আওয়ামীলীগ যুবলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা জানান যেহেতু কমিটি ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে উচিৎ ছিল জেলা যুবলীগ নেতাদের বিষয়টা সমাধানের উদ্যোগ নেয়ার। তাই এবিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। 

এবিষয় জানতে  কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা শহীদুল হক চৌধুরী রাসেলের সাথে মুঠোফোনে  যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যেয়ে বলেন, আমি দেশের বাহিরে ছিলাম গতকাল রাতে এসেছি এবিষয়ে এইমুহুর্তে আমি এবিষয়ে কোন কথা বলতে চাচ্ছিনা।  

এদিকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা বাবু সুভ্রত পাল এবিষয়ে মুঠোফোনে জানান, গত এক বছর আগেই সম্মেলনের পর শ্রীনগর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীদের সিভি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ মহাদয় যাচাই বাছাইয়ের জন্য নিয়েছেন। তার অনুমতি ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি দেয়ার এখতিয়ার কেউই রাখে না। তাদের স্বাক্ষর জাল হোক বা সঠিক হোক তারা তো বর্তমানে কমিটি দেয়ার কোন এখতিয়ারই রাখে না।তাহলে এই কমিটি তারা দিবে কি ভাবে।আমি সাধারণ সম্পাদকের প্রেস বিজ্ঞপ্তির চিঠিটা দেখেছি।এইটা একটা ভুয়া বানোয়াট কথা বার্তা । স্বাক্ষর জাল বিষয়টা তো অনেক পরের বিষয়। এই ৯টা কমিটি দেয়ার এখতিয়ার তাদের আছে কি-না। তিনি জানান, আজ থেকে একবছর আগে এই ৯টা ইউনিয়নের কমিটি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের মাননীয় চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ মহাদয়ের কাছে জমা দেয়া আছে।এ কমিটি এখনো উনার কাছে আছে উনি যাচাই বাছাই করতাছেন। এখন এই কমিটি ঘোষণা দেয়ার এখতিয়ার আর কারোই নাই। আমার নাই , আমি কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক,সাংগঠনিক সম্পাদক,জেলার সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, থানার সভাপতি সাধারণ সম্পাদক কারোই এই কমিটি ঘোষণা দেয়ার এখতিয়ার নাই। তিনি বলেন যেহেতু কমিটি গুলো চেয়ারম্যান মহাদয়ের কাছে জমা আছে সেক্ষেত্রে তারা উপজেলা যুবলীগ এই কমিটি ঘোষণা দিতে পারেনা। 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: