10/01/2025 প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ নীতি বিষয়ক কর্মশালা
odhikarpatra
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:৫৯
ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে 'প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন : নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়নের অগ্রগতি' শীর্ষক একটি পলিসি ব্রিফ অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, সিবিএম গ্লোবাল বাংলাদেশ ও নবলোক পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিবিএম গ্লোবাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু দাউদ মো. গোলাম মোস্তফা এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের উপসচিব ড. মোহাম্মদ নাজমুল হক।
প্রধান অতিথি রেজওয়ানুর রহমান বলেন, দুর্যোগ-সম্পর্কিত আইন, নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনার মধ্যে বিদ্যমান ফাঁক ও বাস্তবসম্মত সুপারিশগুলো সরকারের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদা পূরণে। তিনি উল্লেখ করেন, নীতিমালায় প্রধান দুর্যোগ-সম্পর্কিত ঝুঁকি ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন নীতিমালার ধারায় বিশ্লেষণ থাকা সত্ত্বেও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে বিভিন্ন গ্যাপ রয়েছে।
নীতিমালায় চিহ্নিত প্রধান গ্যাপগুলোর মধ্যে রয়েছে- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি সীমিত থাকা, স্থানীয় পর্যায়ে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলির কার্যকারিতা অপর্যাপ্ত, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির অভাব, আগাম সতর্ক সংকেত ব্যবস্থা দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত নয়, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও সংযোগ রাস্তার প্রবেশগম্যতার অভাব, র্যাম্প, সাইনবোর্ড ও প্রবেশগম্য ওয়াশরুমের অভাব, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকি ও প্রজনন ও স্বাস্থ্যসেবায় সীমাবদ্ধতা, এবং জাতীয় ডাটাবেসে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্যের অভাব।
কর্মশালায় উপস্থাপিত মূল সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভাজিত তথ্য সংগ্রহ, তাদের অংশগ্রহণ প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, আইন ও নীতিতে প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা সংযুক্তি, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও সতর্কতা ব্যবস্থায় প্রবেশগম্যতা বৃদ্ধি, জেন্ডার অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশল প্রণয়ন, বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, জলবায়ু সহনশীল জীবিকায়ন কর্মসূচি প্রবর্তন, স্থানীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবীদের সক্ষমতা তৈরি, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি বাস্তবায়নে পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্ব গঠন ও মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি।
অ্যাকসেস বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা পরিচালিত প্যানেল আলোচনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন, সিবিএম গ্লোবাল বাংলাদেশ, সরকারি কর্মকর্তা, এনজিও ও উন্নয়ন অংশীদাররা জাতীয় ও স্থানীয় পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা, সমন্বয় ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। স্থানীয় নেতা ও অংশগ্রহণকারীরা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, আর নীতিনির্ধারকরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তির সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন।
বিশেষ অতিথি আবু দাউদ মো. গোলাম মোস্তফা বাজেট সীমাবদ্ধতা ও সচেতনতার অভাবে বাস্তবায়নের ধীরগতি উল্লেখ করে বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২, দুর্যোগ সংক্রান্ত স্থায়ী আদেশ ২০১৯ ও জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫-র রিভিউ প্রক্রিয়া চলমান থাকায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয় অন্তর্ভুক্তি সম্ভব। ড. নাজমুল হক বলেন, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় ভবিষ্যতের সংশোধনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদা অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান সরকারের নীতি ও পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অর্থপূর্ণ অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব দেন।
অ্যাকসেস বাংলাদেশ এর হেড অব প্রোগ্রাম মো. সোহেল রানা নীতিমালার সংক্ষিপ্তসার উপস্থাপন করেন। এতে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন নীতি ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির একটি বিস্তৃত ব্যবধান বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেখানে নীতি পর্যালোচনা ও স্থানীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
কর্মশালায় ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, ওপিডি, এনজিও ও উন্নয়ন অংশীদাররা অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের দুর্যোগ ও জলবায়ু কৌশলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানটি অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন চেয়ারপারসন মহুয়া পাল-এর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।