12/03/2025 নেতানিয়াহু সরকারের সংস্কার ও মিডিয়ার কণ্ঠরোধ: ইসরায়েলে নির্বাচনের আগে নতুন বিতর্ক
Special Correspondent
২ December ২০২৫ ২৩:৪৫
নিউজ ডেস্ক │অধিকারপত্র
ইসরায়েল নির্বাচন বছরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর সর্বাত্মক চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ তীব্রতর হয়েছে। বছরের পর বছর মূলধারার মিডিয়ার সমালোচনা করে আসা নেতানিয়াহু এবার আরও কঠোর আইন প্রণয়নের পথে হাঁটছেন যা মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সাংবাদিক ও অধিকার সংগঠনগুলো। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গত চার বছরে দেশের তিন প্রধান সম্প্রচারমাধ্যমকে একটিও সাক্ষাৎকার দেননি। তিনি বারবার অভিযোগ করেছেন মিডিয়া জনগণকে ব্রেইনওয়াশ করছে এবং তার সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়ে দেশকে দুর্বল করছে। তবে ব্যক্তিগত বিরোধ এখন রূপ নিয়েছে আরও সুসংগঠিত কাঠামোগত আক্রমণে। সোমবার সরকার একটি বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে যার মাধ্যমে স্বাধীন মিডিয়া নিয়ন্ত্রকদের জায়গায় রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বসানোর আইন এগিয়ে নেওয়া হবে। এই পরিবর্তন সরকারকে সংবাদমাধ্যমকে জরিমানা, শাস্তি ও নিয়ন্ত্রণের ব্যাপক ক্ষমতা দেবে। যা অনেকের মতে ইসরায়েলের গণমাধ্যম কাঠামো চিরতরে পাল্টে দিতে পারে। যোগাযোগমন্ত্রী ও নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ শ্লোমো কারহি এই বিলটি প্রস্তাব করেন যা ইতিমধ্যে প্রথম পাঠে পাস হয়েছে। সরকারের দাবি এটি বাজার প্রতিযোগিতা বাড়ানো ও পুরোনো নীতিমালা আধুনিকায়নের উদ্যোগ। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধান বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যমগুলো এর তীব্র বিরোধিতা করছে। তারা বলছে এটি আসলে শত্রুতামূলক দখল। এক জরুরি যৌথ ফোরামের এক কর্মকর্তা বলেন, এটি নির্বাচনকে সামনে রেখে গণমাধ্যম দমনের সুস্পষ্ট চেষ্টা।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (RSF) এ বছর ইসরায়েলকে বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১১২তম স্থানে নামিয়ে দিয়েছে। RSF জানায় ভুল তথ্য প্রচার, দমনমূলক আইন ও সাংবাদিকদের ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। আল-জাজিরা নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে তৈরি একটি বিল এখন সম্প্রসারিত হয়ে বিদেশি গণমাধ্যম বন্ধের ক্ষমতাও সরকারকে দিতে পারে সেটিও আদালতের নজরদারি ছাড়াই। এ ছাড়াও সরকার পাবলিক ব্রডকাস্টার Kan 11 কে বেসরকারিকরণের উদ্যোগ, সামরিক রেডিও Galei Tzahal বন্ধের ঘোষণা এবং দুই বছর ধরে গাজায় বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ রাখা এসবকে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের বৃহত্তর কৌশলের অংশ হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বহারাভ মিআরা বিলটিকে স্বাধীন মিডিয়ার জন্য গুরুতর ঝুঁকি বলে সতর্ক করেছেন। শুধু প্রতিষ্ঠান নয় ব্যক্তিগত সাংবাদিকদের ওপরও হামলা বাড়ছে। নেতানিয়াহু সরকারের সমালোচনাকারী সাংবাদিকদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ, অনলাইন হয়রানি এবং হুমকি এখন নিত্যদিনের ঘটনা। চ্যানেল ১২ এর সাংবাদিক গাই পেলেগের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচারণা চালানো হয়েছে। তার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ, বিলবোর্ডে কারাগারে পাঠানোর দাবি এমনকি আদালত পর্যন্ত আশ্রয় নিতে হয়েছে তাকে। ইসরায়েলে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অক্টোবর ২০২৬-এ তবে সরকার ভেঙে পড়লে তা আগেও হতে পারে। উভয় অবস্থাতেই দেশ এখন কার্যত নির্বাচনী বছরে প্রবেশ করেছে যেখানে স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতান্ত্রিক জবাবদিহির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের গবেষক টেহিলা শোয়ার্টজ আলটশুলার জানান, রাজনৈতিক চাপ, নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিনিষেধ ও শারীরিক ভয়ভীতির অভূতপূর্ব সংমিশ্রণের মুখোমুখি এখন ইসরায়েলের গণমাধ্যম। ইসরায়েলের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচনকে সামনে রেখে গণমাধ্যমের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় উদ্বেগ বাড়ছে। সমালোচকদের মতে, এটি শুধু সাংবাদিকদের নয় জনগণের তথ্য জানার অধিকারকেও সংকুচিত করছে। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ওপর এমন চাপ অব্যাহত থাকলে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
--মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র