ঢাকা | শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু: সিলেটের রায়হান হত্যার প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর গ্রেপ্তার

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২০ ০২:২৬

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২০ ০২:২৬

 

রায়হান
 

সিলেটে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালে নির্যাতনের কারণে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত পুলিশের বরখাস্ত হওয়া সাব ইনসপেক্টর আকবর হোসেন আজ গ্রেপ্তার হয়েছে।

রায়হান নামে ওই যুবকের মৃত্যুর ঘটনা সম্প্রতি বাংলাদেশে বিরাট আলোচনার সূত্রপাত ঘটায়।

এনিয়ে সিলেটে বিক্ষোভ ও আন্দোলনও হয়েছে। এক পর্যায়ে এইসআই আকবরকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আলটিমেটাম দেয়া রায়হানের পরিবার, আলটিমেটাম শেষ হবার পর তারা অনশনও পালন করে।

অবশেষে আটাশ দিন পর মি. হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

পুলিশ বলছে, মি. হোসেন এতদিন পলাতক ছিলেন। তিনি ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। এরই এক পর্যায়ে সীমান্তে অঞ্চল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিলেটের পুলিশের এসপি নুরুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে জানান, সোমবার বেলা ১২টার দিকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তিনি বলেন, আগে থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভারতের সাথে সীমান্তবর্তী কানাইঘাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মি. ইসলাম বলেন, "সম্ভবত ওই এলাকায় হাইবারনেশনে ছিল আকবর হোসেন।"

এদিকে বিকেলে সিলেটে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে এ সম্পর্কি এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভারত থেকে নয় বরং বাংলাদেশি সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে এসআই আকবর হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই গ্রেফতারের সাথে সিলেট জেলা পুলিশ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

আকবর হোসেন ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, এবিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ নাই।

তিনি বলেন, "আদৌ পালিয়ে গিয়েছিল কিনা, এমনটা হতে পারে সে একবার পালিয়ে গিয়েছে আবার নিজে থেকে এলাকায় ঢুকতে চেয়েছে, আবার এমনও হতে পারে যে বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়া যাওয়ার পথে ধরা পড়েছে। দুই টাই হতে পারে।"

মি. উদ্দিন বলেন, কোনটি ঘটেছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। পুলিশ এবং পিবিআই তাকে যৌথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানানো হয়।

তবে পুলিশের কাছে যে তথ্য ছিল সেটি হচ্ছে, আকবর হোসেন বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।

গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশ কারো সহায়তা নিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে পুলিশ জানায়, "এখানে আমাদের নির্ভরযোগ্য বন্ধু ছিল যারা আমাদেরকে গ্রেফতারের কাজে সহযোগিতা করেছে।"

আকবর হোসেনকে কোন পুলিশ কর্মকর্তা সহায়তা করে থাকলে তদন্তের মাধ্যমে তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়।

রায়হান হত্যার অভিযোগ ওঠার শুরুর দিকেই পুলিশের তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি থেকে আকবরসহ ৭ জনকে বরখাস্ত ও প্রত্যাহার করা হয়।

কী ঘটেছিল রায়হানের সাথে?

গত ১০ই অক্টোবর সিলেটের কাষ্টঘর এলাকা থেকে রায়হান আহমেদকে আটক করে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়।

এরপর ভোররাতের দিকে অপরিচিত নম্বর থেকে রায়হান তার মামাতো ভাইকে ফোন করে টাকা নিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আসতে বলেন।

সকালে রায়হানের বাবা ফাঁড়িতে গেলে সেখান থেকে তাঁকে হাসপাতালে যেতে বলা হয়। হাসপাতালে গিয়ে রায়হানের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন তিনি।

ওই রাতেই নিহতের স্ত্রী পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এরপর থেকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন শুরু করে সাধারণ মানুষ।

১৫ দিনের মধ্যেও আইনের মানুষেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কেন গ্রেফতার করতে পারছে না। এবং প্রধান অভিযুক্ত আকবর হোসেন জবানবন্দি দেয়ার একদিন পর কীভাবে পালিয়ে গেল সেটা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

ঐ ঘটনার পর একদফা ময়নাতদন্ত শেষে রায়হানকে কবর দিয়ে দেয়া হলেও পরে কবর থেকে তুলে লাশ দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করা হয়।

ময়নাতদন্তে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যাওয়ার কথা জানায় মামলার তদন্তকারী সংস্থা।

যদিও, রায়হান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ শুরুতে দাবি করেছিল যে ছিনতাইয়ের অভিযোগে এলাকাবাসী তাকে গণপিটুনি দিয়ে আহত করেছে। পরে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়।

কিন্তু সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে কোন গণপিটুনির আলামত পাওয়া না যাওয়ায় ঘটনার মোড় ঘুরে যায়।

বিবিসি বাংলা 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: