ঢাকা | মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

আন্তর্জাতিক আকাশপথের রিফুয়েলিং হাব হবে কক্সবাজার: প্রধানমন্ত্রী

Shahadat Hossain Nishad | প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২২ ০০:১৮

Shahadat Hossain Nishad
প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২২ ০০:১৮

যেখানে-সেখানে যত্রতত্র, অপরিকল্পিতভাবে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করতে কক্সবাজারবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে পর্যটনের উন্নয়নে জেলার অনেকগুলো প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আগামীতে কক্সবাজার বিমানবন্দরই আন্তর্জাতিক আকাশপথের রিফুয়েলিং স্টেশন হবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

বুধবার (১৮ মে) সকাল ১১টার দিকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) নবনির্মিত ১০ তলা ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠ কক্সবাজার প্রান্তে যুক্ত ছিলেন তিনি।

কক্সবাজারবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে-সেখানে যত্রতত্র, অপরিকল্পিতভাবে কোনো স্থাপনা আপনারা করবেন না। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের জন্য অনেকগুলো প্রকল্প নিয়েছি।

এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিজ কার্যালয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের পর্যটন, সমুদ্র সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে ঘিরে সরকারের বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই পরিকল্পনার ভেতরে ২০১৬ সালে কক্সবাজারে যাত্রা শুরু করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন কউক’র চেয়ারম্যান লেফট্যানেন্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার।

ছোটবেলায় পিতার সঙ্গে কক্সবাজার যাওয়ার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা তো বেশিরভাগ সময় কারাগারে থাকতেন। যে বছর বাইরে থাকতেন আমাদের কক্সবাজার বেড়াতে নিয়ে যেতেন। সেই ১৯৬১ সাল থেকে শুরু করে বার আমরা কক্সবাজার গেছি, কক্সবাজার দেখেছি। কক্সবাজারের নৈসর্গিক সৌন্দর্য খুব আকর্ষণ করতো আমাদের। আজকাল উখিয়াতে কোনো জঙ্গল দেখা যায় না। এক সময় উখিয়ায় ঘন জঙ্গল ছিল। জঙ্গলের পথ দিয়ে আমরা সেই ডাকবাংলোতে গিয়ে থেকেছি। কক্সবাজারের ছোট ছোট কটেজ ছিল, সেখানে থাকতে হত।

কক্সবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, এটা আমাদের লক্ষ্য। সারাবিশ্বে এমন চমৎকার সমুদ্র সৈকত আর নাই। ৮০ মাইল লম্বা এবং দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত যেটা বালুকাময়। অনেক সমুদ্র সৈকত থাকে নুড়ি পাথর দেওয়া। কিন্তু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বালুকাময় এক চমৎকার সমুদ্র সৈকত। তার পাশাপাশি একদিকের পানি আরেক দিকে ঝাঁউবন।

কক্সবাজারের সার্বিক উন্নয়ন একান্তভাবে অপরিহার্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক এয়াররুট সেটাও কক্সবাজারের উপর থেকেই যাচ্ছে। যার জন্য এই অঞ্চলের উন্নয়নে আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। প্রাশ্চ্য-পাশ্চত্যের মধ্যে সেতুবন্ধন করার জায়গা। সেজন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলতেন, বাংলাদেশটাকে তিনি প্রাশ্চ্যের সুইজারল্যান্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করবেন।

জাতির পিতার নেতৃত্বে ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা আইন করা হয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য ১৯৭৪ সালে তিনি আইন করেন। ১৯৭৫ সালে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর যারা যারা একের পর এক ক্ষমতা দখল করেছিল তারা সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার আছে, এই বিষয়টা নিয়ে কখনোই কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। সেই অধিকার আমরা আজ প্রতিষ্ঠা করেছি।

তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করে আমাদের অর্থনীতিতে যাতে অবদান রাখতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা করতে চাই। তাই সুনীল অর্থনীতি আমরা গ্রহণ করেছি এবং এরই ভিত্তিতে উন্নয়নটাকে আরও ত্বরান্বিত করতে চাই।

কক্সবাজার আমাদের চমৎকার একটা জায়গা, এটাকে পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তোলা একান্তভাবে অপরিহায্য জানিয়ে কক্সবাজারবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যেখানে সেখানে যত্রতত্র, অপরিকল্পিতভাবে কোনো স্থাপনা আপনারা করবেন না। ইতোমধ্যে আমরা কক্সবাজারে অনেকগুলো প্রকল্প নিয়েছি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী মহেশখালী দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপসহ বিভিন্ন দ্বীপের উন্নয়নে গ্রহণ করা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, কক্সবাজোরের উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে এর উন্নয়নটা অপরিকল্পিতভাবে না হয়ে যাতে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী হয়। কারণ আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা রয়েছে। এটার পর্যটনের ক্ষেত্রটা আরও প্রসারিত করা। আমার দেশীয় পর্যটকের জন্য যেমন সুযোগ সৃষ্টি করা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকদেরও আকর্ষণীয় করার উদ্যোগটা আমরা নিতে চাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আজকে যারা পশ্চিমা দেশ থেকে প্রাশ্চ্যের দেশে যান। তারা কিন্তু এই কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে রিফুয়েলিং করবে। কারণ রিফুয়েলিং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ অগ্রাধিকার পায়। একময় হংকং ছিল। এরপরে সিঙ্গাপুর, এখন দুবাই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কক্সবাজারই হবে আন্তর্জাতিক আকাশপথে রিফুয়েলিং’র একটা জায়গা।

দেশের সকল আঞ্চলিক বিমানবন্দর থেকে যাতে সরাসরি বিমান কক্সবাজারে চলাচল শুরু হয় তার ব্যবস্থাও ভবিষ্যতে করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, কক্সবাজারে একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করার অনুমোদন দিয়েছি। সেখানে একটি মেডিকেল কলেজ করা হয়েছে, একটি হাসপাতালও করা হবে। পাশাপাশি আমাদের স্টেডিয়ামগুলোকে আরও উন্নত মানের করা হবে, যাতে আন্তর্জাতিক মানের খেলা হয়। সব থেকে ভাল উন্নত মানের কনভেনশন সেন্টারও কক্সবাজারে করা হবে, অন্য কোথাও না, রাজধানীতেও না।

কক্সবাজারের খুরুশকুলে আধুনিক শুটকি হাট করার পরিকল্পনা তুলে ধরেন প্রধামন্ত্রী বলেন, খুরুশকুলে একটি আধুনিক শুটকি হাট করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

কক্সবাজার উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সবার আগে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদগুলো রক্ষা করতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের দেশ। তাই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করেই আমাদের উন্নয়ন করতে হবে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রসৈকতে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ছাড়াও এখানে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আছেন, আমাদের যুবসমাজের অনেকে আছেন। সামনে আষাঢ় মাস। আষাঢ় মাসে আমরা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নেই। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পুরোটাই যেন ঝাউবন দিয়ে ঘিরে দিতে পারি। তাহলে যেকোনো ঝড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। প্রতিবছরই যদি সকলে মিলে কিছু ঝাউবন তৈরি করেন, তাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষদের রক্ষা করা যাবে।

তিনি বলেন, গোটা কক্সবাজার ঘিরেই আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। সেজন্য উন্নয়ন কৃর্তপক্ষ করে দিয়েছি। যাতে যথাযথভাবে এটার ব্যবহার করা হয়। আমরা চাই বাংলাদেশ এগিয়েছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি হোক। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে উঠুক। এটাই আমাদের লক্ষ্য।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: