
মো. আহসানুল ইসলাম আমিন :
মহাষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে আগামী ১ অক্টোবর শনিবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হবে। এ উপলক্ষে সারা দেশের মতো মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মন্দিরে মন্দিরে চলছে প্রতিমা নির্মাণের কাজ। প্রতিমা তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কারিগররা। প্রতিমা শিল্পীরা তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন দেবীর অবয়ব। অন্যদিকে, উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা আয়োজনে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
সরেজমিন ঘুরে প্রতিমা কারিগরদের ব্যস্ততার চিত্র দেখা গেছে। বেশির ভাগ মণ্ডপে প্রতিমা তৈরিতে মাটি ও রঙের কাজ শেষ করে এনেছেন শিল্পীরা। কোথাও কোথাও সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ। তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠছে দুর্গতিনাশিনী দুর্গার অবয়ব। দুর্গার সঙ্গে স্থান পাচ্ছে লক্ষ্মী, কার্তিক ও গণেশের মূর্তিও। সব মিলিয়ে চারিদিকে সাজ সাজ রব।
উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের আবিরপাড়া পালবাড়ীর বাবুল চন্দ্র পালের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, বাবুল চন্দ্রের মেয়ে দীপা রানী পাল মুন্সিগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজে স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী বাবার তৈরি প্রতিমায় নিজেই রঙ্গের আঁচড় দিচ্ছেন, তার হাতের ছোঁয়ার প্রতিমার অবয়বগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। দীপা রানী পাল জানান, প্রতিমা তৈরি করা তাদের বংশীয় ব্যবসা।প্রতি বছর দূর্ঘা উৎসব এলে তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যস্ততা বহুগুণ বেড়ে যায়। তিনি জানান, কিছু দিন পরে পুঁজ ।আমাদের এখন কর্মব্যস্ততা চলছে রং করার। এখন দম ফেলবার সময় নেই। এখন রংতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হবে অবয়ব। ফুটিয়ে তোলা হবে নাক-চোখ-মুখ। রঙের কাজ শেষ করতে সার দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে । পড়াশোনার পাশাপাশি বাবাকে প্রতিমা তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন বলে জানান দীপা রানী পাল।
প্রতিমা কারিগর শিপন পাল বলেন, প্রতিমা তৈরি করা অনেক কষ্টের। আমি আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি। এবার আমি ৫টি প্রতিমা তৈরি করছি। আর আগের মতো লাভ হয় না। তার পরও করতে হয় সংসার চালানোর জন্য। এখন দুর্গা প্রতিমাগুলোর সুসজ্জিত করা হচ্ছে।
এবার সিরাজদিখান উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩ টি ইউনিয়নে ১১৭ টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলার পূঁজা উদযাপন পরিষদ। যা গত বছরের তুলনায় ৯ টি বেশি। এ বছর চিত্রকোট ইউনিয়নে ১৯ টি, শেখরনগর ১৪ টি, রাজানগর ১৩ টি,কেয়াইন ১৮ টি,বাসাইল ৪ টি,রশুনিয়া ১২ টি , ইছাপুরা ৪ টি, জৈনসার ৬ টি, মধ্যপাড়া ৪ টি, লতব্দী ৪ টি,মালখানগর ৯টি,বয়রাগাদী ৫টি এবং কোলা ইউনিয়নে ১টি পুজামন্ডপে দুর্গাৎসব অনুষ্ঠিত হবে।এই উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের হিন্দু সম্প্রদায়ে না থাকায় এখানে কোন পূঁজা মন্ডপ নেই।
উপজেলার পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গোবিন্দ্র দাস পোদ্দার জানান, উৎসাহ উদ্দীপনা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সনাতন ধর্মালম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গোৎসব নিয়ে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় চলছে সাঁজ-সাঁজ রব। পূজার আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে পুজারী থেকে শুরু করে কর্মব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা কারিগররা। সব মিলিয়ে প্রতিটি এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে মহা আনন্দের ছোয়া। তবে এক্ষেত্রে সকল আনন্দকে সর্বোত্তম জায়গায় এগিয়ে নিতে সর্বশেষ পরিশ্রমের মূলে রয়েছে প্রতিমা তৈরির কারিগররা। প্রত্যেক কারিগরের শুধু লক্ষ্য তৈরিকৃত প্রতিমার সৌন্দয্য বৃদ্ধি করে ভক্তদের আনন্দকে সার্থক করে তোলা। তাই শেষ মূহুর্তে প্রস্তুতিতে যেন দম ফেলার ফুরসুত নেই তাদের।
সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ একে,এম মিজানুল হক বলেন, এবার যেকোন দূর্ঘটনা প্রতিহত করতে প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে দেবী বিসর্জন পর্যন্ত সেচ্ছাসেবী টিমসহ প্রশাসনিক নজরদারি সার্বক্ষণিক থাকবে। প্রতিটি পূঁজা মন্ডপের সভাপতি-সাধারন সম্পাদকদের সাথে আমার কথা হয়েছে। বিভিন্ন পূজামন্ডবে আনছার, পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে এবং প্রতিটি পূঁজা মন্ডপে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পুলিশ সার্বক্ষণিক টহল ব্যবস্থাও জোরদার করা হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: