ঢাকা | রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১০৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২২ ০৫:৩১

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২২ ০৫:৩১

বোলারদের পর ব্যাটারদের ব্যর্থতায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে লজ্জার রেকর্ড গড়ে হারলো বাংলাদেশ।

আজ গ্রুপ-২এর ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১০৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে রান বিবেচনায় এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার টাইগারদের। আগেরটি ২০০৮ সালে করাচিতে পাকিস্তানের কাছে ১০২ রানের ব্যবধানে হেরেছিলো বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটার রিলি রুশোর  ঝড়ো  সেঞ্চুরিতে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ২০৫ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫৬ বলে ১০৯ রানের ইনিংস খেলেন  রুশো  জবাবে ২১ বল হাতে রেখে ১০১ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস হেরে প্রথমে বোলিং করতে নামে বাংলাদেশ। একাদশে একটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। মিডল অর্ডার ব্যাটার ইয়াসির আলির জায়গায় একাদশে স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বল হাতে বাংলাদেশকে দারুন সূচনা এনে দেন আগের ম্যাচের হিরো পেসার তাসকিন আহমেদ। প্রথম ওভারেই সাফল্য পান তাসকিন।  ওভারের শেষ বলে ২ রান করা প্রোটিয়া অধিনায়ক তেম্বা বাভুমাকে  বিদায় করেন  তিনি।
অবশ্য শুরুতে অধিনায়ককে হারালেও ভড়কে যাননি আরেক ওপেনার কুইন্ট ডি কক ও তিন নম্বরে নামা রিলি রুশো। তাসকিনের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভার থেকে ২১ রান তুলেন ডি কক-রুশো জুটি।  ওভারে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন ডি কক।
ডি কক ও রুশোর ঝড়ে ৫ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান পৌঁছায় ৫৮ রানে। ষষ্ঠ ওভারে এ জুটির  ঝড় থামায় বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ১৮ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা।
বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে দক্ষিণ আফ্রিকার রান গতি কিছুটা কমে আসে। দশম ওভারে ৩০ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করেন রুশো।
১১তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে ২১ রান দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।  এ ছাড়া ফ্রি হিটের সময় উইকেটরক্ষক নুরুল তার জায়গা থেকে সরে যাওয়ায় ৫ রান পেনাল্টি পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে ১১তম ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান শতরানে পৌঁছে।
তাসকিনের করা তৃতীয় ও ইনিংসের ১৪তম ওভার থেকে ২৩ রান তুলেন ডি কক ও রুশো। ডি কক ১টি ছয় ও রুশো  তিনটি চার মারেন। ওভারের চতুর্থ বলে ডিপ থার্ড ম্যানে হাসান  ক্যাচ ফেললে ৮৮ রানে জীবন পান রুশো।
১৫তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে ডি কক-রুশো জমানো  জুটি ভাঙ্গেন অকেশনাল অফ-স্পিনার আফিফ হোসেন। ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং-অফে সৌম্যকে ক্যাচ দেন ডি কক। ৩৮ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৩ রান করে আউট হন  কক।
টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে  ৮৫ বলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ  ১৬৩ রানের জুটি গড়ের রুশো-কক।
১৭তম ওভারের শুরুতেই ট্রিস্টান স্টাবসকে থামিয়ে প্রথম উইকেটের দেখা পান সাকিব। ওভারের চতুর্থ বলে ১ রান নিয়ে ২৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির স্বাদ নেন রুশো । এ জন্য বল খেলেছন ৫২টি। গত ৪ অক্টোবর ইন্দোরে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন রৌসু।
ইনিংসের ১৯তম ও নিজের তৃতীয় ওভারে সেঞ্চুরিম্যান রুশো থামেন সাৃকিবের বলে।  রুশোকে  আউট করে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারে নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদিকে স্পর্শ করেন সাকিব। সাকিব-সাউদির শিকার এখন সমান ১২৫ করে।
৭টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৫৬ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১০৯ রান করেন রুশো।
শেষ ৫ ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে মাত্র ৩৪ রান দেন বাংলাদেশের বোলাররা। এতে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ২০৫ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান দক্ষিণ আফ্রিকার।
বল হাতে সাকিব ৩ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। তাসকিন ৩ ওভারে ৪৬ রানে, হাসান ৪ ওভারে ৩৬ রানে ও আফিফ ১ ওভারে ১১ রানে ১টি করে উইকেট নেন।
২০৬ রানের বিশাল টার্গেটে পেসার কাগিসো রাবাদার প্রথম ওভারেই ১৭ রান নেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার। শান্ত ১টি চার ও সৌম্য ২টি ছয় মারেন।
তবে এনরিচ নর্টির করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে সৌম্য ও চতুর্থ বলে শান্ত বিদায় নেন। সৌম্য ৬ বলে ১৫ ও শান্ত ৯ বলে ৯ রান করেন।
২৭ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ধ্বস নামে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপে। ৩ উইকেটে ৩৯ থেকে ৮৫ রানে পৌঁছাতেই ৮ উইকেট নেই টাইগারদের। এ সময় দলের স্বীকৃত ব্যাটার সাকিব-আফিফ ১, মিরাজ ১১, মোসাদ্দেক শূন্য, নুরুল ২ রান করে ফিরেন। এক প্রান্ত আগলে খেলতে থাকা লিটন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৪ রান করে আউট হন।
৮৯ রানে নবম উইকেট পতনে, ১শর নীচে গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। শেষদিকে মুস্তাফিজের ৩ বলে ১টি ছক্কায় অপরাজিত ৯ ও তাসকিনের ১০ রানের সুবাদে ১শ রান স্পর্শ করতে পারে বাংলাদেশ। তবে  ১৬ দশমিক ৩ ওভারে ১০১ রানে অলআউট হয় টাইগাররা।
৩ দশমিক ৩ ওভারে মাত্র ১০ রানে ৪ উইকেট নেন দক্ষিণ আফ্রিকার  নর্টি। শামসি ৪ ওভারে ২০ রানে ৩ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন রৌসু।
২ খেলা শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ পয়েন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার ৩ পয়েন্ট।
আগামী ৩০ অক্টোবর ব্রিজবেনে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। একই দিন ভারতের বিপক্ষে লড়বে দক্ষিণ আফ্রিকা।  
স্কোর কার্ড : (টস-দক্ষিণ আফ্রিকা)
দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস :
বাভুমা ক নুরুল ব তাসকিন ২
ডি কক ক সৌম্য ব আফিফ ৬৩
রুশো ক লিটন ব সাকিব ১০৯
স্টাবস ক লিটন ব সাকিব ৭
মার্করাম ক সৌম্য ব হাসান ১০
মিলার অপরাজিত ২
পারনেল অপরাজিত ০
অতি (লে বা-১, নো-৪, ও-২, পেনা-৫) ১২
মোট (৫ উইকেট, ২০ ওভার) ২০৫
উইকেট পতন : ১/৭ (বাভুমা), ২/১৭০ (ডি কক), ৩/১৮০ (স্টাবস), ৪/১৯৭ (রুশো), ৫/২০৪ (মার্করাম)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তাসকিন : ৩-০-৪৬-১ (নো-৩),
মিরাজ : ৩-০-৩২-১,
হাসান : ৪-১-৩৬-১ (ও-২),
মুস্তাফিজুর : ৪-০-২৫-০,
মোসাদ্দেক : ২-০-১৬-১,
সাকিব : ৩-০-৩৩-১ (ও-১),
আফিফ : ১-০-১১-০।
বাংলাদেশ ইনিংস :
শান্ত বোল্ড ব নর্টি ৯
সৌম্য ক ডি কক ব নর্টি ১৫
লিটন ক স্টাবস ব শামসি ৩৪
সাকিব এলবিডব্লু ব নর্টি ১
আফিফ ক পারনেল ব রাবাদা ১
মিরাজ ক মার্করাম ব শামসি ১১
মোসাদ্দেক স্টাম্প ডি কক ব মহারাজ ০
নুরুল ক নর্টি ব শামসি ২
তাসকিন বোল্ড ব নর্টি ১০
হাসান রান আউট ০
মুস্তাফিজ অপরাজিত ৯
অতিরিক্ত (বা-৪, লে বা-১, ও-৪) ৯
মোট (অলআউট, ১৬.৩ ওভার) ১০১
উইকেট পতন : ১/২৬ (সৌম্য), ২/২৭ (শান্ত), ৩/৩৯ (সাকিব), ৪/৪৭ (আফিফ), ৫/৬৬ (মিরাজ), ৬/৭১ (মোসাদ্দেক), ৭/৭৬ (নুুরুল), ৮/৮৫ (লিটন), ৯/৮৯ (হাসান), ১০/১০১ (তাসকিন)।
দক্ষিণ আফ্রিকা বোলিং :
রাবাদা : ৩-০-২৪-১ (ও-৩),
পারনেল : ২-০-১৮-০ (ও-৩),
নর্টি : ৩.৩-০-১০-৪ (ও-৩),
মহারাজ : ৪-০-২৪-১ (ও-৩),
শামসি : ৪-০-২০-৩ (ও-৩),
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ১০৪ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : রিলি রৌসু (দক্ষিণ আফ্রিকা)।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: