
বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে খেলা হবে বলে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নাকি ১০ ডিসেম্বর রাস্তায় বেরোবে। ১০ ডিসেম্বর নাকি বিজয় মিছিল করবেন খালেদা জিয়াকে নিয়ে। তার মানে লাঠিসোঁটা নিয়ে নামবেন। এর বিরুদ্ধে খেলা হবে। বাড়াবাড়ি করলে ছাড় দেবো না। রবিবার (৬ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘লাফালাফি বাড়াবাড়ির কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। (বিএনপি নেতারা) বক্তব্য দেন, শেখ হাসিনার নামটা পর্যন্ত শালীনতার সঙ্গে উচ্চারণ করেন না। করেন হাসিনা হাসিনা। ‘আর রাজনীতি করবো না’ বলে দেশ ছেড়েছেন ২০০৮ সালে। মুচলেকা দিয়ে লন্ডন গেছেন। নেতা। আন্দোলনের! নির্বাচনের! খেলা হবে এমনি বলিনি।’’
‘খেলা হবে’ স্লোগান নিয়ে জাতীয় পার্টির ফিরোজ রশীদের সমালোচনার জবাবে কাদের বলেন, ‘‘ভারতে পশ্চিমবঙ্গে যে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে মমতা ব্যানার্জি বিপুল সংখ্যায় গরিষ্ঠতা পেয়ে জিতেছেন। সেখানে মূল স্লোগান ছিল ‘খেলা হবে’। নরেন্দ্র মোদিও দুর্নীতি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে এগুলো বলে বক্তব্য দিয়েছেন। এটা কোনও হালকা বিষয় নয়। রাজনীতিতে এই পলিটিক্যাল হিউমার আছে। আমি কালকে বাড্ডায় বক্তব্য দিয়েছি। দেড়-দুই লাখ মানুষ, সারা মাঠ খেলা হবে বলেছেন। জনগণ তো এটা অপছন্দ করছেন না। আপনি কেন করছেন? আপনার ভালো লাগে না আপনি বলবেন না। আমি বলবো, এটা একটা পলিটিক্যাল স্লোগান। পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতে এই স্লোগান বেশি হয়েছে। তাতে কি গণতন্ত্র হালকা হয়ে গেছে? জনগণ কি সেটা মনে করে? জনগণ তো সমস্বরে স্লোগান দিচ্ছে। উচ্চারণ করছে। যেহেতু জনগণ বলছে, আমি তো সেজন্য বলছি। হালকা কথা। হালকা কৌতুক রাজনীতিতে আছে। গণতান্ত্রিক দেশে আরও বেশি হয়। আপনাদের মতো বাজে ভাষা, অশালীন ভাষায় আমরা কিন্তু কথা বলি না। হাসিনা হাসিনা, সর্দারও বলে। ছাগলের তৃতীয় বাচ্চাও বলে।’’
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে কাদের বলেন, ‘আমরা তো মারামারি করতে বলিনি। বলছি, এই যে দুর্নীতিটা করেছেন, ৫ বার চ্যাম্পিয়ন, এর বিরুদ্ধে। পলিটিক্যাল টার্ম। ভোট চুরির জন্য এক কোটি ২৩ লাখ। ওয়ান ইলেভেন কি এমনিতেই আসছে? দলীয় লোক আজিজ মার্কা নির্বাচন করতে গেছে। মনে আছে! এগুলো বলি।’
তিনি বলেন, ‘‘২১ আগস্ট মাস্টারমাইন্ড। মুফতি হান্নান বলেছে, ‘হাওয়া ভবনের সিগন্যাল পেয়ে আমরা গ্রেনেড হামলা শুরু করেছিলাম।’ এগুলো ভুলে গেছেন, হারুনুর রশীদ সাহেব? শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছেন। মাস্টারমাইন্ড তারেক জিয়া। এসব কথা বললে আপনাদের গায়ে লাগে কেন? জ্বালা করে কেন? বুকে বড় জ্বালা! অন্তর জ্বালা।’’
বৈশ্বিক মহামারিকে পুঁজি করে বিএনপি অপরাজনীতি করতে চায়—এমন দাবি করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘সারা দুনিয়ায় দুর্ভোগ। এ দেশের প্রধানমন্ত্রী রাতে ঘুমান না। সারা রাত জেগে থাকেন। তারও কষ্ট হয়—সাধারণ মানুষ কষ্ট করছেন, দুর্ভোগে আছেন দেখে। সারা দুনিয়ায় মানুষ দুর্ভোগে আছে। এর জন্য আমরা দায়ী? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তারপর নিষেধাজ্ঞা। আর আমাদের অবস্থা আজকে বেহাল। আমরা গরিব দেশগুলোই সাফার করছি। পৃথিবীর অন্য দেশে এজন্য কেউ সরকারকে দায়ী করছে না। সরকারের পতন দাবি করছে না। আপনারা বৈশ্বিক সংকটের জন্য সরকারের পদত্যাগ দাবি করছেন। যেই সরকার এ দেশে সবচেয়ে জননন্দিত সরকার। ৭৫ পরবর্তীকালে শেখ হসিনার চেয়ে সৎ প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন? বলেন? এত দক্ষ প্রশাসক। করোনা কীভাবে মোকাবিলা করেছেন? বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছেন। যা উন্নত দেশও দিতে পারেনি। সামাল আমরা দেইনি? সামাল দিয়েছি। এখনও আমরা সামাল দিয়ে যাচ্ছি। সারা দুনিয়ায় মূল্যস্ফীতি। সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষে ৩৬ সেকেন্ডে একজন মারা যাচ্ছে। সেখানে তো জনগণ সরকার পতনের দাবি করেননি।’
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির জবাবে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে উচ্চ আদালত মিউজিয়ামে পাঠিয়েছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে লাফালাফি। বাড়াবাড়ি। রাস্তায় হুমকি। জাতীয় পতাকা লাঠির সঙ্গে বেঁধে রাস্তায় নামেন। এটা হচ্ছে বাড়াবাড়ি। এই বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে খেলাও হবে। প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা বাড়াবাড়ির জন্য বলেছেন। আমরা ছাড় দিচ্ছি। কিন্তু মনে রাখবেন বাড়াবাড়ি করলে ছাড় দেবো না। পরিষ্কার কথা। আমরা আওয়ামী লীগ কোথাও কী আপনাদের সঙ্গে মারামারি করতে গেছি? আমরা তো বিএনপির সমাবেশে মারামারি করতে যাইনি। কেন এসব কথা তুলছেন।’
বিএনপির আমলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা লোকও কি ঘরে থাকতে পেরেছি? ৫ বছরে আমি ৫ দিনও ঘরে থাকতে পারিনি। আমাদের নেতাদের প্রত্যেকের গায়ে দাগ আছে। বেধড়ক পিটুনি।’
তিনি বলেন, ‘হারুনুর রশীদ, আপনাদের ফখরুল থেকে শুরু করে সব নেতা ঘরে থাকেন। আমাদের নেতারা বাড়িঘরে থাকতে পারিনি। রাস্তায় বেধড়ক পিটুনি। আপনারা বিএনপি—বাংলাদেশ নালিশ পার্টি।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘বেগম জিয়া কীভাবে মুক্ত হয়ে বাসায়। ১৩ বছরে ১৩ মিনিট রাস্তায় দেখিনি। বিক্ষোভের ডাক দিয়ে ঘরে বসে হিন্দি সিনেমা দেখেছেন। আর পুলিশের গতিবিধি লক্ষ করেছেন। নিজের দলের নেতার জন্য চোখে পড়ার মতো মিছিল বাংলাদেশের কোথাও দেখিনি। বেগম জিয়াকে শেখ হাসিনা উদারতা দেখিয়ে নির্বাহী আদেশে বাসায় থাকতে দিয়েছেন। বয়স ও স্বাস্থ্য বিবেচনা করে মানবিক কারণে মুক্ত করে বাসায় পাঠিয়েছেন। আপনারা তো তার জন্য কিছুই করতে পারেননি।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: