
অধিকারপত্র ডেক্স:
জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী অনেকে ক্ষমতাসীন দলে অনুপ্রবেশ করেছে, তাদের কেউ কেউ নেতৃত্বেও জায়গা করে নিয়েছে। ওরা এখন আমাদেরকেই আক্রমণ করে। অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগকেও খেয়ে ফেলছে। তিনি বলেন, প্রয়াত সাংবাদিক-কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী মৃত্যুর আগে একাধিক কলামে লিখে গেছেন- খোদ সরকারপ্রধানের চারপাশে এদের অবস্থান। ক্ষমতাসীন দলও বলছে- স্বাধীনতাবিরোধীরা দলে অনুপ্রবেশ করেছে, সব অপকর্মের মূলে এরা, এদের ছাড় নেই। অতএব, বাঁচতে হলে আমাদের সাবধান থাকতে হবে, আমাদের সিদ্ধান্ত আমাদেরকেই নিতে হবে।
আজ শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে ‘ওয়াটারফল কনভেনশন হলে’ অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টি-জেপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সভায় উদ্বোধনী পর্বে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, একসময় ছাত্রদল করা, রাজাকারের ছেলে, অনুপ্রবেশকারীরা এখন বড় নেতা বনে গেছে। তারা নিজেদের এতটাই শক্তিশালী ভাবছে যে, আমাদেরকে পিটিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়ার কথাও উচ্চারণ করছে। আন্দোলন নয়, ক্ষমতা নয়; মান-সম্মান রক্ষায় এবং অস্তিত্বের জন্য এখন আমাদেরকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ অবস্থায় নির্বাচন সম্পর্কেও ঠাণ্ডা মাথায় আমাদের ভাবতে হবে। তিনি বলেন, দেশে এখন নির্বাচন হলে হয়তো অনেকে তাতে অংশগ্রহণ করবে না। আমরা তাদের সঙ্গে নেই।
জেপি চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে আলোচনা শেষে বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিকরা আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন- আমরা নির্বাচনে যাব কিনা, বিএনপি না এলেও যাব কিনা; জবাবে সেদিন বলেছিলাম- আমরা বিপ্লবীও নই, বিদ্রোহীও নই, সন্ত্রাসীও নই; বন্দুকের নলের গোড়ায় ক্ষমতা এটা আমরা জানি না; আমাদের অবস্থান নির্বাচনের পক্ষে। তবে, এবার নির্বাচন প্রশ্নে আমাদেরকে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, জেপির লক্ষ্য আছে, নীতি-আদর্শ আছে। দেশে গণতন্ত্র থাকুক তা আমরা চাই।
তিনি আরও বলেন, সেই পাকিস্তান আমল থেকেই জোটের ইতিহাস হতাশাজনক। প্রথম জোট হলো যুক্তফ্রন্ট। অল্পদিনের মধ্যেই সেখান থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নাম নেই, হয়ে গেল হক-ভাসানীর জোট। ৬ দফা দেওয়া হলো, পরে সেটা হয়ে গেল ১১ দফা। কীভাবে হলো, জানি না। বলা হলো- আওয়ামী লীগের পক্ষে এককভাবে ৬ দফা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, এজন্য ১১ দফা করতে হবে। জোটবদ্ধ ছাড়া নাকি আন্দোলন ও নির্বাচন হয় না, কিন্তু ফলাফল শূন্য। একইভাবে এখন ১৪ দলের শরিকদের বক্তব্য-বিবৃতি শুনলে মনে হয় তারা তাদের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত।
সম্প্রতি একটি পৌরসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গ ইঙ্গিত করে জেপি চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন কমিশন নিজেরাই বলে, আগের রাতেই ভোটকেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার তার কেটে ফেলা হয়েছে। পরে কী হলো? কমিশন নিজেই একজনকে চিহ্নিত করল, আইনে তার দুই বছর জেল হওয়ার কথা। কমিশন এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে চিঠিও লিখল। তারপর কী হলো?
কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সভায় উদ্বোধনী পর্বে জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিকভাবে দেশ বর্তমানে খুব ক্রান্তিলগ্নে। নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট বিভাজন রাজনৈতিক অঙ্গনকে প্রভাবিত করছে। ক্ষমতাসীনরা বলছে- তারা এ সরকারকে রেখেই নির্বাচনে যাবে। বিএনপি ও তাদের মিত্র জোটগুলো বলছে- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। একটা সংঘাতময় পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতিতে ১৪ দলের শরিক হিসেবে জেপি ভূমিকা রাখছে। জেপি সবসময় নির্বাচনমুখী দল।
জাতীয় পার্টি-জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাদেক সিদ্দিকী বলেন, জেপি সঠিক রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দল কখনো নির্বাচন বর্জন বা বয়কট করেনি। ভবিষ্যতেও দল সঠিক সিদ্ধান্তই গ্রহণ করবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহিম, এইচএম সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, রুহুল আমিন, মফিজুল হক বেবু, আজিজ বাঙ্গাল, নাজমুন্নাহার বেবী, মোহাম্মদ আলী মিয়া ও মহিবুল হাসান মাহিম, ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন রেণু, ফতেহ আলী টিপু ও মো. আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল ইসলাম রুবেল, যুগ্ম-মহাসচিব ও দপ্তর সম্পাদক এম সালাহ উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব আমিনুল ইসলাম তপন, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী) আব্দুল মাজিদ সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের সিদ্দিকী আবু, যুগ্ম-প্রচার সম্পাদক জীবন কৃষ্ণ বৈরাগী প্রমুখ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: