
‘এক একটি বাংলা অক্ষর, এক একটি বাঙালির জীবন’ এই কালজয়ী কথামালা শিল্পী কামরুল হাসানের। শিল্পীর এই বাণী উঠে এসেছে একুশের গ্রন্থমেলার ক্যানভাসে। বিলবোর্ডে এমনি কালজয়ী বিশজন কবি, লেখক, মনিষী, শিল্পীর বাণীগুলো মেলার দর্শকদের আকর্ষণ করছে।
মেলাঙ্গনে বিশজন কবি-সাহিত্যিকের কালজয়ী চরণ লেখা সাড়ে তিনশ’ বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের ফুটপাতে শতাধিক বিলবোর্ডের বাণীগুলো পড়ার জন্য লোকজন ভীড় করছে। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির ভেতরে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার বিভিন্ন সারিতে স্থাপন করা হয়েছে প্রায় দুইশ’ ক্যানভাস।
ভাষা আন্দোলন ও শহীদদের ওপর লেখা কালজয়ী অন্যান্য বাণীগুলো হচ্ছে,ভাষা সৈনিক ও শিল্পী আবদুল লতিফের ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়’, আবদুল গাফফার চৌধুরীর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’, কবি সুফিয়া কামালের ‘মূকের ফুটেছে ভাষা, ভীরু কন্ঠে বেজে উঠে গান’, অতুল প্রসাদ সেনের ‘মোদের গরব মোদের আশা, আমরি বাংলা ভাষা’, গাজীউল হকের ‘স্মৃতির সৌধ ভাঙ্গিয়াছে, জেগেছে পাষানের প্রাণ’। এ ছাড়াও আলাউদ্দিন আল আজাদ, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহসহ বিশজন লেখকের ভাষা আন্দোলনের ওপর লেখা বিলবোর্ডে স্থান পেয়েছে।
একুশে গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ এ বিষয়ে বাসসকে বৃহস্পতিবার বলেন, ভাষা শহীদ ও ভাষা আন্দোলনের বীর সৈনিকদের ওপর আমাদের কবি সাহিত্যিকরা কালজয়ী লেখা লিখেছেন। সেই সব গান-কবিতা,লেখা নতুন প্রজন্মসহ সব বয়সের মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মহান একুশে গ্রন্থমেলা ভাষা আন্দোলনের কালজয়ী কবিতা,গান,সাহিত্যের বাণীতে সগর্বে সেজে উঠেছে এবার। পুরো মেলাঙ্গণে এইসব বাণী সম্বলিত বিলবোর্ড দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে। লেখাগুলো পড়তে হঠাৎ বিলবোডের সামনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে অগণিত মানুষ।
মেলায় বৃহস্পতিবার ৭২টি নতুন বই এসেছে। ড. আনু মাহমুদের ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : শৈল্পিক-প্রামাণিক ঐতিহ্য’ এনেছে ন্যাশনাল পাবলিকেশন্স। য়ারোয়া বুক কর্ণার স্টলে এসেছে ইসহাক খানের উপন্যাস ‘দূরের ভুবন, হালিম আজাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘গঙ্গাধারা’, আসলাম সানীর ‘আমীরুলনামা, আসাদুজ্জামান আসাদের ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাদল চৌধুরীর ‘বাংলাদেশের সাত বীরশ্রেষ্ঠ, মওলায় এসেছে আনোয়ারা সৈয়দ হকের‘ শূন্যতার সাথে নৃত্য,হাসান আজিজুল হকের রচনাসমগ্র।
মেলার মূল মঞ্চে বৃহস্পতিবার বিকেলে ছিলো দুই ভাষাসৈনিক ‘এবিএম মহীবুল্লাহ ও মমতাজুর রহমান তরফদার’ শীর্ষক আলোচনা সভা। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. আকবর আলী খান ও অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক অজয় রায়, ফিরোজ মাহমুদ ও এম আসহাবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন পারভিন হাসান। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিল্পী গান পরিবেশন করেন।
আজ শুক্রবার ছুটির দিনে মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায়। তবে শিশুকিশোরদের চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা শুরু হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ছোট্টমণিদের জন্য থাকবে শিশুপ্রহর।
দু’টার পর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত সর্বসাধারণ প্রবেশ করতে পারবেন। বিকেলে মূলমঞ্চে রয়েছে তিন শিল্পী বারী সিদ্দিকী,রশীদউদ্দিন ও উকিল মুন্সির ওপর আলোচনা সভা। পরে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।-খবর বাসসের
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: