ঢাকা | মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

প্রশ্ন ফাঁস: আগাম ঘোষণা থাকলেও বাতিল হচ্ছে না পরীক্ষা

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৬:০৩

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৬:০৩

আমাদের অধিকারপত্র ডটকম: যখনই কোনো প্রশ্ন ফাঁস হবে, আমরা খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে ওই পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করব।’ এসএসসি পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে ঘোষণা ছিল শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের।

তবে চলমান এসএসসির সাতটি বিষয়ে পরীক্ষার আগেই সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন আসার প্রমাণ মিললেও বাতিল হয়নি একটি পরীক্ষায়।

ওই বৈঠকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসেন এমনও বলেছিলেন, ‘পরীক্ষা শেষের পরেও যদি প্রমাণিত হয় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তবে সে পরীক্ষা বাতিল করা হবে।...প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে আমরা খুবই ডেসপারেট ও অ্যাগ্রেসিভ। কারণ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’

তবে এখন মন্ত্রী বা সচিব সোহরাব পরীক্ষা বাতিল নিয়ে কোনো কথা বলছেন না। আর শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী জানিয়েছেন, পরীক্ষা বাতিল করছেন না তারা।

গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় সব বিষয়ে প্রশ্ন আগেভাগেই সামাজিক মাধ্যমে এলেও সেগুলো এসেছে পরীক্ষা শুরুর ২৪ মিনিট থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টা আগে। আবার চলতি বছর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। ফলে তারও আগে বাসা থেকে বের হতে হয়। এ কারণে পরীক্ষা শুরুর আগে আগে প্রশ্ন ফাঁস হলে সেগুলো খুব বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে না বলে যুক্তি দিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এখন তাঁরা ধরেই নিয়েছেন, পরীক্ষার আগমুহূর্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই প্রবণতা তাঁরা রোধ করতে পারবেন না। আবার এভাবে ফাঁস হওয়ায় নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার মতোও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। কারণ, নতুন করে পরীক্ষা নিলেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। তাই প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও পরীক্ষা বাতিলের সম্ভাবনা নেই।

শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত আপাতত নেই। কারণ আমরা চিন্তা করে দেখেছি এতে খুব একটা লাভ হবে না। তবে সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে প্রশ্নফাঁসকারীরা ধরা পড়ছে। অচিরেই এদের সিন্ডিকেট পুরাটা ধরে পড়ে যাবে। আপনারা দেখতে পাবেন।’

গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই কমিটি করা হয়। সেদিন জানানো হয়, এই কমিটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে কমিটি প্রথম বৈঠক করতে করতেই শেষ হয়েছে সাতটি বিষয়ের পরীক্ষা। আর এই মুহূর্তে পরীক্ষা বাতিলে যে কোনো ইচ্ছা নেই, সেটি কমিটির প্রধান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরের বক্তব্য স্পষ্ট।

সচিব বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষার মাত্র ৫-১০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র পাচ্ছে। ওই প্রশ্ন পেয়ে তো বেশি প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই। আবার দেখা গেছে, বেশ আগে ফাঁস হলেও পাঁচ বা ১০ হাজার ছেলেমেয়ে এসব প্রশ্ন পেয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা দিয়েছে ২০ লাখের বেশি। এমন বিষয়গুলো হিসাব-নিকাশ করব। তারপর সুপারিশ করা হবে। কর্তৃপক্ষ (মন্ত্রণালয়) সিদ্ধান্ত নেবে।’

কমিটির সদস্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা কাজ শুরু করেছি। এর বেশিকিছু বলা যাবে না।... তদন্ত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা পত্রপত্রিকায় যেসব তথ্য এসেছে সেগুলো বিশ্লেষণ করব। প্রত্যেকটি পরীক্ষাকে আমরা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করব। কোন পরীক্ষার প্রশ্ন আসলেই ফাঁস হয়েছে আর কোনো গুলো ফাঁস হয়নি। সেসব বিষয়ে আমাদের আলাদা মূল্যায়ন থাকবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘আমরা পরীক্ষার পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন দেবো। কোন পরীক্ষা বাতিল হবে কিনা সেবিষয়ে আমরা সুপারিশ দেবো। তবে সেটা বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রণালয়।’

প্রশ্নপত্র ফাঁস গত কয়েক বছর ধরেই আলোচিত এক ইস্যু। তবে গত ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ফাঁসকারীদেরকে ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণার পর প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত অভিযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক হয়েছে ৫০ জনেরও মতো। আর ঢাকা থেকে আটক ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রশ্ন ফাঁস রহস্য উন্মোচনের দাবি করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

পুলিশ জানায়, পরীক্ষার দিন ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন কেন্দ্রে পাঠানোর সময় ছবি তুলে প্রশ্ন আপলোড করা হয় সামাজিক মাধ্যমে। আর আরেকটি চক্র সেই প্রশ্ন ছড়িয়ে দেয়ায়।

এবার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে আটক হয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পরীক্ষার্থী, অভিভাবক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র থেকে শুরু করে ব্যাংকারও। সবশেষ শনিবার রাতে রাজধানীতে একটি চক্রকে আটকের ঘটনায় মূল হোতাদের ধরার বিষয়েও আশাবাদী হয়ে উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: