
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার সৌদি আরবে সিরিয়ার অন্তর্র্বতী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের মধ্যে এটাই গত ২৫ বছরে প্রথম বৈঠক। ট্রাম্পের এই বৈঠক এবং সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে এক নাটকীয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
রিয়াদের এক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার এই সাক্ষাৎ হয়। সেখানে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাতের সময় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান উপস্থিত ছিলেন।
রিয়াদ থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্প বলেন, ‘সিরিয়ায় একটি নতুন সরকার এসেছে, যারা দেশকে স্থিতিশীল রাখতে এবং শান্তি বজায় রাখতে সক্ষম হবে বলে আমরা আশা করি। সেটাই আমরা চাই।’
সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
মঙ্গলবার রিয়াদে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, ২০১১ সাল থেকে সিরিয়ার ওপর যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল, তা তুলে নেওয়া হবে। এই ঘোষণার মাধ্যমে দেশটির ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথ খুলে দিল যুক্তরাষ্ট্র।
যদিও প্রশাসনের কিছু মহলে আল-শারা অতীতের আল-কায়েদা সংশ্লিষ্টতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, তবুও ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনা বিবেচনা করছে।’
সৌদি যুবরাজ এমবিএস (মোহাম্মদ বিন সালমান) সম্মেলনে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এটি একটি সাহসী পদক্ষেপ যা সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফেরাতে সহায়ক হবে।’
ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্প সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট শারাকে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এরদোগানের ভার্চুয়াল উপস্থিতি
তুরস্কেও প্রেসিডেস্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগানও এই বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন বলে জানিয়েছে আনাদোলু বার্তা সংস্থা।
অর্থনৈতিক চুক্তি ও অস্ত্র বিক্রি
এই কূটনৈতিক আয়োজনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে শত শত কোটি ডলারের বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অস্ত্রচুক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তাছাড়া সৌদি আরবের ডেটাভল্ট নামের একটি কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত প্রকল্পে ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। গুগলসহ বিভিন্ন মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও সৌদি আরবে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।
কাতার সফর ও বিতর্কিত উপহার
সম্মেলনের পর বুধবার দুপুরে ট্রাম্প কাতারের রাজধানী দোহা সফরে যাবেন। তবে সফর শুরুর আগেই এক বিতর্কের জন্ম হয়েছে—কাতার ট্রাম্পকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি বিলাসবহুল বোয়িং বিমান উপহার দিতে চায়।
এই উপহার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব শেষ হলে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ব্যবহারে যাবে বলে জানা গেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান, নৈতিকতা ও নিরাপত্তার প্রশ্নে বড় বিতর্ক তৈরি করেছে। বিশেষ করে যদি এটি এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার মঙ্গলবার বলেছেন, এই ঘটনার প্রতিবাদে তিনি বিচার বিভাগের রাজনৈতিক নিয়োগের সব অনুমোদন আটকে দেবেন।
হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ ও কাতারের ভূমিকা
কাতার সফরের প্রেক্ষাপটে গাজা যুদ্ধও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জানুয়ারির ১৯ তারিখ (ট্রাম্পের অভিষেকের ঠিক আগের দিন) কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
ইসরাইল মার্চের শুরুতে পুনরায় হামলা শুরু করে এবং গাজার ওপর সহায়তা অবরোধ করে দেয়। মঙ্গলবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে গাজায় প্রবেশ করব। যুদ্ধ থামবে না।’
সফরের শেষ গন্তব্য: আবুধাবি
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের শেষ গন্তব্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: