ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যুতে তুরস্কে বৈঠকে বসার 'সম্ভাবনা আছে’: বললেন ট্রাম্প

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২৫ ২৩:৫২

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২৫ ২৩:৫২

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে তুরস্কে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প—তবে শর্ত রাখছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকেও সেখানে থাকতে হবে।

মস্কো থেকে এএফপি জানায়, যদিও আলোচিত এ বৈঠকে কে মস্কোর প্রতিনিধিত্ব করবেন, তা নিয়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো নীরব রয়েছে ক্রেমলিন। তিন বছরেরও বেশি সময় পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এটাই হবে সরাসরি প্রথম শান্তি আলোচনা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আগেই পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে তুরস্কে এসে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ট্রাম্পকেও সেখানে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।

গত সপ্তাহান্তে পুতিন সরাসরি মস্কো-কিয়েভ আলোচনার প্রস্তাব দেন, যা ছিল ইউক্রেন ও ইউরোপের দেওয়া ৩০ দিনের পূর্ণ ও নিঃশর্ত অস্ত্রবিরতির আহ্বানের পাল্টা জবাব।

এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, 'আমি জানি না উনি (পুতিন) সেখানে থাকবেন কিনা, যদি আমি না থাকি। আমি জানি উনি চাইবেন আমি সেখানে থাকি, এবং এটার সম্ভাবনা আছে। যদি এতে যুদ্ধ শেষ করা যায়, তাহলে আমি অবশ্যই সেটা বিবেচনা করব।'

ট্রাম্প জানান, তিনি ইতিমধ্যে তার উপসাগরীয় সফরের শেষ ধাপে বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার কথা রয়েছে।

তবে তুরস্কে যাওয়ার সম্ভাবনা নাকচ না করে তিনি বলেন, 'এর মানে এই নয় যে, আমি তা করব না যদি এতে অনেক প্রাণ রক্ষা হয়।'

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও শুক্রবার ইস্তাম্বুলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

ট্রাম্প বলেন, 'মার্কো যাচ্ছেন এবং ও খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখছেন।:

রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলে থাকবে।

‘এটা ওর যুদ্ধ’

বুধবার ব্রিফিংয়ে এএফপির এক প্রশ্নে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, 'রুশ প্রতিনিধি দল ১৫ মে ইস্তাম্বুলে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দলের জন্য অপেক্ষা করবে।'

তবে তিনি জানান, এখনো প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি পাঠানোর কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। 'যখন নির্দেশনা পাওয়া যাবে, তখন আমরা জানাব।'

জেলেনস্কি বলেছেন, আলোচনায় পুতিন নিজে না এলে সেটিকে শান্তির প্রতি রাশিয়ার অনিচ্ছা হিসেবে দেখা উচিত হবে, এবং তার জবাবে পশ্চিমা দেশগুলোর উচিত হবে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বাড়ানো।

তিনি বলেন, 'এটা ওর যুদ্ধ। তাই ওর আলোচনায় থাকা উচিত।'

ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের সময়ই ঘোষণা দেন, তিনি যুদ্ধ অবসান ঘটাবেন। ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখে হোয়াইট হাউসে এক টেলিভিশন সম্প্রচারিত বৈঠকে তিনি জেলেনস্কিকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন।

এরপর থেকে রাশিয়ার প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের হতাশা প্রকাশ পেয়েছে, বিশেষ করে ইউক্রেন-সমর্থিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব রাশিয়ার প্রত্যাখ্যানের পর।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও একাধিকবার বলেছেন, অগ্রগতি না হলে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া-ইউক্রেন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা থেকে সরে আসবে, কারণ "আমাদের আরও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার রয়েছে।"

যদিও আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ অবসানের পথ নিয়ে বিরাট মতভেদ রয়ে গেছে এবং আপসের ইঙ্গিত নেই বললেই চলে।

‘একতরফা শান্তি নয়’

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, যিনি আগে ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমা সমর্থনের মাত্রা সমালোচনা করেছিলেন, তিনিও জানিয়েছেন, পুতিনকে আলোচনায় আসার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করবেন।

তিনি বলেন, 'আমি চেষ্টা করব ওর সঙ্গে কথা বলতে। এটা বলতে আমার তো কিছু যায় আসে না, 'এই যে, কমরেড পুতিন, ইস্তাম্বুলে গিয়ে আলোচনা করো, ব্যাস!'

ইউরোপীয় নেতারাও পুতিনকে সরাসরি আলোচনায় বসার জন্য চাপ বাড়াচ্ছেন।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস বুধবার পার্লামেন্টে বলেন, ইউক্রেনের ওপর কোনো 'একতরফা শান্তি' চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।

তিনি হুঁশিয়ার করেন, 'ইউক্রেনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যদি সামরিকভাবে বাস্তবতা তৈরি করা হয়, তাহলে সেটি হবে পশ্চিমের ঐক্যে ফাটল ধরানোর কাজ।'

এদিকে আলোচনার প্রস্তুতির মধ্যেও লড়াই অব্যাহত রয়েছে। বুধবার বিকেলে রাশিয়ার একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি শহরে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: