ঢাকা | শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এভারেস্ট জয়ের ৫০ বছর: হাজারতম নারী আরোহণের দ্বারপ্রান্তে

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৫ ১৯:৫৩

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৫ ১৯:৫৩

১৯৭৫ সালের ১৬ মে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন জাপানের জুনকো তাবেই, ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী যিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন। অর্ধশতক পেরিয়ে, এবার নারী আরোহণের সংখ্যা এক হাজার ছুঁতে চলেছে।

৮ হাজার ৮৪৯ মিটার (২৯ হাজার ৩২ ফুট) উচ্চতার এভারেস্ট জয় বরাবরই পুরুষপ্রধান ছিল। হিমালয়ান ডেটাবেইস বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত নারী আরোহণের সংখ্যা ৯৬২, যেখানে পুরুষের সংখ্যা ১১ হাজার ৯৫৫।

‘আমাকে যেন কেউ সীমায়িত না করে’

১৯৭৫ সালে এভারেস্ট জয়ের আগে ৩৮ জন পুরুষ সেখানে পৌঁছেছিলেন। শুধু নারীদের একটি দলের নেতৃত্ব দেন তাবেই, কিন্তু স্পন্সর জোগাড়ে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়। অনেকেই বলেছিলেন, তাদের উচিত ঘরে থেকে সন্তানদের দেখাশোনা করা।

তাবেই ফিরেই নিজের নোটবুকে লিখেছিলেন, ‘সব পুরুষই আমাদের পছন্দের সীমা নির্ধারণ করে দিতে চায়; আমি সীমায়িত হতে চাই না।’

তাবেইয়ের জয়লাভের ১১ দিন পর চীনের তিব্বত দিক দিয়ে এভারেস্টে উঠেছিলেন ফ্যানতু নামের এক তিব্বতি নারী। তিনি ভেবেছিলেন, তিনিই প্রথম নারী; নেমে এসে জানতে পারেন, তাবেই আগে পৌঁছে গেছেন।

শেরপারা প্রায় সবাই পুরুষ

গত ৫০ বছরে ৮৫টি দেশের ৮৭০ জন নারী এভারেস্ট জয় করেছেন। তবে তাদের মধ্যে অনেকেই একাধিকবার উঠেছেন। পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উঠেছেন নেপালের নাগরিকেরা, এরপর রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীন, নারী আরোহীদের ৩৯ শতাংশ এসেছে এইদেশগুলো থেকে।

নেপালি শেরপা গাইডদের মধ্যে নারীর সংখ্যা খুবই কম। নেপালি নারী আরোহণের হার মাত্র ৯ শতাংশ, যদিও পুরুষদের মধ্যে তা অর্ধেক। ৬৬ জন নেপালি নারী এ পর্যন্ত ৯০ বার চূড়ায় পৌঁছেছেন।

২০১২ সালে এভারেস্টজয়ী দাওয়া ইয়াংজুম শেরপা ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একমাত্র নারী নেপালি গাইড হন। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘এই পেশা চ্যালেঞ্জিং, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। অনেকে বলেছিল, এটা মেয়েদের কাজ না, কাজও পাবো না।’

এর আগে ১৯৯৩ সালে পাশাং লামু এভারেস্ট জয় করেন, কিন্তু ফেরার পথে এক অসুস্থ সহযাত্রীর পাশে থেকে নিজেও প্রাণ হারান। বর্তমানে বেস ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরুর পথে একটি তোরণ রয়েছে, যা তার প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন।

তার উত্তরসূরি লাখপা শেরপা ২০০০ সালে শৃঙ্গ জয় করেন এবং এ পর্যন্ত ১০ বার আরোহণ করে নারীদের মধ্যে রেকর্ড গড়েছেন।

অক্সিজেন ছাড়া আরোহণ

জুনকো তাবেইয়ের ১৩ বছর পর, ১৯৮৮ সালে নিউজিল্যান্ডের লিডিয়া ব্র্যাডি অক্সিজেন ছাড়াই চূড়ায় উঠেন। তবে অন্যদের অনুমতি ছাড়াই রুট পরিবর্তনের কারণে তখন নেপালি কর্তৃপক্ষ তার আরোহণ স্বীকৃতি দেয়নি। অনেক পরে তার কৃতিত্ব স্বীকৃত হয়।

পুরুষ-নারী মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মাত্র ২২৯ বার অক্সিজেন ছাড়াই আরোহণ সফল হয়েছে, যা মোটের এক শতাংশেরও কম। নারীদের মধ্যে এ কৃতিত্বে ব্র্যাডিসহ মাত্র ১০ জন আছেন।

নারীদের মৃত্যুহার কম, সতর্কতা বেশি

হিমালয়ান ডেটাবেইসের পরিচালক ও ২০০৯ সালের আরোহণকারী বিলি বিয়ারলিং জানান, ‘নারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি সচেতন, সতর্ক এবং ঝুঁকি না নিয়ে নামার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা পুরুষেরা নাও করে।’

নারীদের সফলতার হার পুরুষদের চেয়ে কিছুটা কম, নারীদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনে ৬৬ জন, আর পুরুষদের মধ্যে ৭৫ জন সফল হন। তবে মৃত্যুহার নারীদের তুলনায় কম, প্রতি ১৫৩ বার চেষ্টায় একজন নারী, আর প্রতি ৭০ বার চেষ্টায় একজন পুরুষ মারা যান।

২০০০-এর দশকে প্রতি ১৬ জন পুরুষের বিপরীতে একজন নারী চূড়ায় পৌঁছাতেন; বর্তমানে সেই অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১০:১।

বিয়ারলিং বলেন, ‘এখন অনেক নারীই অবিবাহিত, সন্তান নেই এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল, ফলে তারা ৮ হাজার মিটার উচ্চতার শৃঙ্গ অভিযানে যেতে পারছে।’

এভারেস্টে আরোহণের ব্যয় ৪৫ হাজার থেকে ২ লাখ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: