ঢাকা | সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নেতানিয়াহুর প্রতি জিম্মিদের স্বজনদের প্রশ্ন : ‘আপনি ঘুমান কীভাবে’

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৫ ০০:০৯

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৫ ০০:০৯

গাজায় ফিলিস্তিনের হামাস যোদ্ধাদের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি উপেক্ষিত হওয়ায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি ক্ষোভ আরো প্রবল হয়ে উঠেছে। জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, যুদ্ধকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে নেতানিয়াহুর সরকার। ফলে তাদের প্রিয়জনদের মুক্তি চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

তেল আবিব থেকে এএফপি এওই খবর জানায়।

গতকাল শনিবার তেল আবিব, কিরইয়াত গাত, জেরুজালেম ও শার হানেগেভ জংশনে বিক্ষোভে নেমে আসে হাজারো মানুষ। ‘হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’-এর ব্যানারে আয়োজিত এসব বিক্ষোভে সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করা হয়। ফোরামের সদস্যরা দাবি করেছেন, সরকার আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় জিম্মিদের জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে।

ফোরামের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, যেন তারা অবিলম্বে আলোচনা শুরু করে এবং একটি চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তা চালিয়ে যায়। আমরা আমাদের প্রিয়জনদের জীবিত ফিরে পেতে চাই।’

বিক্ষোভে অংশ নিয়ে গাজায় জিম্মি হওয়া মতান জাংগাউকারের মা আইনাভ জাংগাউকার বলেছেন, ‘বলুন তো, প্রধানমন্ত্রী, আপনি কীভাবে রাতে ঘুমাতে পারেন? ৫৮ জন জিম্মিকে অবহেলায় ফেলে রেখেছেন,এটা জেনেও কীভাবে আয়নায় নিজেকে দেখেন?’ তিনি নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন তোলেন, ‘আপনার বিবেক কী একবারও সাড়া দেয় না?

সমাবেশে অংশ নেওয়া অনেকেই হাতে ব্যানার নিয়ে এসেছিলেন, যেখানে লেখা ছিল, ‘এই যুদ্ধ জিম্মিদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’
এই ক্ষোভের পেছনে আরেকটি কারণ হলো, নেতানিয়াহু সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত- এর প্রধান হিসেবে মেজর জেনারেল ডেভিড জিনিকে মনোনীত করেছেন। চ্যানেল টুয়েলভের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেভিড জিনি জিম্মিমুক্তির চুক্তির বিরোধিতা করে বলেছেন, ‘এই যুদ্ধ চিরস্থায়ী এবং জিম্মি বিনিময় সংক্রান্ত চুক্তির আমি বিরোধী।’

ফোরাম এই বক্তব্যকে ‘গভীর উদ্বেগজনক’ ও ‘নিন্দনীয় বলে আখ্যায়িত করেছে। তাদের ভাষায়, ‘একজন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি জিম্মিদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন, যদি যুদ্ধকেই প্রাধান্য দেন, তবে তা গোটা জাতির সঙ্গে অন্যায় ও অপরাধের শামিল।’

জর্ডানের রাজধানী আম্মান থেকে এএফপি’র প্রতিবেদক হামদা সালহুত জানান, ‘নেতানিয়াহুর নিযুক্ত নতুন গোয়েন্দা প্রধান গাজায় সামরিক চাপ আরো বাড়াতে চান এবং এই মনোভাবের কারণেই তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’

সালহুত আরো বলেছেন, ইসরাইলের ওপর আন্তর্জাতিক মহল থেকে চাপ আসছে যেন গাজা যুদ্ধ বন্ধ করে ও অবরোধ তুলে নেয়। তবে এরই মধ্যে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ডাকা ব্রিগেডগুলো গাজার ভেতরে অভিযান চালাচ্ছে।

জিম্মিদের পরিবারের আশঙ্কা, এই হামলা অব্যাহত থাকলে যারা এখনো জীবিত, তারাও মারা যাবেন। অথচ নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার, যা ইসরাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থী হিসেবে বিবেচিত, যুদ্ধবিরতির চেয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া নিয়েই বেশি আগ্রহী।

এদিকে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে নতুন করে সমালোচনার ঝড় ওঠে, যখন তিনি বিদায়ী শিন বেত প্রধান রোনেন বারকে সরিয়ে দিয়ে নতুন প্রধান হিসেবে জিনিকে নিযুক্ত করেন, যদিও ইসরাইলের সর্বোচ্চ আদালত রোনেন বারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ’ বলে রায় দিয়েছিল। আদালত জানিয়েছিল, দুর্নীতির মামলায় জড়িত থাকার কারণে নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপে স্বার্থের সংঘাত তৈরি হয়েছে।

তবুও আদালতের রায় উপেক্ষা করে নেতানিয়াহু জিনিকেই শিন বেতের নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এর জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল সতর্ক করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আইনগত পরামর্শ উপেক্ষা করে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াকেই কলুষিত করেছেন।

এই বিতর্কের মাঝেই জিম্মিদের পরিবারের আহ্বান, যুদ্ধ নয়—মানবিকতার পথে ফিরে আসুক নেতানিয়াহু সরকার।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: