ঢাকা | শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ কোটি ২০ লাখেরও বেশি: জাতিসংঘ

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২৫ ০০:০০

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২৫ ০০:০০

বিশ্বব্যাপী বাড়িঘর থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড উচ্চতা থেকে কিছুটা কমেছে, তবে ‘অসহনীয়ভাবে বেশি’ রয়ে গেছে। জাতিসংঘ বৃহস্পতিবার একথা জানিয়েছে।

জেনেভা থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী রেকর্ড ১২৩.২ মিলিয়ন মানুষ তাদের বাড়িঘর থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

কিন্তু বছরের পর বছর ধরে চলা অস্থিরতার পর সিরিয়ানরা বাড়ি ফিরতে শুরু করায়, এই বছরের এপ্রিলের শেষ নাগাদ এই সংখ্যাটি ১২২.১ মিলিয়নে নেমে আসে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রায় ২০ লক্ষ সিরিয়ান দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছে।

কিন্তু ইউএনএইচসিআর সতর্ক করে দিয়েছে, বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের সংঘাত কীভাবে দেখা দিয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে সংখ্যাটি আবার বাড়বে কি-না।

সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, সহিংসতা এবং নিপীড়নের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ‘অসহনীয়ভাবে বেশি’, বিশেষ করে এমন একটি সময়ে যখন মানবিক তহবিল বাষ্পীভূত হচ্ছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তীব্র অস্থিরতার এক সময়ে বাস করছি, যেখানে আধুনিক যুদ্ধ তীব্র মানবিক দুর্ভোগের দ্বারা চিহ্নিত একটি ভঙ্গুর, বেদনাদায়ক দৃশ্যপট তৈরি করছে।’

তিনি বলেছেন, ‘শরণার্থী এবং তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়া অন্যদের জন্য শান্তির সন্ধান এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে।’

- ‘সুদান সিরিয়াকে ছাড়িয়ে গেল’ -

ইউএনএইচসিআর তাদের বার্ষিক গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্টে বলেছে, বাস্তুচ্যুতির প্রধান কারণ সুদান, মিয়ানমার এবং ইউক্রেনের মতো বিস্তৃত সংঘাত।

২০১১ সালে সিরিয়ার নৃশংস গৃহযুদ্ধ শুরু হয় কিন্তু অবশেষে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বিদ্রোহীদের ব্যাপক অভিযানে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বছরের প্রথম মাসগুলোতে সিরিয়ানদের বাড়ি ফিরে আসার সংখ্যা বেড়েছে।
মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত, আসাদের পতনের পর থেকে ৫ লক্ষেরও বেশি সিরিয়ান দেশে ফিরে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেখানে নভেম্বরের শেষের পর থেকে আনুমানিক ১২ লক্ষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ তাদের আদি এলাকায় ফিরে এসেছে।

ইউএনএইচসিআর অনুমান করেছে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বিদেশ থেকে আসা ১৫ লক্ষ সিরিয়ান এবং ২০ লক্ষ আইডিপি ফিরে আসতে পারে।

সুদান এখন বিশ্বের বৃহত্তম জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত পরিস্থিতির দেশ যেখানে ১৪.৩ মিলিয়ন শরণার্থী এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি রয়েছেন। সিরিয়া (১৩.৫ মিলিয়ন) কে ছাড়িয়ে গেছে, এরপর রয়েছে আফগানিস্তান (১০.৩ মিলিয়ন) এবং ইউক্রেন (৮.৮ মিলিয়ন)।

ইউএনএইচসিআর-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০২৫ সালের অবশিষ্ট সময় গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতির গতিশীলতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।’

‘এর মধ্যে রয়েছে শান্তি, অথবা অন্তত যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব কি-না, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, সুদান এবং ইউক্রেনে।’

আফগানিস্তান এবং সিরিয়ায় প্রত্যাবাসনের পরিস্থিতির উন্নতি হয় কি-না তার ওপরও এটি নির্ভর করে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, স্থানচ্যুতি মোকাবেলায় এবং নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য পরিস্থিতি তৈরিতে ‘বর্তমান তহবিল হ্রাসের প্রভাব কতটা ভয়াবহ হবে’।

- ‘৬৭ জনের মধ্যে একজন’

গত দশকে নিপীড়ন, সংঘাত, সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং জনশৃঙ্খলার গুরুতর বিঘ্ন ঘটানো ঘটনা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

গত বছরের শেষে বিশ্বব্যাপী ১২৩.২ মিলিয়নের সংখ্যা ২০২৩ সালের শেষের তুলনায় সাত মিলিয়ন বেশি।
ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ‘২০২৪ সালের শেষে বিশ্বব্যাপী প্রতি ৬৭ জনের মধ্যে একজনকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল’।

২০২৪ সালে মোট ৯৮ লক্ষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষ বাড়ি ফিরে এসেছে, যার মধ্যে ১৬ লক্ষ শরণার্থী রয়েছে - যা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সর্বোচ্চ - এবং ৮২ লক্ষ আইডিপি - যা এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

গ্র্যান্ডি বলেছেন ‘গত ছয় মাসে আমরা কিছু আশার আলো দেখেছি’ ।

কিন্তু ডিআর কঙ্গো, মিয়ানমার এবং দক্ষিণ সুদানের মতো দেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য নতুন জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি এবং প্রত্যাবর্তন দেখা গেছে।

দুই-তৃতীয়াংশ শরণার্থী প্রতিবেশি দেশগুলোতে থাকেন।

ইরান (৩৫ লক্ষ), তুরস্ক (২৯ লক্ষ), কলম্বিয়া (২৮লক্ষ), জার্মানি (২৭লক্ষ) এবং উগান্ডা (১৮লক্ষ) সবচেয়ে বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: