ঢাকা | শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা অনুমোদন বিশ্বব্যাংকের

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২৫ ১৮:৪৬

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২৫ ১৮:৪৬

বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াতে এবং আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্থিতিশীলতা জোরদার করতে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক।

‘স্ট্রেংথেনিং গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল রেজিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ বা সুশাসন শক্তিশালীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিস্থাপকতা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় এ অর্থ দেওয়া হবে। এর লক্ষ্য সরকারি ও আর্থিক খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার চালু করে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের জন্য উন্নত সেবা নিশ্চিত করা হবে।

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন বাংলাদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি। সরকার তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো উন্মুক্ত ও জবাবদিহিমূলক করতে নানা সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে সেগুলো জনগণের জন্য আগের চেয়েও ভালোভাবে কাজ করতে পারে।

তিনি আরো বলেন, এই অর্থায়ন সরকারের নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করার পাশাপাশি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে সহায়তা করবে, যার সুফল সবাই পাবে। গত সপ্তাহে অনুমোদিত আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করছি।
বিশ্বব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের হার এখনো মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম, যার ফলে সরকার অনেক সময় প্রয়োজনীয় সেবা দিতে ব্যর্থ হয়।

এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেশীয় রাজস্ব আহরণ পদ্ধতিকে আরো কার্যকর ও স্বচ্ছ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর অংশ হিসেবে কর আদায় ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া আরো আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের হবে।

এছাড়াও কর ছাড়ের বিষয়গুলোকে আরো কৌশলগত ও সুশৃঙ্খল করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখন থেকে সব ধরনের কর ছাড় অনুমোদনের জন্য সংসদের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হবে।

এই অর্থায়নের মাধ্যমে কর্পোরেট শাসনব্যবস্থা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকেও আরো শক্তিশালী করা হবে। আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা আনতে আন্তর্জাতিক মান অনুসারে হিসাব প্রতিবেদন চালুরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হবে, যাতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যায়।
সংস্কারের তৃতীয় ধাপে সরকারি খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। ২০২৭ সালের মধ্যে সব সরকারি প্রকল্পের মূল্যায়ন প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হবে।

এছাড়াও সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) বাধ্যতামূলক করা হবে, মালিকানার স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং দর সীমা তুলে দেওয়া হবে, যাতে প্রতিযোগিতা বাড়ে ও দুর্নীতির ঝুঁকি কমে।

সরকারি খাতে আর্থিক জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক দপ্তরের নিরীক্ষা সক্ষমতা আরো বাড়ানো হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে, যাতে সঠিক ও স্বচ্ছ তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে সরকারি সেবা আরো কার্যকর হয়।

সবশেষে, দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ সহায়তা কর্মসূচিগুলো আগের চেয়ে কার্যকর করতে একটি ডাইনামিক সোশ্যাল রেজিস্ট্রি বা গতিশীল সামাজিক নিবন্ধন চালু করা হবে। যার মাধ্যমে সময়োপযোগী উপকারভোগী বাছাই নিশ্চিত করা হবে।

বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ও প্রকল্পের টিম লিডার ধ্রুব শর্মা বলেন, এই অর্থায়ন বাংলাদেশের জনগণের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি রাজস্ব আহরণ, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও সুশাসন উন্নয়নে সরকারকে সহায়তা করবে।

তিনি আরো বলেন, তথ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ও উপকারভোগী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া আরো নিখুঁত হলে সরকারি আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম প্রকৃত দরিদ্রদের কাছে পৌঁছাতে সহজ হবে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংকট বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়।

এই অর্থায়নের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের মোট নতুন প্রতিশ্রুত অর্থায়নের পরিমাণ দাঁড়ালো ৩০৭ কোটি মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্বব্যাংক অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পাশে রয়েছে এবং এ পর্যন্ত ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান ও স্বল্পসুদে ঋণ দিয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: