
গাজা যুদ্ধ বন্ধে ইসরাইলকে চাপ দিতে সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে নৈশভোজ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর নেতানিয়াহুর এটি তৃতীয় দফা ওয়াশিংটন সফর। ইসরাইল-ইরান সাম্প্রতিক সমঝোতার পর ট্রাম্প এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন।নৈশভোজ শুরুর আগে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি না, কোনো জটিলতা আছে। সবকিছু ভালোভাবেই এগোচ্ছে।’
নেতানিয়াহুর বিপরীতে লম্বা টেবিলে বসে থাকা ট্রাম্প জানান, গাজায় ২২ মাস ধরে চলা সংঘাত থামাতে হামাসও প্রস্তুত।
তিনি আরো বলেন, ‘তারা (হামাস) আলোচনায় বসতে চায়, যুদ্ধবিরতি চায়।’
ওয়াশিংটনে নেতানিয়াহুর সফরের সময় কাতারে দ্বিতীয় দিনের মতো পরোক্ষ আলোচনা চালিয়েছে ইসরাইল ও হামাস।
এদিকে, নেতানিয়াহু জানান, তিনি ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন। সেই মনোনয়ন চিঠিও তিনি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের হাতে তুলে দেন। তিনি বলেন, ‘তিনি এখনই এক দেশ থেকে আরেক দেশ এবং এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করছেন।’
তবে পূর্ণাঙ্গ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে বাতিল করে দেন নেতানিয়াহু। এমনকি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তি বিষয়ে সরাসরি কথা বলতেও টালবাহানা করেন তিনি।
এসময় তিনি জানান, গাজা উপত্যকার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ‘সবসময়’ ইসরাইলের হাতেই থাকবে।
নেতানিয়াহু আরো বলেন, ‘এখন অনেকেই বলবে এটা পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র নয়, এটা রাষ্ট্র নয়। আমরা এসব নিয়ে পরোয়া করি না।’
নৈশভোজের সময় হোয়াইট হাউসের কাছে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ স্লোগান দেন।
একদিকে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে শক্ত সমর্থন দিয়ে গেছেন, এমনকি ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় বিমান হামলার অনুমোদনও দিয়েছেন। অন্যদিকে তিনি গাজায় চলমান পরিস্থিতিকে ‘নরক’ বলে অভিহিত করেছেন। রোববার তিনি আশা প্রকাশ করেন, সামনের সপ্তাহেই একটি চুক্তি হওয়ার ‘ভালো সুযোগ’ রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে প্রেসিডেন্টের প্রধান অগ্রাধিকার এখন গাজা যুদ্ধ বন্ধ করা এবং সব জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করা।’
লেভিট আরো জানান, ইসরাইল যুদ্ধবিরতি ও গাজায় বন্দী জিম্মিদের মুক্তির পক্ষে সায় দিয়েছে। ট্রাম্প চান মার্কিন মধ্যস্থতাকারী প্রস্তাবে হামাস ‘এখনই’ রাজি হোক। এই প্রস্তাব মানলে ফিলিস্তিনি বন্দিরাও মুক্তি পাবে।
গাজাযুদ্ধ নিয়ে রোববার দোহায় শুরু হওয়া সর্বশেষ দফার আলোচনায় হামাস ও ইসরাইলি প্রতিনিধিরা একই ভবনের ভিন্ন কক্ষে বসেন।
আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এএফপি’কে জানান, সোমবারের আলোচনা ‘কোনো অগ্রগতি ছাড়াই’ শেষ হয়েছে। তবে হামাস ও ইসরাইলি প্রতিনিধিদল পরবর্তীতে আবার আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিশ্চিত করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের চলতি সপ্তাহেই দোহায় আলোচনায় যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি থাকবে। এই সময় হামাস ১০ জন জীবিত জিম্মি ও কয়েকটি মৃতদেহ ফেরত দেবে। এর বদলে ইসরাইল মুক্তি দেবে ফিলিস্তিনি বন্দিদের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আলোচনার সঙ্গে যুক্ত দুই ফিলিস্তিনি সূত্র।
তারা আরও জানান, হামাস চাইছে—ইসরাইল গাজা থেকে সরে যাওয়ার একটি রূপরেখা দিক, আলোচনা চলাকালীন যুদ্ধ পুনরায় শুরু না করার নিশ্চয়তা দিক এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তা বিতরণ ব্যবস্থা ফের চালু হোক।
গাজা বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, সোমবার ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন একটি ক্লিনিকে, যেখানে যুদ্ধের কারণে আশ্রয় নিয়েছিলেন অনেক বাস্তুচ্যুত মানুষ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এই হামলার পর শুরু হওয়া ইসরাইলের প্রতিশোধ অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণ গেছে অন্তত ৫৭ হাজার ৫২৩ জনের। তাদেরও অধিকাংশ বেসামরিক নাগরিক বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ এই হিসাবকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে।
তাদের তথ্য অনুযায়ী, এখনো গাজায় জিম্মি অবস্থায় আছে ৪৯ জন। এর মধ্যে ২৭ জনকে মৃত ঘোষণা করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: