ঢাকা | শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

টটেনহাম রূপকথার নায়ক ব্রাজিলিয়ান লুকাস মৌরা

Akbar | প্রকাশিত: ৯ মে ২০১৯ ১৩:১৫

Akbar
প্রকাশিত: ৯ মে ২০১৯ ১৩:১৫

ক্রীড়া, ০৯ মে (অধিকারপত্র): কখনো কখনো একটা ম্যাচই কাউকে বিশ্ব তারকা বানিয়ে দেয়। তুলে দেয় আলোচনার তুঙ্গে। বুধবার রাতে আয়াক্স ও টটেনহামের মধ্যকার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমি ফাইনালের দ্বিতীয় লেগ ম্যাচটি যেমন লুকাস মৌরাকে বানিয়ে দিল রূপকথার নায়ক।

সত্যিকার অর্থেই রূপকথার নায়ক এই ব্রাজিলিয়ান তরুণ। তার অবিশ্বাস্য এক হ্যাটট্রিকেই কাল অবিশ্বাস্য এক জয় পেয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার ইতিহাস গড়েছে টটেনহাম।

নিজেদের মাঠের প্রথম লেগে ১-০ হেরেছিল টটেনহাম। কাল আয়াক্সের মাঠে গিয়েও প্রথমার্ধেই পিছিয়ে পড়ে ২-০ গোলে। মানে বিরতির সময়ও টটেনহাম ৩-০ গোলে পিছিয়ে। এই দ্বৈরথেও টটেনহাম জিতবে, এমনটা তখন বিশ্বাস করাটাই ছিল কঠিন। কারণ, ম্যাচের তখন বাকি মাত্র ৪৫ মিনিট।

লুকাস মৌরার ম্যাজিকে সেই টটেনহামই ৩ গোলের ঋণ শুধিয়ে ফাইনালে। এক অর্থে হ্যাটট্রিক করার অবিশ্বাস্য বীরত্ব দেখিয়েছেন লুকাস মৌরা। ২ গোলে পিছিয়ে পড়েও টটেনহাম ম্যাচটা জিতেছে ৩-২ গোলে। দুই লেগ মিলিয়ে স্কোর ৩-৩। টটেনহাম প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছে অ্যাওয়ে গোলে এগিয়ে থাকায়।

২৬ বছর বয়সী লুকাস মৌরার প্রতিভা-সামর্থ নিয়ে প্রশ্ন নেই কারো। প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেই ব্রাজিল জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন। দেশের জার্সিতে এরই মধ্যে খেলেছেন ৩৫টি ম্যাচ। প্রতিভার ছাপ রেখেই খেলছেন লিভারপুলের মতো দলে। তবে মেসি, রোনালদো, নেইমারদের এই যুগে উইঙ্গার লুকাস মৌরাকে নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা, মাতামাতিটা কমই।

উইঙ্গার হলেও লুকাস মৌরা মূলত মিডফিল্ডার হিসেবেই বেশি খেলেন। নিজে গোল করা নয়, সতীর্থদের দিয়ে গোল করানোই তার কাজ। ফলে মেসি-রোনালদোদের মতো কাড়ি কাড়ি গোল তিনি করেন না। হয়তো সেই সামর্থও নেই। তবে রূপকথার নায়ক হয়ে এককভাবে দলকে অবিশ্বাস্য ম্যাচ জেতানোর সামর্থ যে তার আছে, গতকালের ম্যাচটি তারই সাক্ষী হয়ে থাকল।

ব্রাজিলিয়ান তরুণ একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন আয়াক্সকে। গড়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজের প্রথম হ্যাটট্রিক কীর্তি। এবং অবিশ্বাস্য এই কাজটা তিনি আবার করেছেন দলের অতি প্রয়োজনীয় সময়ে। স্বপ্নের ফাইনালে যেতে হলে ৪৫ মিনিটের মধ্যেই টটেনহামকে অন্তত ৩ গোল করতে হবে। দলের প্রধান গোল-মেশিন হ্যারি কেনও নেই। চোটের কারণে বাইরে।

লুকাস মৌরা দলকে উদ্ধারের সব দায়িত্ব তুলে নিলেন একার কাঁধে। শুরু করলেন ম্যাজিক। ব্রাজিলিয়ান তরুণের রূপকথার নায়ক সাজার ম্যাজিকের শুরুটা ম্যাচের ৫৫ মিনিটে। ডেলে আলির পাস থেকে দর্শনীয় এক গোল করে টটেনহামের আশার বাতি জ্বালান। এর ৪ মিনিট পর আবারও লুকাস মৌরার ম্যাজিক। লরেন্তের পাস থেকে ব্রাজিল তারকা করে ফেলেন ২-২।

প্রথমার্ধে প্রায় নিভে যাওয়া টটেনহামের আশার সলতে তখন জ্বলজ্বল করছে। আর মাত্র একটা গোল হলেই স্বপ্নের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল, টটেনহাম শিবির তখন রোমাঞ্চ-উত্তেজনায় থরথর। রোমাঞ্চে কাঁপছিল স্বাগতিক আয়াক্সও।

মৌসুম জুড়েই রূপকথার জন্ম দিয়েছে তারা। শেষ ষোলতে টানা তিনবারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে দেখায় প্রথম চমক। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে বিশ্ব ক্লাব ফুটবলের আরেক দৈত্য জুভেন্টাসকে বধ করে। টটেনহামের বিপক্ষে সেমি ফাইনালেও সেই চমক বজায় রেখেই এক পর্যায় এগিয়ে যায় ৩-০ গোলে। লুকাস মৌরার ধাক্কায় ম্যাচের স্কোর যখন ২-২, তখনও ফাইনালের স্বপ্নেই বিভোর আয়াক্স। ম্যাচটি এই অবস্থায় শেষ হলে ফাইনালে উঠেও যেত ডাচ ক্লাবটি।

টটেনহামের অস্থিরতা বাড়িয়ে কাল ম্যাচটি হাঁটছিল ২-২ ড্রয়ের পথেই। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর ইনজুরি সময়ের সাড়ে ৫ মিনিট পর্যন্তও স্কোর ২-২। এই অবস্থায় আর ৩০টা সেকেণ্ড কাটিয়ে দিতে পারলেই স্বপ্ন পূরণ হতো আয়াক্সের। ঠিক তখনই আয়াক্সের হৃদয়ে শেষ এবং চূড়ান্ত পেরেকটি ঠুকে দেন লুকাস মৌরা।

বক্সের মধ্যে আয়াক্সের ডিফেন্ডারদের গোলাকার বেষ্টনির মধ্য দাঁড়িয়ে বাঁ-পায়ের জোরালো শটে বল জড়িয়ে দেন আয়াক্সের জালে। সঙ্গে সঙ্গেই স্বপ্ন পূরণের আনন্দে নেচে ওঠে টটেনহাম। স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় আয়াক্সের খেলোয়াড়েরা লুটিয়ে পড়েন মাটিতে! গোলটির পরই সবাই বুঝে যায় ম্যাচের নিয়তি। সময় আর বেশি বাকি ছিল না।

দলের অবিশ্বাস্য এই জয়ে টটেনহামের আর্জেন্টাইন কোচ মরিসিও পচে্ত্তিনো মাঠেই আবেগে কেঁদে ফেলেন। কেঁদে ফেলেন টটেনহামের রূপকথার নায়ক লুকাস মৌরাও। ম্যাচ শেষে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এটাই আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত। সত্যিই আমার এবং আমাদের টটেনহামের জন্য আজকের রাতটা ছিল অবিশ্বাস্য। এই রাতটির কথা আমার মনে থাকবে চিরকাল।’

শুধু লুকাস মৌরার একার নয়। টটেনহাম, আয়াক্সের খেলোয়াড়-সমর্থকসহ অনেক ফুটবল বোদ্ধাদের স্মৃতিপটেও এই ম্যাচটা থাকবে চির অম্লাণ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: