
ফেনীর সোনাগাজীতে পৈশাচিক বর্বরতায় ঈদের রাতে ছাত্রলীগ নেতা মো. শামীম (১৮) খুনের ঘটনায় ১২জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত নামা ১০-১৫জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত ছাত্রলীগ নেতা মো. শামীমের মা আনোয়ারা বেগম সাফিয়া বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে সোনাগাজী মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন। সোনাগাজী মডেল থানার মামলা নং-৮, তাং- ১৩-০৮-২০১৯খ্রি.
মামলার আসামিরা হচ্ছে, সাবেক বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী আনোয়ার হোসেন প্রকাশ সাঈদ আনোয়ার, শেখ আলম, পারভেজ, নূর আলম, রিয়াদ, শেখ বাহার, নূরনবী, মো. হানিফ, কাজী, জাহেদ, বেলাল হোসেন ও নূরকরিম মিস্ত্রি ও অজ্ঞাত নামা ১০-১৫জন। পুলিশ শেখ আলম ও রিয়াদ নামে দুই এজাহারভুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও দলীয় সূত্র জানায়,
পূর্বশত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোববার রাত ৮টার দিকে উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের চরসোনাপুর তিনবাড়িয়া দাসপাড়া গ্রামের সাইফুলের দোকানের সামনে ছাত্রলীগ নেতা মো. শামীম কে কুপিয়ে ও পিটিয়ে পৈশাচিক বর্বরতায় হত্যা করে প্রতিপক্ষরা।
নিহত শামীম সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের মুহুরী প্রজেক্ট সংলগ্ন চরশাহাপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মুনাফ মিয়ার ছেলে। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন খোন্দকারের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক বহিস্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক সাঈদ আনোয়ারের বিরোধ চলে আসছে। ইফতেখার গ্রুপের স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন মো. শামীম।
রাত ৮টার দিকে শামীম ও তার বন্ধু সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে তার নানার বাড়ি চরলামছিডুব্বা গ্রাম থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। চরসোনাপুর তিনবাড়িয়া দাসপাড়া সাইফুলের দোকানের সমানে পৌঁছলে সাবেক বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী আনোয়ার হোসেন প্রকাশ সাঈদ আনোয়ার, শেখ আলম, পারভেজ, নূর আলম, রিয়াদ, শেখ বাহার, নূরনবী, মো. হানিফ, কাজী, জাহেদ, বেলাল হোসেন ও নূরকরিম মিস্ত্রির নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন সশস্ত্র যুবক সিএনজির গতি রোধ করে। তারা শামীমকে নামিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে রাস্তার পাশে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রাখে। এসময় তার গোপনাঙ্গও থেতলে দেয় সন্ত্রাসীরা। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে রাত ২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে সন্ধ্যায় তার মরদেহ বাড়িতে আনা হলে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তার মরদেহ এক নজর দেখার জন্য আত্মীয়স্বজন সহ হাজারো দলীয় নেতা কর্মী ভিড় জমায়। সন্তানের মরদেহ দেখে অসুস্থ পিতা আবদুল মুনাফ ও মাতা সাফিয়া খাতুন অজ্ঞান হয়ে পড়েন। চার ভাই এক বোনের মধ্যে সে সবার ছোট ছিল।
হাজারো মানুষের শোক আর ভালোবাসায় তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার রাত ৮টায় বাদামতলী বাজারে নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরাস্থানে দাফন করা হয়।
সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম জহির, জেলা যুবলীগ নেতা জিয়াউল আলম মিস্টার, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব রবিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন খোন্দকার, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আইয়ূব নবী ফরহাদ সহ হাজারো মুসল্লি শামীমের জানাজায় অংশ নেন। জানজার নামাজে ইমামতি করেন বাদামতলী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল খায়ের।
উল্লেখ্য, সাঈদ আনোয়ার গ্রুপের একই যুবকরা ৯ আগস্ট রাত সাড়ে ৩টার দিকে ইফতেখার গ্রুপের যুবলীগ নেতা আইয়ূব নবী ফরহাদের মৎস্য খামারের নৈশ প্রহরী রতন চন্দ্র দাসকে একই কায়দায় হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। এ ঘটনায় আইয়ূব নবী ফরহাদ বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সেই অভিযোগের কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। সে ঘটনার যদি ব্যবস্থা নিতো তাহলে এই ঘটনাটি হয়তোবা এড়ানো যেত বলে মনে করেন এলাকাবাসী। এ নিয়ে গত কয়েক দিন যাবৎ দুগ্রুপের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সাঈদ আনোয়ারের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় ছাত্রলীগ নেতা রকি হত্যা মামলা, যুবলীগ নেতা নূর আলমের রগ কাটা, গোল্ডলিফ সিগারেট কোম্পানির টাকা ছিনতাই, অস্ত্র উদ্ধার, রাহাজানি, সন্ত্রাসী, পুলিশের উপর হামলা, মনগাজীর যুবলীগ নেতা গবিধনের চোখ উৎপাটন, ও ডাকাতি সহ ১৩টি মামলা রয়েছে। এর আগে ডাকাতির ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। সে চরসোনাপুর তিনবাড়িয়া দাসপাড়ার সৌদি প্রবাসী মো.হানিফের ছেলে।
অন্যান্য আসামীদের মধ্যে কয়েকজন জমিতে গম খাওয়াকে কেন্দ্র করে আইন উদ্দিন মাঝি বাড়ির আহসান উল্লাহর ছেলে নুরনবী কে একই কায়দায় ১২ বছর পূর্বে হত্যা করেছিল। ওই মামলায় কয়েজনের ১০ বছর করে সাজা হয়েছিল। পরে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তারা।
সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খালেদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ইতিমধ্যে ২ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: