05/05/2025 রক্তে কেনা দেশটাকে বড্ডো ভালোবাসি
odhikarpatra
২১ জুলাই ২০২২ ০৯:৫৮
১। বর্তমান বিশ্ব বিভিন্ন ধরনের সংকট বা ক্রাইসিস মোকাবেলা করছে। এই সংকট এসেছে দুটি কারণে, এক) করোনা ভাইরাস এর কুপ্রভাব, এবং দুই) ইউক্রেন - রাশিয়া যুদ্ধ। [ কোনটাই আমরা সৃষ্টি করিনি কিন্তু আমরাও প্রতিক্রিয়া ভোগ করছি!]
২। উপরের দুই কারণে জাতীয় জীবনে, ব্যাক্তি জীবনে, আয় রোজগারের তথা অর্থনীতিতে যে অনিবার্য প্রতিক্রিয়া বা কুপ্রভাব সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোকে এককভাবে মোকাবেলা করার শক্তি বা সামর্থ বিশ্বের কোন দেশ দেখাতে পারে নি। আমরা তো অনেক দূরে আছি!
৩। আমাদের জীবনের সাথে দারুণভাবে জড়িয়ে গেছে বিদ্যুৎ। আমরা জানি বিদ্যুৎকে উৎপাদন করতে হয়, বাতাস বা পানির মত এমনি এমনি হয় না এবং পাওয়া যায় না। এ জন্য প্রথমত আর্থিক সামর্থ জরুরী এরপর অন্যান্য বিষয়। সেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে সামর্থ কেমন এবং ক্রয়ের সামর্থ কেমন? চিন্তা করতে পারি বিদ্যুতের ক্রেতা ও ভোক্তা হিসেবে।
৪। একটু ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই জানতে পারব বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোন দেশ কি রকম পেরেশানির মধ্যে আছে এবং সাধারণ নাগরিক কিভাবে মোকাবেলা করছে। আমি যদি অমুক দেশ তুমুক দেশ তুলনা করি তাহলে অবশ্যই আগে নিজের সামর্থ বুঝতে হবে।
৫। পেরেশানি এমন একটি জিনিসের যা জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও পণ্য উৎপাদনে, রুগীর চিকিৎসা ও সেবায় অনেক অনেক জরুরী কিন্তু অন্যকোন ক্ষেত্রে ঠিক ততটা জরুরী নয়। চিন্তা করুন বিদ্যুতের আলো, ফ্যান বা এসি ছাড়া আছেন এক দুই ঘণ্টা মাত্র বা তার বেশি, তাই কষ্ট হল। এতে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে গেল? ধরুন আপনি কোন এক কাজের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন কিন্তু কারণ বশত সে কাজ একদিন, দুইদিন, তিনদিন ... করতে পারলেন না তাহলে কি সেটা মারাত্মক কিছু হবে? হবে না বিকল্প ঠিকই করে ফেলে। তাই অস্থির হবার কোন দরকার নেই। এটাই হলো পরিস্থিতি মোকাবেলা করা। যে সামর্থ মানুষের আছে।
৬। যেমন ধরুন ইউক্রেনের যুদ্ধ কবলিত মানুষগুলো বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য, চিকিৎসা ছাড়াই রয়েছে। তারা পরিস্থিতি মেনে নিয়ে সুদিনের প্রত্যাশা করছে। এবং সুদিন আসবেই। সে তুলনায় ১/২/৩...... ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকা কি কোন মারাত্মক ব্যাপার হলো?
৭। সরকার স্পষ্ট বলে দিয়েছে ক্রাইসিস কি কি এবং কিভাবে মোকাবেলা করবে। ১/২/৩... ঘণ্টা কষ্ট না করার জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে অধিক অর্থ মুল্য দিয়ে বিদেশ থেকে তেল/কয়লা/গ্যাস আমদানি করে কি আমাদের জমানো অর্থ ( বৈদেশিক বা দেশি মুদ্রার রিজার্ভ) শুন্য করব? তারপর? কে দিবে ? এটাকে বলে পকেট শুন্য করে বিলাসিতা করা। আমরা কি এতই অবিবেচক হতে পারি!?
৮। বরং আমরা বিবেচক হতে পারি, যেমন মাতৃভাষাকে বাঁচানোর জন্য জীবন দিয়েছি, মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছি। এরকম দৃষ্টান্ত যে জাতি বিশ্বে স্থাপন / সৃষ্টি করতে পারে সে জাতি বর্তমান ক্রাইসিস মোকাবেলা করতে পারে। এ বিশ্বাস থেকে, এমন আস্থা থেকেই সরকার জাতীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং জনগণকে মেনে নিতে অনুরোধ করেছে। কারণ এ সিদ্ধান্ত কেবল কোন ব্যাক্তির জন্য নয় সবার জন্য।
৯। যে সিদ্ধান্ত সর্বজনীন এবং অতিআবশ্যক সে সিদ্ধান্ত মেনে চলা নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব। কর্তব্য হল সে সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন করা। পারলে নিজ উদ্যোগে আরো ভালো কিছু করা।
১০। আপনার বাড়ির ছাদে বা বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গায় সোলার প্যানেল স্থাপন করে সেখান থেকে আপনি দিন রাত বিদ্যুৎ ভোগ করুন। বায়ো গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করুন এবং ইচ্ছেমত ভোগ করুন। বায়ু বিদ্যুৎ প্লান্ট বসিয়ে বা ময়লা আবর্জনার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করুন এবং দিন রাত ভোগ করুন। এসব একক বা সমবায় ভিত্তিতে করুন না কেন। কারণ, এসব করতে সরকার কখনোই বাঁধা দেয় নি বরং উৎসাহ দিয়েছে, দিচ্ছে এবং দিতেই থাকবে।
১১। তাহলে যতদিন আমি নিজে বিকল্প উপায়গুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করছি ততো দিন সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে সাশ্রয়ী হই। আমার বিকল্প হলো বিদ্যুৎ ছাড়াই থাকার অভ্যাস করা।
১২। অবশ্য আমরা অহেতুক ফাজলামো বা দুষ্টুমি করতে পারি জাতীয় সিদ্ধান্ত না মেনে, উত্তেজনা বা বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে পারি, মিথ্যা বিষোদগার করে সরকারের বিরুদ্ধে কতিপয় জনসাধারণকে বিপথে বা বিপদে চালিত করতে পারি। অনুগ্রহ করে এসব করবেন না। কারণ আমরা আমাদের রক্তে কেনা দেশটাকে বড্ডো ভালোবাসি, এজন্য ত্যাগ স্বীকার করেছি এবং করব। ##