05/07/2025 গলাচিপায় প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাত ও অনিয়মের অভিযোগ
পটুয়াখালী প্রতিনিধি
৩০ জানুয়ারী ২০২৪ ২২:২৮
পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালী গলাচিপায় ১৮নং বড়মুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হানিফ মিয়া ও সভাপতি মো. বাবুল মাস্টারের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাত ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১৮নং বড়মুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ বিষয়ে উক্ত বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি ও ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. মস্তফা কামাল এবং সমাজ সেবক মো. সামসুল হক রাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর বরাবরে ২১ জানুয়ারি ২০২৪ (রবিবার) একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে ও মোস্তফা কামাল খান জানান, ১৮নং বড়মুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হানিফ মিয়া নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না এবং ঠিকমত ক্লাস নেয় না। বিভিন্ন সরকারি দিবস যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শোক দিবসসহ কোন দিবসই পালন করেন না।
এসব বিষয় প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তার এ কাজ উর্দ্বোতন কর্তৃপক্ষ জানেন বলে জানায়। ২০২২ সালে ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র ৫০-৬০ হাজার টাকার কাজ করে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে মিলেমিশে ১ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি ও ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. মস্তফা কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক সভাপতির সাথে মিলেমিশে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছেন। বিদ্যালয়ে উন্নয়নের টাকা আত্মসাত করে খাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় ভূয়া স্লিপ (ভাউচার) তৈরি করে সেসব টাকা নিজেদের পকেটে ঢুকাচ্ছেন। এমনকি বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের পশ্চিম পাশের একটি কক্ষ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি ভেঙ্গে কক্ষটির ইট, রড সহ সকল মালামাল ট্রলিযোগে নিয়ে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। এসব অনিয়মের কথা জিজ্ঞাসা করলে প্রধান শিক্ষক আমাদেরকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা ও ভয়ভীতি দেখায়। প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটির কোন সদস্য এবং অভিভাবকদের কোন মূল্যায়ন করেন না। ফলে বিদ্যালয়ে ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সমাজ সেবক মো. সামসুল হক রাড়ীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিদ্যালয়টি আমাদের গ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে পড়ে অনেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকুরি করছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সভাপতিকে নিয়ে দুর্ণীতির আকড়া তৈরি করেছেন। তিনি কোন কিছুর তোয়াক্কা করতে চান না। আমরা এসব বিষয় জানতে চাইলে উল্টো আমাদেরকে হুমকি দেন। এভাবে স্কুল চলতে পারে না। আমি উর্দ্বোতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি দেখার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ করা হয়নি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ১৮নং বড়মুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হানিফ মিয়া। তিনি বলেন, ‘কাজ করে সঠিকভাবে হিসাব দাখিল করার পরে শিক্ষা অফিস থেকে অর্থ ছাড় করেছে। তাই অর্থ আত্মসাতের প্রশ্নই আসে না।’ এ বিষয়ে অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. বাবুল মাস্টার বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয় পরিচালনা করি এবং বিদ্যালয়ে বরাদ্দ আসলে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়। এ বিষয়ে গোলখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাসিরউদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমার ইউনিয়নে কোন দূর্নীতি করা যাবে না। স্কুল প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মানুষ তৈরি করার কারিগর। এখানে অনিয়ম হলে শিশুরা কী শিখবে? বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হবে। কোনো ধরণের অনিয়ম দেখা গেলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, শিক্ষাখাতে কোনো ধরণের অনিয়ম হলে ছাড় দেয়া হবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।