05/05/2025 বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আর নেই কাল বেলা ১১ টায় সুপ্রিম কোর্টে দ্বিতীয় জানাজা
odhikarpatra
৪ মে ২০২৫ ১৮:২৯
দেশের প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গুরুতর অসুস্থ হয়ে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
আজ বিকেল ৪ টা ১০ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এ সংবাদ জানান।
তিনি জানান, তার সিনিয়র ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের জানাজা পারিবারিক সিদ্ধান্তক্রমে আজ বাদ এশা ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে এবং আগামীকাল বেলা ১১ টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ১১ বছর পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে আসেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। এরপর সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় ফেরেন। ৬ জানুয়ারি তার জুনিয়র আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে তাকে সংবর্ধনা দেন।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এর আগে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে দাঁড়ান। ফলে আওয়ামী লীগ শাসনামলে রোষানলে পড়তে হয় তাকে। এক পর্যায়ে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
গত ২৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরে বিমানবন্দরে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি একজন আইনজীবী। আমি কোর্ট রুম ব্যারিস্টার। আমি আইনের অঙ্গনে আমার অবদান রাখার চেষ্টা করব। আইনের শাসন একটি অতি বড় জিনিস। দেশে যদি আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারি তাহলে আমাদের রাজনীতি সফল হবে। অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। সুতরাং আইন অঙ্গনে আমার বিচারণ, আইন অঙ্গনে আমি থাকব। আইন অঙ্গনের মাধ্যমে আমি দেশ ও জাতির খেদমত করার চেষ্টা করব।’
তার জন্ম ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৪৯ সালে। তার স্থায়ী বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে। বিএ (অনার্স) ও এম এ ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮০ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার এট ল ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি লন্ডনেই আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
দেশে ফিরে ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি দ্য ল’ কাউন্সিল নামে একটি আইনি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র অ্যাডভোকেট হন। তিনি আইনপেশায় দেশ বিদেশে সুনাম অর্জন করেন।
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দুই ছেলে ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা পরিচালনা করছেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষ গত ২১ এপ্রিল অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তার মৃত্যুতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ আইন অঙ্গনে শোকের ছায়া বিরাজ করছে। অত্যন্ত বিনয়ী ও মিষ্টভাষী হিসেবে তিনি সকলের কাছে প্রিয় ছিলেন।
সুত্র ঃ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা