05/05/2025 ভারতের হারিয়ানা রাজ্যে কয়েক মহিলা ব্যবসা উদ্যোক্তানারী অধিকার প্রতিস্থা করেছ
অধিকারপএ
৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:০০
ভারতের উত্তরাঞ্চলের হারিয়ানা রাজ্যের গ্রামগুলোতে মহিলারা ছোট অংকের ঋণ নিয়ে ব্যবসার উদ্যোক্তা হচ্ছেন, ব্যবসা করছেন। মহিলারা পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করছেন এবং পিতৃশাসিত সমাজে সকলের কাছ থেকে শ্রদ্ধা ও সম্মান অর্জন করছেন।
হারিয়ানা রাজ্যে কয়েক মহিলা ব্যবসা উদ্যোক্
নতুন দিল্লিতে আমাদের সংবাদদাতা মহিলাদের পরিচালিত একটি খামারে যান এবং দেখেন কিভাবে ওই সকল মহিলার জীবন পাল্টে গেছে।
হারিয়ানা রাজ্যের তাপরানা গ্রামে প্রায় চার বছর আগে মহিলারা দুগ্ধজাত) উৎপাদনের জন্য একটি ছোট খামার চালু করেন। প্রথম দিকে মহিলাদের যখন ঘরে ঘরে গিয়ে দুধ সংগ্রহ করতে হতো তারা খুবই লজ্জিত ও কুন্ঠিত বোধ করতেন। কারণটা আর কিছুই নয় -- ওই সব এলাকায়--- মেয়েদের স্থান ঘরের বাইরে নয়, ঘরের ভেতরে।
প্রভা গুপ্ত এই কার্যক্রমের পুরোধা। তিনি বলেন প্রথম দিকে---হিসেব নিকেশ ঠিক রাখা, অর্ডার নেওয়া, পুরুষ প্রধান এই ব্যবসায় জায়গা করে নেওয়া সব কিছুই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল।
কিন্তু এখন সেই ৭ মহিলা --- অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ব্যবসায়ী। তারা এখন দুগ্ধজাত পণ্য যেমন দই, ছানা ইত্যাদি বিক্রি ক’রে প্রতি মাসে ৭ হাজার ডলারের ব্যবসা করেন।
পুস্পা ভাটিয়া এক সময় একটি খামারে কাজ করতেন। এখন তিনি একটি মিনি ভ্যান চালান। তারা সম্প্রতি এই মিনি ভ্যানটি কিনেছেন। ওই মিনি ভ্যানে করে দুগ্ধজাত পণ্য খদ্দেরদের কাছে পৌছে দেওয়াটা সহজ।
তিনিবলেন, “পুরুষরা ভাবতেন ---এরা তো মহিলা --- তারা আর কি করতে পারবে? ওরা মাস দুয়েক কাজ করবে তারপর কাজ ছেড়ে দেবে। আমরা একটা অঙ্গিকার করি যে তা আমরা হতে দেবো না। আমরা এগিয়ে যাব।
তিনি বলেন, “আমাদের চাইতে যারা ধনী, তাদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয় তা আমার একেবারেই জানা ছিল না। আমি এখন গর্বিত। আমি এখন সবার সঙ্গেই খুব আস্থার সঙ্গে কথা বলতে পারি। আমি এখন আর ইতস্তত করি না।”
তাদের কাজ অনেক ব্যাপক ও প্রসারিত হয়েছে। আগে তারা প্রতিদিন ৫ লিটার দুধ সংগ্রহ করতো। এখন তারা প্রতিদিন ১৭৫ লিটার দুধ সংগ্রহ করেন।
অর্থ জমা করা ছাড়াও তারা মাসে ১০০ ডলার করে আয় করেন। সংসারে খরচে তারা এখন সাহায্য করতে পারে। ছেলেমেয়েদের জীবন যাতে আরও উন্নত করা যায় তা করতে এখন তারা সক্ষম।
ভাটিয়া বলেন, “আমার ছেলে সরকারি স্কুলে যেত। আমি এখন তাকে বেসরকারি স্কুলে ভর্তী করেছি। আমি পড়াশুনা করতে পারিনি। কিন্তু আমার ছেলে মেয়েরা শিক্ষিত হবে।”
মহিলারা এখন অ প্রথাগত ভূমিকা গ্রহণ ক’রে এবং পুরুষশাসিত সমাজে একটা স্থান করে নিয়ে, কিশোরী ও তরুনীদের নতুন ভবিষ্যত্ গড়ার পথ প্রশস্ত করে দিচ্ছেন।
একটি মুনাফা বিহীন সংগঠন Arpana Services এর কাছ থেকে নেওয়া ক্ষুদ্র ঋণের সাহায্যে তাদের ব্যবসা শুরু হয়। Arpana Services নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে। ওই সংগঠনটি তাদের কাজের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে ইশ ভাটনাগর যিনি ওই প্রকল্প তত্ত্বাবধান করেন, তিনি বলেন প্রকৃত পরিবর্তনের কারণ অন্য।
তিনি বলেন, “তাদের স্বামীরা যারা প্রায়ই তাদের নির্যাতন করতো, মারধোর করতো, এখন তারা তাদের স্ত্রীদের উপর নির্ভর করছেন ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে সাহায্যের জন্য। অর্থের জন্য তাদেরকে স্ত্রীদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এদের জীবন সম্পূর্ণ ভাবে পাল্টে গেছে। তারা এখন নিজেদের বাড়ি তৈরি করতে পেরেছে।”
এই নারীরা এখন তাদের গ্রামে নেতৃত্তের পদে আছেন। অন্যান্য মহিলারা যে সব সমস্যার সম্মুখীন হন, তা মোকাবেলার জন্য তারা প্রায়ই বৈঠক করে থাকেন।
তিনি বলেন, “প্রথমে তারা ভেবেছে আমরা দুর্বল। তারা কিছু বললে আমরা জবাব দেব না। তারা ভীতি প্রদর্শন করলে আমরা পিছপা হবো। সব পাল্টে গেছে। তারা এখন জানে আমাদের যোগ্যতা আছে। গ্রাম পরিষদও এখন আমাদের মর্যাদা দেয়। মহিলাদের বিষয়ে আলোচনায় আমাদের সংশ্লিষ্ট করে।”
কামলেশ শর্মা প্রতিবেশী একটি গ্রামে একই ধরনের একটি প্রকল্পে নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেন এ ধরনের বিপুল সংখ্যক ব্যবসা উদ্যোগের ফলে মহিলারা নিজেদের স্থান করে নিচ্ছেন, মতামত প্রকাশ করছেন।