বিভিন্ন ব্যাংক থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা লুটে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি বলেছেন, ‘ঋণের নামে ও বিভিন্ন কারসাজি করে গ্রাহকের প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা লুটে নিয়েছে আওয়ামী নেতাকর্মী, সমর্থক ও আওয়ামী মদদপুষ্ট গোষ্ঠী।’
এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকগুলো তীব্র তারল্য সংকটে জর্জরিত। ধার-দেনা করে চলছে দেশের বেশিরভাগ ব্যাংক; বিশেষ করে প্রাইভেট ব্যাংকগুলো। সরকারি ব্যাংকগুলোরও মূলধনের অনেকাংশই লুট হয়েছে। আমানতকারীরা লাইন ধরে আমানতের টাকা ফেরত নিতে চাচ্ছেন। তারা চেক দিয়েও সময়মতো টাকা পাচ্ছেন না। তহবিলের অভাবে চেক বাউন্স হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের ঋণের অর্থ সময়মতো ছাড় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের একটি স্বনামধন্য গবেষণা সংস্থা তাই ২০১৭ সালের ব্যাংকিং সেক্টরের সার্বিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে ২০১৭ সালকে ‘‘ব্যাংক কেলেংকারির বছর’’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে দুই দফায় আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছর মেয়াদকে ‘‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির দশক’’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী সরকারের বর্তমান ক্ষমতার ৯ বছরে দেশের অধিকাংশ সরকারি বেসরকারি ব্যাংক, নন-ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে। সুশাসনের অভাব, জবাবদিহিতার অভাব, দুর্নীতি, লুটপাট, নীতিহীনতা আর বিশৃঙ্খলা সব মিলিয়ে এক অস্থিতিকর ও নৈরাজ্যকর অবস্থায় রয়েছে বর্তমান ব্যাংকিং খাত।’
সংবাদ সম্মেলনে সরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাতের তথ্য তুলে ধরেছেন মির্জা ফখরুল।
সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলঙ্কারির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক আতঙ্কের শুরুটা বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা থেকে শুরু হলেও প্রকৃতপক্ষে বড় ধরনের ব্যাংক কেলেঙ্কারির শুরুটা হয় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সোনালী ব্যাংকের ‘‘হলমার্ক গ্রুপ’’ কেলেঙ্কারি থেকে। হলমার্ক গ্রুপের লোপাটকৃত অর্থের পরিমাণ সাড়ে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীসহ রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের নাম জড়িয়ে আছে।’
এছাড়াও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কথা বলেছেন সম্মেলনে উপস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তাই তারা জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য নয়। এ জন্য জনগণের ব্যাংকের টাকা গুটিকয়েক ব্যক্তির মধ্যে বিতরণ করার যে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি, তার মূল কারণ হচ্ছে- এ সরকার বিনা ভোটে নির্বাচিত।’
এসময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে যা হচ্ছে, তা হলো ভোগ ও নিয়ন্ত্রণ। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করো, বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করো, ব্যাংকি নিয়ন্ত্রণ করো- সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যাংকের যে একটা আলাদা সত্ত্বা থাকে সেটা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিয়েছে তারা। সমস্ত কিছুকে তারা রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। এতে ভুক্তভোগী হচ্ছে দেশের সাধারণ জনগণ। সরকারের একদলীয় নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে তারা ব্যাংকিং খাতকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এনে এই খাতে এই ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে।’
এ প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, ‘বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি ৮টি ব্যাংকের মালিক। কাজিই মনোপলি কোথায় গেছে, আজকে বাংলাদেশের অর্থনীতি সেক্টরের দিকে তাকালে তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে কী ধরনের লুটপাট হচ্ছে তা তিনদিন আগে প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে বিশদভাবে এসেছে। এককথায় বলতে চাই, আমাদের ম্যাক্রো ইকোনমির যে চিত্র সেটা গভীর আশঙ্কার সম্মুখীন।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন ব্যাংকিং ডিভিশনটা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা চাইনি রাষ্ট্র সরাসরি এখানে জড়িয়ে পড়ুক। তখন ব্যাংকিং সেক্টর রেগুলেটরি বোর্ড ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে। ব্যাংকিং সেক্টর মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার অর্থই হচ্ছে দুর্নীতি, যেটা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবারও চালু করেছে। রাজনৈতিক যে পৃষ্ঠপোষকতা তারা করেছে, সেটা ব্যাংকিং ডিভিশনের মাধ্যমে করে।’ আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা পূর্ণবহাল এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।