05/13/2025 নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে বিজেপি
Akbar
৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:০৪
আন্তর্জাতিক:ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফা শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার। আসন্ন এ নির্বাচনে নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এতে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধিকরণের (এনআরসি) বিষয়ও রয়েছে।
সোমবার অনুষ্ঠিত এ ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, অরুন জেটলি- সহ দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা।
‘সংকল্পিত ভারত ও সশক্তির ভারত’ স্লোগানে প্রকাশিত এ ইশতেহারকে বিজেপি নাম দিয়েছে ‘সংকল্পপত্র’। ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে অমিত শাহ বলেন, সংকল্পপত্র তৈরি করার আগে আমরা ছয় কোটি লোকের সঙ্গে কথা বলেছি। ২০১৪ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন বিশ্বে ভারত ছিল একাদশতম অর্থনীতির দেশ। আর বর্তমানে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, গেল পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার ৫০টি বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমাদের সরকার দেশে ব্যাপক সংস্কার এনেছে।
তিনি বলেন, ফির একবার মোদি সরকার’ এ স্লোগান সারা দেশে পৌঁছাতে হবে। এবারও আপনারা ভোট দিন, আমরা একটা মজবুত সরকার গঠন করব। যে আশা নিয়ে ভোট দিয়েছিলেন, তা পূরণ হয়েছে।
এর আগে রোববার দেশটির কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা অরুণ জেটলি জানিয়েছিলেন, এবার দলের স্লোগান ‘ফির একবার, মোদি সরকার!’
সোমবার ইশতেহার প্রকাশের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, আমরা দেশকে পুরো সুরক্ষিত করার কাজ করছি। অথচ বিরোধীরা তার বিদেশ সফর নিয়ে কটাক্ষ করেন। সারাদেশের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। সৌদি আরব প্রধানমন্ত্রীকে সে দেশের সবচেয়ে বড় সম্মান দিয়েছে। সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল ‘জন ধন যোজনা।’
অরুণ জেটলি বলেন, প্রচারের প্রথম ভাবনা থাকবে কাম করনেওয়ালি সরকার। দুর্নীতিগ্রস্ত পর্ব কাটিয়ে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসে বিজেপি সততার সঙ্গে সরকার পরিচালনা করেছে। এক্ষেত্রে এবারের ‘ইমানদার সরকার’ হবে দ্বিতীয় ভাবনা।
প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কড়া ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে ইশতেহারে।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ভারতে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কড়া ব্যবস্থা নেয়া হবে। মুসলিম নারীদের জন্য আমরা ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করব। প্রতিটি মানুষের বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে এটিএম বুথ থাকবে। সব শিশুর টিকাদান নিশ্চিত করা হবে।
‘কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি ১০০ জনে একজন চিকিৎসক তৈরির চেষ্টা চলবে। চিকিৎসাক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেয়া হবে। ৭৫টি মেডিকেল ও স্নাতকোত্তর মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি হবে। স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি মাথায় রেখে ৭৫টি প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে বিজেপির ইশতেহারে।
বিজেপি এবার নির্বাচনের ৩ দিন আগে ইশতেহার প্রকাশ করলেও গেলবারের নির্বাচনে নির্বাচন শুরুর দিন তা প্রকাশ করেছিল। এবারও তাদের এমন পরিকল্পনা ছিল, তবে দেশটির নির্বাচন কমিশনের আপত্তির কারণে ৩ দিন আগেই তারা নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করল।
যা যা রয়েছে এবারের বিজেপি’র নির্বাচনী ইস্তেহারে:
১. দেশের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতে জরুরি ভিত্তিতে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
২. সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি মানা অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে স্বাধীনতা দেয়া হবে।
৩. দেশের অন্যান্য রাজ্য ও প্রদেশসমূহেও ‘জাতীয় নাগরিক নিবন্ধিকরণ’ (এনআরসি) প্রক্রিয়া চালু করা হবে।
৪. ভারতে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে ‘স্মার্ট ফেন্সিং’ এর ব্যবস্থা করা হবে।
৫. ১৩০ কোটি ভারবাসীর আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে এ ‘সংকল্পপত্রে’।
৬. ফের ক্ষমতায় আসলে খুব দ্রুত ‘রাম মন্দির’ নির্মাণ করা হবে।
৭. গৃহহীন বা কাঁচা বাড়িতে বসবাসকৃত প্রতিটি পরিবারের জন্য আগামী ২০২২ সালের মধ্যে পাঁকাবাড়ি তৈরির করে দেয় হবে।
৮. দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ১ লাখ কোটি রুপি খরচ করা হবে।
৯. ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা হবে। এছাড়া কৃষকদের আর্থিক সুবিধা দানে এক থেকে পাঁচ বছরের জন্য এক লাখ রুপি পর্যন্ত সুদহীন ‘কিষাণ’ ক্রেডিট কার্ড ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।
১০. চিকিৎসা অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেয়ার লক্ষ্যে দেশজুড়ে ৭৫টি মেডিকেল ও স্নাতকোত্তর মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
১১. আর্টিকেল ৩৫ অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকদের পাওয়া বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করা হবে ইত্যাদি।