
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আক্তার। বয়স ১১ বছর। চার মাস আগেও স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতো সাদিয়া। বাম চোখটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে কিছুদিনের ব্যবধানে সাদিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। হারিয়ে ফেলেছে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা আর খেলাধুলার শক্তিও। ভুল চিকিৎসা না নিয়তির লেখা তার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা নেই সাদিয়ার পরিবারের কাছে।
সাদিয়ার বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, চার মাস আগেও আমার মেয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল। একদিন হঠাৎ চোখের মধ্যে ছোট আঁচিলের মতো দেখা দেয় এতে চোখটা ফুলে যায়। তখন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। ডাক্তার বলেন, এলার্জি হয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে। সে অনুযায়ী ওষুধ দেন। কিন্তু ওষুধে কোনো কাজ হয়নি। চোখ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে গেলে পরে সাতক্ষীরার চোখের ডা. আমিনুর রহমানের কাছে নিয়ে যাই। তিনি বলেন, চোখে ফোঁড়া হয়েছে। অপারেশন করতে হবে। ডা. আমিনুর রহমান চোখে পাঁচটি ইনজেকশন পুশ করেন।
সাদিয়ার বাবা আরও বলেন, এরপর চোখের অবস্থা আরও খারাপ হয়। তখন খুলনার শিরোমণি চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা ঢাকায় নিয়ে অপারেশন করার পরামর্শ দেন। পরে ঢাকার ইসলামী চক্ষু হাসপাতালে অপারেশন করা হয়। এরপর চোখে ইনফেকশন হলে চিকিৎসকরা ভারতে নেয়ার পরামর্শ দেন। ভারতের ভেলোর নিয়ে দ্বিতীয়বার সাদিয়ার চোখে অপারেশন করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, সুস্থ হতে অনেক দিন সময় লাগবে। প্রায় এক বছর হাসপাতালে থাকতে হবে। খরচ হবে ১২-১৩ লাখ টাকা। পরে টাকার ব্যবস্থা না হওয়ায় সাদিয়াকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। তারপর আর কোনো চিকিৎসা হয়নি।
আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের পক্ষে এতো টাকা জোগাড় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, যা ছিল বিক্রি করে ৫-৬ লাখ টাকা খরচ করেছি। সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে মেয়েটি আমার সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
শিশু সাদিয়ার বড় চাচা আতাউল্লাহ্ বলেন, সাদিয়াকে নিয়ে আমি ঢাকা ও ভারতে গেছি। কিন্তু সুস্থ হলো না। টাকার অভাবে আর নতুন করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে পারিনি। এখন বাড়িতেই সাদিয়া। চার মাস আগের সাদিয়া আর এখনকার সাদিয়া এক রকম নেই। ভেবেও কোনো কুলকিনারা করতে পারি না। নিয়তির লেখা না চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারণে এমনটি হলো আমরা জানি না।
বৈকারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বলেন, কয়েক মাস আগে সাদিয়ার বাবা জরুরি পাসপোর্ট লাগবে বলে কিছু কাগজপত্র নেয়ার জন্য আমার কাছে এসেছিলেন। জানিয়েছিলেন, মেয়েকে নিয়ে ভারতে যাবেন চিকিৎসার জন্য। আমিও জরুরিভাবে কাগজপত্রগুলো দিয়েছিলাম। পরিবারটি খুব অসহায়। মেয়েটির চোখটি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে।
সাদিয়ার ছবি দেখে চমকে ওঠেন খুলনা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে চোখটি স্বাভাবিক করা অসম্ভব। চোখে রেটিনা ব্লাস্টোমা হতে পারে।
সাদিয়াকে সহযোগিতা কিংবা চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে তার বাবা আলমগীর হোসেনের সঙ্গে (০১৭৯৬৫১৫৬২৩) যোগাযোগ করতে পারেন।
jagonews