odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫
বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করুন

ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত

MASUM | প্রকাশিত: ১২ August ২০১৭ ২১:২০

MASUM
প্রকাশিত: ১২ August ২০১৭ ২১:২০

ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত

জমিজমা নিয়ে বিরোধের কারণে সংঘর্ষ, এমনকি খুনাখুনির ঘটনা বাংলাদেশে নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রেকর্ডের ভুলে একজনের জমি আরেকজনের হয়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো এমন ভুল ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর প্রতিকার পেতে জমির মালিককে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে যেতে হয়। বাংলাদেশে এমন ট্রাইব্যুনাল রয়েছে ৪৩টি। তার অর্থ অনেক জেলায়ও ট্রাইব্যুনাল নেই। গত বছর পর্যন্ত এসব ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যা ছিল প্রায় আড়াই লাখ। প্রতিনিয়ত নতুন মামলা হচ্ছে। ৪৩ জন বিচারকের পক্ষে এই বিপুলসংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করা কি আদৌ সম্ভব? রয়েছে কর্মচারী সংকট। প্রতিটি ট্রাইব্যুনালে হাজার হাজার মামলা থাকলেও রয়েছে মাত্র একজন করে জারিকারক। সমনই ঠিকমতো জারি করা যায় না।
আদালতে সেরেস্তাদার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। নথি সংরক্ষণ, মামলা গ্রহণ, কার্যতালিকা তৈরি, সমন জারিসহ অনেক কাজই করেন এই সেরেস্তাদার। কিন্তু ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে এই পদই নেই। নথি সংরক্ষণের উপযুক্ত রক্ষণাগারও নেই অনেক ট্রাইব্যুনালে। এসব অসুবিধা মোকাবেলা করে ট্রাইব্যুনালে কাজ এগোয় খুব সামান্যই। ফলে মামলাকারীকে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। অবশেষে রায় পেলেও বিচারপ্রার্থীর বঞ্চনা ঘোচায় না। অভিযোগ আছে, ট্রাইব্যুনালের আদেশ ঠিকমতো তামিল করা হয় না। এসংক্রান্ত আইনে অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান থাকলেও আজ পর্যন্ত তা গঠন করা হয়নি। বাধ্য হয়ে আপিল করার জন্য বিচারপ্রার্থীকে হাইকোর্টে গিয়ে রিট করতে হয়। সেখানেও বিপুল মামলাজট। রয়েছে বিচারক সংকট। তাই বিচারপ্রার্থীকে অপেক্ষা করতে হয় বছরের পর বছর।

কথায় আছে, জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনায়েড। অর্থাৎ বিচার বিলম্বিত হওয়া বিচার না পাওয়ারই শামিল। এতে লাভ হয় সবলের, গায়ের জোরে অন্যের অধিকার হরণ করে। আর দুর্বল শুধুই বঞ্চিত হয়। শুধু ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল নয়, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে এ রকম বহু দুর্বলতা। রয়েছে আইন ও বিধিমালার দুর্বলতা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন করা হয় ২০০০ সালে এবং ২০০৩ সালে সর্বশেষ সংশোধন করা হয়। আইনের ৩৩ ধারায় বিধিমালা করার কথা বলা হলেও গত ১৭ বছরে তা করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য বিচারক রয়েছেন ১০৭ জন। বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য বিচারক আছেন ১০ জন। অথচ বাংলাদেশে মামলার সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। এখানে আদালত বা বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ-সুবিধাও অনেক কম। পরিণতি বিচারের দীর্ঘসূত্রতা। মামলাজট বেড়ে চলা। বর্তমানে বিভিন্ন আদালতে জমে থাকা মামলার সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে এই সংখ্যা আরো বাড়বে এবং বাড়তে থাকবে বিচার না পাওয়া মানুষের সংখ্যা।

গণতান্ত্রিক বা কল্যাণ রাষ্ট্রে তো নয়ই, কোনো সভ্য সমাজেও বিচারহীনতা কাম্য নয়। এতে অপরাধীরা উৎসাহিত হয়, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। আমরা আশা করি, বিচারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তা দ্রুত করা হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: