odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Thursday, 13th November 2025, ১৩th November ২০২৫

বাবার দেওয়া সেলাই মেশিন থেকে গার্মেন্টসের মালিক সাতক্ষীরার প্রিয়াংকা

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২১ January ২০২৫ ২০:২৮

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২১ January ২০২৫ ২০:২৮

জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল গ্রামে বিয়ে হয় দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন প্রিয়াংকা বিশ্বাসের। স্বামী গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস চম্পাফুল বাজারের একজন মুদি ব্যবসায়ী। বিয়ের পর পড়ালেখায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেও সব বাঁধা পেরিয়ে এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হন প্রিয়াংকা বিশ্বাস।

পড়ালেখা ও সংসার সামলানোর পাশাপশি বাবার দেয়া একটি সেলাই মেশিন থেকে তিনি বর্তমানে একজন সফল উদ্যোক্তা। একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পেয়েছেন জেলা ও উপজেলা জয়ীতা পুরষ্কারও।

প্রিয়াংকা বিশ্বাসের (৩২) বাবা অলোক বিশ্বাসের বাড়ি খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলি গ্রামে। প্রিয়াংকা রাড়ুলি ভুবন মোহিনী বালিকা বিদ্যালয়ে দশম শ্রেনীতে লেখাপড়া চলাকালীন তার বাবা তাকে চম্পাফুল গ্রামের গোপাল চন্দ্র বিশ্বাসের সাথে বিয়ে দেন।

গৃহবধূ থাকা অবস্থায় প্রিয়াংকার বাবা তাকে একটি সেলাই মেশিন কিনে করে দেন। সেই একটি সেলাই মেশিন থেকে পোশাক তৈরি শুরু করেন প্রিয়াংকা। শ্বশুর বাড়ির নানা প্রতিকূলতা থাকলেও সবকিছু পিছনে ফেলে অদম্য পরিশ্রম ও মেধাকে পুঁজি করে এগিয়ে যেতে থাকেন। বিভিন্ন এনজিও থেকে গার্মেন্টস শিল্পের ট্রেইনিং নিয়ে পোশাক তৈরি কাজ রপ্ত করেন।

২০১৭ সালে স্থানীয় এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ ও বাবার দেওয়া একটি সেলাই মেশিন ও কারিগর নিয়ে পোশাক তৈরি করতে থাকেন। শুরুতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে ব্যবসা বড় করে সফলতা পান।

দুটি প্লট ক্রয় করে গড়ে তুলেছেন সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরীতে প্রিয়াংকা নিট গার্মেন্টস নামে একটি পোশাক কারখানা। সেখানে প্রায় ৭০-৮০জন কারিগর দিনরাত কাজ করছেন। কারখানায় গেঞ্জি, জিন্স প্যান্ট, টাওজার, স্কুল কলেজ, ট্রাভেল ব্যাগ, হাতের তৈরি নকশী কাথা তৈরি হয়। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে প্রিয়াংকা গামেন্টসের হাতের তৈরি নকশী কাথা, ট্রাভেল ব্যাগ, গেঞ্জি যাচ্ছে আফ্রিকায়। যার ফলে তার সেখান থেকে অর্জন হচ্ছে বৈদাশিক মুদ্রা।

এছাড়া পাশাপাশি প্রিয়াংকার মালিকাধীন ঢাকার মোহাম্মদ পুরে হস্তশিল্পের একটি কারখানা রয়েছে। সেখানে ১৫-২০ জন হস্তশিল্পী বিভিন্ন ধরনের হাতের ডিজাইন পাটের ব্যাগ, মানিব্যাগ, খেলনা সামগ্রি তৈরি করেন।

সংসার ও ব্যবসার পাশাপাশি তিনি বর্তমানে মার্ষ্টাস ডিগ্রি অর্জন করেছেন খুলনা বিএল কলেজ থেকে। প্রিয়াংকার গার্মেন্টসে কাজ করে সংসার চলছে শতাধিক পরিবারের। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ব্যবসার পরিধি আরও বড় করতে চান প্রিয়াংকা নিট গার্মেন্টসের সত্ত্বাধিকারী প্রিয়াংকা বিশ্বাস।

প্রিয়াংকা নিট গার্মেন্টেসের কারিগর সোনিয়া খাতুন বলেন, প্রিয়াংকা গার্মেন্টেসে পোশাক তৈরি করে সংসার চলে। প্রিয়াংকা অনেক পরিশ্রম করে কারখানা তৈরি করেছেন। একজন গৃহবধূ নারীর অদম্য পথচলা দেখে আমরা অনুপ্রেরণা পাই।

তার গার্মেন্টেসের আরেক কারিগর মমতা দাশ বলেন, আমি আমার সংসার সামলিয়ে প্রিয়াংকা নিট গার্মেন্টেসে পোশাক তৈরি করি। এখান থেকে যে বেতন পায় তাই দিয়ে আমার সংসার চলে। আমার মত শতাধিক পরিবারের রুটি রুজি পিয়াঙ্কা গার্মেন্টেস থেকে হয়।

জেলার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমেদ বলেন, নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। এটাই আমাদের জন্য অনেক পাওয়া। প্রিয়াংকা একজন অদম্য সাহসী নারী গৃহবধূ থেকে সকল বাঁধা পেরিয়ে গার্মেন্টেস কারখানা করেছে, সেখানে শতাধিক পরিবারের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রিয়াংকার এই সাফল্যকে আমরা সম্মান করি। সরকার সকলভাবে প্রিয়াংকাকে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে বলে তিনি এসময় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রিয়াংকা বিশ্বাস বলেন, আমার পথ চলাটা কোন সহজ ছিল না। শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে সকল বাঁধা পেরিয়ে আমি পথ চলেছি। আমার বাবা সেদিন একটি সেলাই মেশিন না কিনে দিলে আমি আজ কারখানা তৈরি করতে পারতাম না। আর আমার প্রতিষ্ঠানে এতো গুলো মানুষের কর্মসংস্থানও হতো না। সরকার যদি আমাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন তাহলে আমরা ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারবো এবং এতে বহু মানুষের কর্মসংস্থানও হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: