odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫

আন্তঃনদীর পানিকে যুদ্ধের অস্ত্র বানানো উচিত নয়: মির্জা আব্বাস

odhikarpatra | প্রকাশিত: ৪ May ২০২৫ ২৩:০৬

odhikarpatra
প্রকাশিত: ৪ May ২০২৫ ২৩:০৬

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, পানি মারণাস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। 

আন্তঃনদীর পানিকে যুদ্ধের অস্ত্র বানানোও উচিত নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, একমাত্র ভারতই বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা ‘পানিকে’ যুদ্ধের মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

মির্জা আব্বাস আজ রোববার বিকেলে রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বরে ‘তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের দাবিতে আয়োজিত ‘গণপদযাত্রার’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। 

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপি’র রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে ‘গণপদযাত্রার’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, রংপুর মহানগর আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিছুর রহমান লাকু ও দলীয় নেতা এমদাদুল হক ভরসা বক্তৃতা করেন।

উত্তরাঞ্চলের প্রায় তিন কোটি মানুষের ‘জীবন-রেখা’ হিসেবে বিবেচিত আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার পানি ভারত একতরফাভাবে প্রত্যাহার করায় এই নদীটি প্রায় মৃত। তিস্তা নদী রক্ষায় দেশের বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। গণপদযাত্রায় অংশ নিয়ে বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা  তিস্তা রক্ষায় দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা ভারতের কাছে কিছু চাই না, শুধু পানি চাই। আমরা বকশিশ চাই না, ভিক্ষা চাই না, আমরা আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। আজ না হোক, কাল তা দিতেই হবে। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। পূর্ববর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে এই হিসাব-নিকাশ করেনি, কারণ, তারা সরকারে বার-বার থাকার ইচ্ছায় ভারতকে চাপে ফেলেনি।’

‘আমাদের কাছে ভারতের স্বার্থজনিত অনেক কিছুই রয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়গুলো এখন হিসাব করতে হবে। হিসাব করার সময় এসেছে। আমাদের তিস্তার পানি চাই, ফারাক্কার পানি চাই। দেশের যেখানে পানি দরকার, সেখানে তা দিতে হবে।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা বহু আগেই পানির ন্যায্য হিস্যা পেতাম যদি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার না আসতো। তারা ভারতের কাছে কোনো দিন পানির দাবি তুলতে পারেনি, তুলেওনি।’

শামছুজ্জামান দুদু বলেন, ‘পানির ন্যায্য হিস্যার প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না। তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা অবশ্যই আদায় করতে হবে।’ 

আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, তিস্তাপাড়ের মানুষের আর্তনাদ কারো কানে পৌঁছায় না । তাই যতদিন পর্যন্ত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে । আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব । কারণ, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা উত্তরের মানুষের অধিকার, সেজন্যই এই আন্দোলন।’

এদিকে গণপদযাত্রাকে কেন্দ্র করে রোববার দুপুর ১টা থেকে তিস্তা নদীবেষ্টিত বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে হাজার-হাজার মানুষ রংপুর শহরে আসতে শুরু করেন। গণপদযাত্রা শুরুর আগেই এই শহরে মানুষের ঢল নামে।  ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ - এই স্লোগানে শুধু শাপলা চত্বরই নয়, পুরো রংপুর মহানগরী মুখরিত হয়ে ওঠে । 

সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে বিকেলের আগেই রংপুর মহানগরী  পরিণত হয় জনস্রোতে। নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে মানুষের ঢলের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়  এই গণপদযাত্রা শাপলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে রংপুর জিলা স্কুল মাঠ গিয়ে শেষ হয়।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষক সংগঠন, শ্রমজীবী মানুষ, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই গণপদযাত্রাটি পরিণত হয় হয় গণমানুষের মহাসমুদ্রে। বলা যায়, পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এটি গণ-আন্দোলনের আরেক রূপ। ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ মানুষ এতে অংশ নেয়।

এর আগে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা পাড়ের হাজার হাজার মানুষ গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দু’দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। 

দু’দিনের কর্মসূচির শেষ দিনে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে প্রধান অতিথির বক্তব্যও রাখেন। তিনি তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই স্লোগানে দেন  ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’।

‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ এই স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টে একযোগে তাঁবু খাটিয়ে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষের ‘তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার’ দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: