ঢাকা | বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২

সমুদ্রসম্পদের বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী।

আহসানুল ইসলাম আমিন | প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩ ০৫:১৬

আহসানুল ইসলাম আমিন
প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩ ০৫:১৬

প্রধান প্রতিবেদক:

‘বাংলাদেশকে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করতে হলে সমুদ্রসম্পদের টেকসই ও বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কাজেই সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বার্থ রক্ষায় নৌবাহিনীকে আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মিল রেখে সক্ষম রাখতে সব সময় সচেষ্ট রয়েছি। এ বাহিনীর প্রয়োজন শুধু যুদ্ধকালীন নয়; বরং শান্তিকালীনও প্রতি মুহূর্তে জনসাধারণের দৃষ্টিসীমার আড়ালে থেকে কাজ করে যাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০ মার্চ সোমবার কক্সবাজারে কুতুবদিয়ার পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ ঘাঁটিতে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল। এ সময় সাবমেরিনারদের একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ঘাঁটির অধিনায়ক কমোডর মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন। এর মধ্য দিয়ে ঘাঁটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে এই সাবমেরিন ঘাঁটি একটি আধুনিক সামরিক স্থাপনা হিসাবে বিবেচিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সার্বিক উন্নতির জন্য যে ধরনের জাহাজ, ঘাঁটি ও অস্ত্র প্রয়োজন হবে আমাদের সরকার তা নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে আজ সংযোজিত হতে যাচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ এবং অত্যাধুনিক সাবমেরিন ঘাঁটি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সামরিক ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায় সূচিত হলো।

তিনি আরও বলেন, ‘চলমান আধুনিকায়নের অংশ হিসাবে আরও ২টি নতুন মেরিটাইম পেট্রোলএয়ারক্রাফট সংযোজন করেছি। তাছাড়া দুটি ইফটিলিটি হেলিকপ্টার অচিরেই সংযোজন করা হবে। আমাদের নৌবাহিনীর জন্য খুলনা শিপইয়ার্ডে ৩টি লেন্ডিং কারফট ট্যাংক নির্মাণ কাজ চলছে। যুদ্ধ জাহাজ, অক্সিলারি জাহাজ, অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি নৌবাহিনীতে প্রতিনিয়ত সংযোজিত হচ্ছে। ২০১৭ সালের ১২ মার্চ ২টি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠা করি। তিনি বলেন, এই সাবমেরিন ঘাঁটির প্রথম ধাপে বিভিন্ন অবকাঠামো ও সুবিধাদি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে সাবমেরিনের বার্থিং সুবিধা, সাবমেরিনের সহায়ক অন্যান্য যুদ্ধ জাহাজের বার্থিং সুবিধা, সাবমেরিন ফ্লিট হেডকোয়ার্টার্স, ট্রেনিং স্কুল ও সিম্যুলেশন সেন্টার এবং সাবমেরিন সংশ্লিষ্ট সব ধরনের বেস ফ্যাসিলিটিজ রয়েছে। এছাড়া এই ঘাঁটিতে একটি বৃহৎ ড্রাইডকের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। কর্মকর্তা ও নাবিকদের বসবাসের জন্য সব ধরনের নাগরিক সুবিধাদি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ পরিকল্পনার মধ্যে মসজিদ, স্কুল-কলেজ ও হাসপাতালসহ অন্যান্য সুবিধা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।’ এই নীতি অনুসরণ করে আমরা প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে সর্বদা সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সচেষ্ট। ২০১৭ সালে প্রথম দুটি সাবমেরিনের কমিশনিং অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে চাই না। কিন্তু যদি কেউ আমাদের আক্রমণ করে তার সমুচিত জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি আমাদের সব সময় থাকবে। আমি সে কথাই আজ পুনর্ব্যক্ত করছি এবং আজ এই সাবমেরিন ঘাঁটি দেখে আমার এই প্রত্যয় আরও সুদৃঢ় হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার শুধু সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিই নয়, সামরিক সদস্যদের জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নিয়েছে বহুমুখী পদক্ষেপ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা আরও জোরালো হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। নৌবাহিনীকে একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসাবে রূপান্তরে সাবমেরিন সংযোজন ছিল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।’

তিনি আরও বলেন, ‘সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সমৃদ্ধির সোপান ধরে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। আমরা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তুলেছি। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’- এখন আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। আমরা স্মার্ট নৌবাহিনী গড়ে তুলব। আর এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে প্রতিটি নৌসদস্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগে প্রস্তুত থাকবে এই আমার প্রত্যাশা।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কক্সবাজার-১ এর সংসদ-সদস্য জাফর আলম, আসন-২ এর আশেক উল্লাহ রফিক, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ-সদস্য কানিজ ফাতেমা মোস্তাক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: