
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গিলিয়াড এবং স্বাস্থ্য সহায়তা সংস্থা গ্লোবাল ফান্ডের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক নতুন চুক্তির ফলে নিম্ন আয়ের দেশগুলো এইচআইভি প্রতিরোধী ওষুধ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। লেনাক্যাপাভির নামে এ ওষুধ এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি ৯৯.৯ শতাংশ কমাতে সক্ষম।
জেনেভা থেকে এএফপি বুধবার গ্লোবাল ফান্ডের এক বিবৃতির বরাতে জানায়, এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য গঠিত গ্লোবাল ফান্ড চুক্তিটিকে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সমতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। চুক্তির আওতায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো এই ওষুধ কিনতে পারবে।
গ্লোবাল ফান্ড এক বিবৃতিতে জানায়, এইচআইভি প্রতিরোধে এই প্রথমবারের মতো এমন ওষুধ উচ্চ আয়ের দেশগুলোর পাশাপাশি একযোগে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেও চালু হচ্ছে।
সংস্থাটি জানায়, গিলিয়াডের সঙ্গে চুক্তির ফলে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদিত এই বিপ্লবী ওষুধটি ২০ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে আশা করা হচ্ছে।
এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবহৃত ‘প্রি-এক্সপোজার প্রফিল্যাক্সিস (প্রিপ)’ নামক ওষুধ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে প্রতিদিন একটি বড়ি সেবনের ঝামেলার কারণে বৈশ্বিক সংক্রমণ হ্রাসে তা এখনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারেনি।
অন্যদিকে, লেনাক্যাপাভির বা ‘ইয়েজটুগো’ নামের ওষধটি প্রতি বছর মাত্র দুটি ইনজেকশনেই কার্যকর হয় এবং প্রাপ্তবয়স্ক ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি ৯৯.৯ শতাংশ কমাতে সক্ষম। কার্যত এটি একটি শক্তিশালী টিকার মতোই কাজ করে।
গ্লোবাল ফান্ডের প্রধান পিটার স্যান্ডস বলেন, এটি শুধু একটি বৈজ্ঞানিক সাফল্য নয়, এইচআইভি বা এইডস মোকাবিলায় এটি একটি মোড় ঘোরানো ওষুধ ।
তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো আমাদের হাতে এমন একটি উপকরণ এসেছে, যা এইচআইভি মহামারির গতিপথ আমূল পরিবর্তন করতে পারে। তবে সেটি তখনই সম্ভব, যদি আমরা এটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারি।
চুক্তির আওতায় গ্লোবাল ফান্ড-সমর্থিত দেশগুলো প্রিপ ব্যবহারের পরিবর্তে লেনাক্যাপাভির সংগ্রহ করতে পারবে। সংস্থাটি জানায়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ অন্তত একটি আফ্রিকান দেশে এই ওষুধের প্রথম চালান পৌঁছানোর লক্ষ্যে তারা কাজ করছে।
সংস্থাটি বলেছে, এর মাধ্যমে যেসব অঞ্চলে নতুন সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি, সেখানে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি ‘রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের’ সূত্রপাত ঘটবে।
বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোতে এই ওষুধ একটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আনবে, যেখানে কিশোরী ও যুবতীরা অস্বাভাবিক হারে বেশি এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যারন মোৎসোয়ালেদি এক বিবৃতিতে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এটি একটি ‘গেম চেঞ্জার’। লেনাক্যাপাভির ঝুঁকিপূর্ণ সব মানুষের জন্য—বিশেষ করে তরুণ নারীদের জন্য এইচআইভি মুক্ত থাকার একটি দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর উপায়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: