
ইসরাইল গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য নিরাপদ স্থলপথ চালু করার ঘোষণা দেওয়ার পর জাতিসংঘ জানিয়েছে যে তারা এই ‘মানবিক বিরতির’ সুযোগে যত বেশি সম্ভব অনাহারক্লিষ্ট মানুষকে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করবে।
জেনেভা থেকে এএফপি জানায়, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, গাজা উপত্যকায় ২১ লাখ মানুষকে প্রায় তিন মাস খাওয়ানোর মতো খাদ্য তারা সেখানে পাঠিয়েছে বা পথে রয়েছে।
জাতিসংঘের জরুরি সহায়তা সমন্বয়কারী টম ফ্লেচার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ বলেন, ‘আমরা এই মানবিক বিরতির ঘোষণা স্বাগত জানাই। আমাদের মাঠপর্যায়ের টিমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, যারা এই সময়ে যত বেশি ক্ষুধার্ত মানুষকে সহায়তা দেওয়া সম্ভব, তা করবে।’
ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, এই বিরতি ও করিডোরের মাধ্যমে জরুরি খাদ্য নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘গাজার অভ্যন্তরে অধিকাংশ মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তাই খাওয়ার একমাত্র উপায়।’
তারা জানায়, গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে আছে এবং প্রায় ৪.৭ লাখ মানুষ ‘দুর্ভিক্ষ-সদৃশ পরিস্থিতিতে’ রয়েছে, যা ইতোমধ্যেই প্রাণহানির কারণ হচ্ছে।
ডব্লিউএফপি আরও জানায়, গাজায় পুরো জনগণের জন্য খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে ৬২,০০০ টনের বেশি খাদ্য প্রয়োজন।
রোববারের ‘বিরতি’র পাশাপাশি ইসরায়েল আরও বেশি ট্রাক প্রবেশের অনুমতি, দ্রুত ছাড়পত্র এবং ‘সহায়তাবাহী কাফেলার কাছাকাছি কোনো অস্ত্রধারী বাহিনী বা গুলির ঘটনা না ঘটার আশ্বাস’ দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
ডব্লিউএফপি বলেছে, ‘আমরা আশা করি, এসব পদক্ষেপ একত্রে কাজ করে জরুরি খাদ্য সহায়তা পৌঁছানোর গতি বাড়াবে এবং আর কোনো বিলম্ব ছাড়াই ক্ষুধার্ত মানুষজন সাহায্য পাবে।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্ক বলেন, গাজায় দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েলের দায়িত্ব হলো পর্যাপ্ত খাদ্য নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, ‘শিশুরা আমাদের চোখের সামনেই অনাহারে মারা যাচ্ছে। গাজা এখন এক বিপর্যস্ত বাস্তবতা- মৃত্যু, ধ্বংস এবং চরম মানবিক সংকটের জায়গা।’
তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ নামে একটি সংস্থারও সমালোচনা করেন, যারা মে মাসের শেষ থেকে জাতিসংঘ-নেতৃত্বাধীন সহায়তা আটকে যাওয়ার সময় খাদ্য বিতরণ শুরু করে।
তুর্ক বলেন, জিএইচএফ-এর ‘অগোছালো, সামরিকঘেঁষা বিতরণব্যবস্থা একেবারেই কার্যকর নয় এবং জরুরি সহায়তা পৌঁছানোর প্রয়োজনীয় মাত্রায় ব্যর্থ হচ্ছে।’
তার অফিস জানায়, জিএইচএফ-এর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে — যাদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জিএইচএফ-এর বিতরণস্থলের আশপাশে মারা গেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্দি এক্স-এ লেখেন, ‘গাজায় চলমান অনাহার পরিস্থিতির অবসান এখনই ঘটাতে হবে।’
‘মৃত্যুর মুখোমুখি লাখো মানুষের কাছে জরুরি, জীবনরক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছে দিতে জাতিসংঘ ও এনজিও সহকর্মীদের পাশে আছি।’
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) শুক্রবার সতর্ক করে বলেছে, ‘গাজায় পরিস্থিতি ইতোমধ্যেই ভয়াবহ এবং তা আরও খারাপ হচ্ছে।’
‘অনাহারের সংকট আরও তীব্র হচ্ছে,’ বলেছে তারা।
ওসিএইচএ জানায়, জাতিসংঘের টিম প্রস্তুত রয়েছে সহায়তা পাঠাতে, যতক্ষণ না ইসরাইল সীমান্ত খুলে দেয় এবং নিরাপদে কাজের সুযোগ দেয়।
‘যদি ইসরাইল সীমান্ত খুলে দেয়, জ্বালানি ও সরঞ্জাম প্রবেশে অনুমতি দেয় এবং মানবিক কর্মীদের নিরাপদভাবে কাজ করতে দেয়, তাহলে জাতিসংঘ খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ পানি, পুষ্টিসামগ্রী এবং আশ্রয় উপকরণ দ্রুত সরবরাহ শুরু করবে,’ বলে জানায় সংস্থাটি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: