odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২

ডাকসু: ব্যালট থেকে কিউআর কোড ভোটিংয়ের যুগে

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২৫ ২১:৩১

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২৫ ২১:৩১

ছয় বছর পর আবারো ঢাকার বুকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত এই ভোটযুদ্ধ। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে শিক্ষার্থীদের এই নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন উদ্দীপনা।

ঢাবি প্রতিনিধি 

ঐতিহ্য ইতিহাস

ডাকসু বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, ঢাবি শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি সংগঠন। এটি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ’ নামে, পরে ১৯৫৩ সালে বর্তমান নাম গ্রহণ করে।

ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধ— প্রতিটি ঐতিহাসিক অধ্যায়ে ডাকসু রেখেছে অগ্রণী ভূমিকা। এখান থেকেই উঠে এসেছেন বহু প্রভাবশালী জাতীয় নেতা— মওদুদ আহমদ, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না, আমানউল্লাহ আমান ও নুরুল হক নুর প্রমুখ।

ভোটার প্রার্থিতা

ডাকসু নির্বাচনে ভোটার হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা— স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীরা। এ বছর বয়সসীমা তুলে নেওয়ায় তুলনামূলক বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরাও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

প্রার্থী হতে হলে প্রথমে ভোটার তালিকায় নাম থাকতে হবে। এরপর মনোনয়নপত্র ও একাডেমিক কাগজপত্র জমা দিয়ে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

কাঠামো নতুন পদ

ডাকসু গঠিত হয় ২৮টি কেন্দ্রীয় পদ নিয়ে। উপাচার্য পদাধিকারবলে সভাপতি থাকলেও বাকি পদগুলোতে সরাসরি নির্বাচন হয়। এর মধ্যে রয়েছে সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও অন্যান্য সম্পাদকীয় পদ।

প্রতিটি হলে থাকে আলাদা সংসদ, যেখানে ১৩টি পদে ভোট হয়। ফলে এবারে মোট ৪১টি পদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া কেন্দ্রীয় পর্যায়ে চারটি নতুন পদ যুক্ত হয়েছে— গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক এবং মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক।

কার্যক্রম দায়িত্ব

ডাকসুর কাজ শুধুই রাজনীতি নয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে— কমনরুম পরিচালনা, ইনডোর গেমস, পত্রিকা ও জার্নাল প্রকাশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক, নাটক, বক্তৃতা আয়োজন এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ। এসবের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব, মতামত প্রকাশ ও অংশগ্রহণমূলক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

আধুনিক ভোটিং ব্যবস্থা

প্রথমবারের মতো ডাকসু নির্বাচনে ব্যবহৃত হবে আধুনিক প্রযুক্তি। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে হবে কিউআর কোড স্ক্যান করে, যা রেজিস্ট্রেশনের সময় শিক্ষার্থীর তথ্য অনুযায়ী তৈরি হয়েছে।

ভোট হবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি কেন্দ্রে, মোট ৫০৮টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। নিরাপত্তায় থাকবে বিশেষ বাহিনী ও পর্যবেক্ষক দল।

বিতর্ক চ্যালেঞ্জ

ডাকসু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আছে নানা বিতর্ক— অনিয়মিত নির্বাচন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, সহিংসতা এবং প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ। ২০১৯ সালের নির্বাচনে যেমন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, তেমনি দীর্ঘ ২৭ বছর নির্বাচন না হওয়ায় আস্থা নষ্ট হয়েছিল শিক্ষার্থীদের।

তবে এবারের নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার ও বয়সসীমা প্রত্যাহার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, ডাকসু এবার হবে স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক ও গণতন্ত্র চর্চার এক উজ্জ্বল মঞ্চ।

 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: