
— বিশেষ সংবাদদাতা
রাজধানীর শাহবাগে মঙ্গলবার বিকেলে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের “লং মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচি রূপ নেয় সহিংস সংঘর্ষে। যমুনা অতিথি ভবনের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে শিক্ষার্থীরা। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ। ফলশ্রুতিতে প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হন, যাঁদের মধ্যে বহুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
আহত শিক্ষার্থীদের অবস্থা
বুয়েট উপাচার্য প্রফেসর ড. আবু বরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জানান—“আমাদের অনেক শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে আহত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে। কয়েকজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।”
শিক্ষার্থীদের দাবি ও অবস্থান
প্রেস কনফারেন্সে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জুবায়ের আহমেদ সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন— “তিনি আমাদের উপর সন্ত্রাসী আচরণের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইবেন এবং দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। সরকার কর্তৃক গঠিত কমিটি অবৈধ; নতুন কমিটিতে অবশ্যই ছাত্র ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
শিক্ষার্থীদের তিনটি মূল দাবি হলো—
১) বিএসসি ডিগ্রিহীনদের ‘ইঞ্জিনিয়ার’ পদবী ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
২) নবম গ্রেডে পদোন্নতির জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৩) দশম গ্রেড প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে এবং তা এক্সিকিউটিভ অর্ডারের মাধ্যমে কার্যকর করতে হবে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা নতুন করে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে আহতদের চিকিৎসা ব্যয়ভার গ্রহণ, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান এবং অন্যায় প্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতিক্রিয়া
বুয়েট উপাচার্য পুলিশের ব্যাটন চার্জকে “সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য” আখ্যা দিয়ে দায়িত্বশীল আচরণের দাবি জানান। শিক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকের পর একটি কমিটি গঠন হলেও শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন—দমননীতি চলতে থাকলে আন্দোলন আরও তীব্রতর হবে।
সমর্থন ও সড়কজুড়ে প্রতিবাদ
চুয়েট শিক্ষার্থীরাও বুয়েটের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রধান সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলন সমর্থন করে পুলিশের সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানান।
আহত পুলিশ সদস্য
পুলিশের অন্তত আটজন সদস্যও আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে উপকমিশনার মাসুদ আলম, অতিরিক্ত উপকমিশনার রেজোয়ানুল ইসলাম, এসআই তৌহিদুল ইসলাম, এএসআই ফারহাদ আলি ও কনস্টেবল আদিব গুরুতর জখম হন। গুরুতর আহতদের রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা সংকটাপন্ন।
সারসংক্ষেপে বলা যায়—
- ৬০ জনের অধিক শিক্ষার্থী আহত, বহু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
- ৮ জন পুলিশ সদস্য আহত, দুইজনের অবস্থা গুরুতর।
- শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি ও শাহবাগে অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত।
- বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিন্দা, সরকারের কমিটি প্রত্যাখ্যান।
- অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজনৈতিক সংগঠনের সংহতি প্রদর্শন।
এই আন্দোলনের শেষ কোথায় জানতে পড়ুন অধিকারপত্র সম্পাদকীয়
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: