
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১১ হাজার নারী জরায়ু ক্যান্সারে মারা যান। আর এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন প্রায় পাঁচ কোটির নারী।
জরায়ু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখেছেন, অশিক্ষিত ও যৌনকর্মীরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন।
স্কয়ার হাসপাতালের গাইনোকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা রাজিয়া বেগমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি দল চার জেলার নারী ও যৌনকর্মীদের নিয়ে এই গবেষণা পরিচালনা করেন।
গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন, অধ্যাপক ডা. মোজাহিদ উদ্দিন আহমেদ (ইউজিসি), ডা. নাসিমা শাহীন, ডা. শামসুন্নাহার, ডা. সোনিয়া পারভীন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. একেএম আনিসুর রহমান ও ডা. তৌহিদুল ইসলাম।
গবেষণা অনুসারে, সাতটি কারণে নারীরা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ সবের মধ্যে অন্যতম চারটি কারণ হচ্ছে :
১. অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক
২.বাল্য বিয়ে
৩.মাদক গ্রহণ
৪. অধিক সন্তান জন্মদান
গবেষকরা বলছেন, সঠিক সময়ে জরায়ু ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে প্রতিকার করা সম্ভব। গবেষণা দলের সদস্য অধ্যাপক মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, প্রজনন স্বাস্থ্যে সচেতনতার অভাব এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সেক্টরের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে জরায়ু ক্যান্সার ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তিনি আরো বলেন. রোগটি মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে যদি এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়া হয়।
ডা. মোজাহিদ বলেন, খাগড়াছড়ি, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও গাজীপুর জেলার এক হাজার নারী ও যৌনকর্মীদের ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে।
ডা. মোজাহিদ আরো বলেন, ১১শতাংশ গ্রামীণ নারী এবং ৩১শতাংশ যৌনকর্মী প্যাপিলোমা ভাইরাস বহন করেন। যা জরায়ু ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
প্যাপিলোমা ভাইরাস নারীদের যদিও সুস্থ্য বলে মনে হয়, তবুও তারা যে কোনো সময় জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। অনিয়মিত বা দীর্ঘদিন মাসিক, জরায়ু থেকে যখন-তখন রক্তপাত, সহবাসের সময় ব্যথা অনুভব; এইসব হলো জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ।
যে কোনো একটি লক্ষণের কারণেও হতে পারে জরায়ু ক্যান্সার।
ডা. মোজাহিদ বলেছেন, প্রধান সাতটি কারণ হলো অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, বাল্য বিয়ে, অধিক সন্তান জন্মদান, মাদক গ্রহণ, গর্ভপাত ও স্বাস্থ্য অসচেতনতা।
এক পুরুষ একাধিক নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে এক নারীর থেকে অন্য নারীর শরীরে প্যাপিলোমা ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া কোনো পুরুষ জন্মগতভাবে প্যাপিলোমা ভাইরাস বহন করলে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেও নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন, বলেন ডা. মোজাহিদ। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ শনাক্ত করা গেলে পুরোপুরি নির্মূল করা যায়, মত দেন তিনি।
এছাড়া বছরে একবার জরায়ু পরীক্ষা ও ক্যান্সার প্রতিরোধক ইনজেকশন নিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। গবেষক দলের প্রধান ডা. সুলতানা রাজিয়া বেগম বলেন, ১০টি ক্যান্সারের মধ্যে জরায়ু ক্যান্সার দুই নম্বর অবস্থানে আছে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৯.২ শতাংশ। জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অনেক নারীর মৃত্যু হয় কিন্তু তার পরিবার মৃত্যুর কারণ জানেন না।
ডা. সুলতানা রাজিয়া আরো বলেন, অনেক নারী লাজুক। তারা জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ লুকিয়ে রাখেন এবং পরীক্ষা করাতে চান না। ফলে তারা ধীরে ধীরে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।
ডা. সুলতানা মনে করেন, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে দেশের নারীদের জরায়ু ক্যান্সার থেকে রক্ষা করা যাবে।
তিনি আরো মনে করেন, জরায়ু ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য শহুরে ও গ্রামীণ এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার একটি প্রচারণা চালানো খুবই জরুরি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: