
‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) কাজের পদ্ধতিই ট্রান্সপারেন্ট নয়’, মন্তব্য করে ‘টিআই প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০১৮ ত্রুটিপূর্ণ, অস্বচ্ছ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দেশ ও মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য’, বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার সচিবালয়ে টিআই প্রকাশিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০১৮’ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রকৃতপক্ষে যে পদ্ধতিতে দুর্নীতির এই ধারণা সূচক তৈরি করেছে সেটি ত্রুটিপূর্ণ এবং অস্পষ্ট। আমরা যতদূর জানি, টিআইয়ের এই দুর্নীতি সূচক নিরূপণের মেথডলজি তথাকথিত কিছু বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ীর মতামত গ্রহণ করা এবং তাদের বিভিন্ন জায়গায় কিছু কমিটি আছে নানা নামে, সেই সমিতি বা কমিটির মাধ্যমে এসব তথ্যগুলো সংগ্রহ করে। অর্থাৎ তাদের মেথডোলজিই (গবেষণা পদ্ধতি) সমস্যাগ্রস্ত।’
তথ্যমন্ত্রী এসময় খ্যাতনামা ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে দুর্নীতির বিষয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ এলেক্স কবহ্যাম (অষবী ঈড়নযধস) এর প্রকাশিত নিবন্ধের উক্তি উদ্ধৃত করে বলেন, ‘গুটিকতক মানুষের মতামতের ভিত্তিতে একটি দেশের দুর্নীতির অবস্থা যাচাই করা সম্ভব নয়। এই ত্রুটিপূর্ণ কৌশল ব্যবহার করে একটি দেশের দুর্নীতি যাচাই করা অসম্ভব।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে বলে সারাদেশে রব তুলেছিল টিআই। তখন বিশ্বব্যাংক অর্থ বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা বলেছিল, দুর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। পরে সেটা ভুল প্রমাণ হয়েছে। বিশ্বব্যাংক কানাডার আদালতে মামলা করেছিল, সেখানে বিশ্বব্যাংক হেরে গেছে। কিন্তু এই ঘটনায় টিআই সেই সময় দুর্নীতি হচেছ বলে যেভাবে রব তুলেছিল পরবর্তীতে ভুল প্রমাণ হওয়ার পরও তারা সেটা নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। যখন কানাডার আদালতে বিশ্বব্যাংক হেরেছিল তখন আমরা মনে করেছিলাম তারা ঘটা করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইবে, কিন্তু তারা ক্ষমা চায়নি।’
‘নির্বাচনের আগেও টিআই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, যা ছিল বিএনপির এজেন্ডার প্রতিধ্বনি’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন,‘বিএনপির অভিযোগের সঙ্গে তাদের প্রতিবেদনের ৮০ শতাংশ মিল ছিল। ফলে তারা যে একটি বিশেষ দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়, সেটা পরিস্কার’, যোগ করেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছেন, তার সততা, নিষ্ঠা যখন বিশ্বে একটি উদাহরণ, যে আমলে সরকারি দলের সংসদ সদস্যকে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) জিজ্ঞাসাবাদ করে, তাদের আদালতে দাঁড়াতে হয়, তা বাংলাদেশে অতীতে কখনো হয়নি। যখন বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেছে বলে বিশ্ব দরবারে প্রশংসা হয়, যেই মুহূর্তে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ নিয়ে প্রশংসা করে। ঠিক সেই মুহূর্তে টিআই তাদের ত্রুটিপূর্ণ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ পদ্ধতি দিয়ে দেশ ও মানুষকে হেয় করার জন্য চেষ্টা করছে। এটি সমীচিন নয়।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা দেশের সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজ সংগঠনগুলোর গঠনমূলক সমালোচনাকে সবসময় স্বাগত জানাই। কিন্তু অন্ধ বা উদ্দেশ্যমূলক সমালোচনা কখনো দেশ ৗ জনগণের উপকার বয়ে আনেনা।’
‘আমি টিআইকে অনুরোধ করব, আপনাদের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে তা দুদক ও সরকারকে জানান, সরকার সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’, বলেন তিনি।
বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবও দেন মন্ত্রী। টিআইয়ের প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অবশ্যই, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
টিআই’র বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দুদক ইতোমধ্যে তাদের প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা চেয়েছেন। আমি টিআইকে বলব, আপনারা কোন তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন তা দুদকের কাছে বলুন।’
সরকারে থাকতে বিএনপি তিনবার দুর্নীতিতে চাম্পিয়ন হয়েছে টিআই যখন এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল তখন আপনারা স্বাগত জানিয়েছিলেন এখন টিআইয়ের প্রতিবেদন প্রত্যাখন করছেন কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ‘ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তখন যথেষ্ট কারণ ছিল। তখন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। খালেদা জিয়া নিজে কালো টাকা সাদা করেছেন। তার অর্থমন্ত্রী কালো টাকা সাদা করেছেন। তখন যথেষ্ট কারণ ছিল। এখন কোন তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন করা হয়েছে তার নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।’
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের পর এদিন সচিবালয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি ও বাংলাদেশ সংবাদপত্র কর্মচারি ফেডারেশন ও বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অভ নিউজপেপার প্রেস ওয়ার্কার্স এর সাথে মতবিনিময় করেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: