
দুপুর ১২:৩০ টার দিকে বনানীর ২২ তলা এফ আর টাওয়ার ভবনে আগুন লাগে
সন্ধ্যা ৭ টার দিকে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়
আগুনের কারণ সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ
আগুনের সময় ভবনটির ছাদে আটকা পড়েছিলেন অনেক মানুষ
ছাদ থেকে রশি ও তার বেয়ে নামতে গিয়ে বেশি কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে
উদ্ধারকাজে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে
উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিস, দমকল বাহিনী, সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন
জনসাধারণও উদ্ধারকাজে এগিয়ে এসেছিলেন
ভবনের মধ্য থেকে ১৩ জনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে, আর বিভিন্ন হাসপাতালে আরো ছয়জন নিহত হওয়ার খবর এসেছে
শুক্রবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত ভবনের মধ্যে অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে উদ্ধারকর্মীরা
রাজধানীর অন্যতম অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত বনানীর বহুতল ভবন এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগে দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে একটার মধ্যে।
এরপর আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট।
আগুনের গুরুত্ব বুঝে পরে আরও ৫টি ইউনিট যোগ দিলে, মোট ১৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং ভেতর থেকে আটকে পড়া লোকজনকে বের করে আনার জন্য কয়েক ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালিয়ে যায়।
তারপরও এফ আর টাওয়ার এবং পাশের হোটেল সারিনার মাথার ওপর দিয়ে কুণ্ডুলি পাকানো কালো ধোঁয়া নজরে আসছিল বহুদূর থেকেও। একট সময় ঢাকা পড়ে যায় পাশের ছাদের ওপর বড় বড় করে ইংরেজি হরফে 'সারিনা' লেখাটি।
পানির স্বল্পতায় উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটে
ঘটনাস্থল থেকে জানা যায়, পানির স্বল্পতার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছিল।
বারবার পানি ফুরিয়ে যাচ্ছিল। মাঝে মাঝেই পুরো এলাকাটি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছিল।
এরপর বিকেল চারটার দিকে বড় ক্রেনের সাহায্যে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা উদ্ধার কাজ শুরু করেন।
উদ্ধারকাজে যোগ দেয় অন্য বাহিনীর সদস্যরা
তিন/ চার ঘণ্টা ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বিফলে গেলে উদ্ধার তৎপরতায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বাহিনী কাজ শুরু করে।
২৩ তলা ভবনের ছাদের ওপর চক্কর দিতে শুরু করে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টার থেকে আগুন নেভাতে পানি ছোড়া হয়।
এরপর 'এয়ার-লিফট' পদ্ধতিতে ভবনের ছাদের ওপর আশ্রয় নেয়া মানুষদের হেলিকপ্টারে তুলে নিয়ে আসা হয়।
এফ আর টাওয়ার এবং পাশের হোটেল সারিনার মাথার ওপর দিয়ে কুণ্ডুলি পাকানো কালো ধোঁয়া নজরে আসছিল বহুদূর থেকেও।
বাতাসে পোড়া গন্ধ আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন
আগুন লাগার খবর পেয়ে ভবনটির নিচে জড়ো হন বহু মানুষ।
তাদের মধ্যে ছিলেন- ভেতরে আটকা পড়া লোকজনের পরিচিত-স্বজন-বন্ধু, আশে-পাশের ভবন কিংবা বাজারের লোকজন, পথচারী, এবং উৎসুক মানুষ জন।
নিচে দাঁড়িয়ে থাকা এরকম প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলছিলেন, "ওপর থেকে কাগজ-পত্র উড়ে উড়ে নিচে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছিল, আর বাতাসে ধোঁয়া আর একধরনের পোড়া গন্ধে নি:শ্বাস ভারী হয়ে আসছিল"।
দুপুর ১২:৩০ দিকে আগুন লাগার সাড়ে ছয় ঘণ্টা পরে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় বিকেল ৭:০০ নাগাদ।
তবে তখনো বহুতল ওই ভবনটির ছাদের ওপর দিয়ে হালকা ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছিল আশে-পাশের ভবন থেকে।
এরপর বিল্ডিং এর ভেতরে প্রবেশ করে উদ্ধারকারী দল ও বাহিনীগুলো।
উদ্ধারকাজ চলার সময় ঘটনাস্থলে যোগ দেয় স্বেচ্ছাসেবকরাও। মূলত, আশেপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসে যোগ দেয় সেখানে।
উৎসুক জনতা যেন উদ্ধারে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে সেজন্য তারা স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন।
অনেককে দেখা যায় খাওয়ার পানির বোতল এনে তা বিতরণ করতে।
একটা সময় ভবনটির ওপরের দিকের তলাগুলো থেকে বেশ কয়েকজনকে দেখা গেছে হাত নাড়ছেন।
বাড়ছে নিহতের সংখ্যা, আহত অনেকে
শুরুতে একজনের কথা জানা গেলেও নিহতের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে।
শেষ খবর পর্যন্ত ১৯ জনের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিসই খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছে, এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৭০ জন।
তবে আশঙ্কাজনক আছেন অনেকে।
এর আগে পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছিল সাতজনের নিহত হওয়ার খবর।
এদিকে ভবন থেকে বাঁচার চেষ্টায় কয়েকজনকে লাফ দিয়ে পড়তে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে কারও কারও অবস্থা গুরুতর।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: