ঢাকা | বুধবার, ৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

তিন অর্থবছরে লক্ষ্য ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা

Akbar | প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:৫৩

Akbar
প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:৫৩

অর্থনীতি: মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হবে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে। এটি অর্জনের জন্য বৈদেশিক সহায়তাসংক্রান্ত নীতিমালা তৈরিসহ চার ধরনের কৌশল নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এ লক্ষ্যমাত্রা ও কৌশল নির্ধারণ করেছে। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে প্রাথমিক এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এখন পাইপলাইনে যে পরিমাণ প্রতিশ্রুত অর্থ রয়েছে সেখান থেকে ২০ শতাংশ করে ছাড় করতে পারলেই প্রতি অর্থবছরে ৮ বিলিয়ন ডলার অর্থ ছাড় করা সম্ভব। এজন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে হবে। ঋণ চুক্তির শর্ত মেনেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। যাতে মিস প্রকিউরমেন্ট বা যেসব কারণে প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যায় সেসব কারণ না ঘটে; সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া সংস্কার কার্যক্রমও এগিয়ে নিতে হবে। যেসব ঋণ সংস্কার কাজের সঙ্গে যুক্ত (যেমন বাজেট সহায়তা) এসব ঋণের ক্ষেত্রে দ্রুত সংস্কার কাজ করতে হবে। তাহলে দ্রুত অর্থছাড়ও হয়ে যাবে। এ ছাড়া সরকার চাইলে আর্থিক খাতে সংস্কারের ভিত্তিতে নতুন প্রকল্প প্রস্তাব করতে পারে। এটি করার মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থ পাওয়া যেতে পারে। সর্বশেষ পাইপলাইন বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন অর্থায়নযোগ্য প্রকল্প হাতে নিতে হবে। যাতে প্রকল্পগুলো থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে কঠিন শর্তের ঋণ নিলেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

ইআরডি থেকে বলা হচ্ছে, ২০১৮ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য নির্ধারিত তিনটি সূচকেই প্রথমবারের মতো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মান অর্জনে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ নিু-মধ্যম আয়ের দেশের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। আশা করা যায়, ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভে সক্ষম হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর আলোকে ২০০৯ সাল থেকে সরকার উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদ সংগ্রহের পাশাপাশি বিদ্যুৎ, সেতু, সড়ক ও রেলসহ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের জন্য বৈদেশিক অর্থায়ন সংগ্রহের কাজ করছে ইআরডি।

ইআরডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ ছাড়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকূলে এসব অর্থ ছাড় হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এই লক্ষ্য অর্জনে যেসব কৌশল নেয়া হচ্ছে সেগুলো হল- অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্য অর্জনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সেতু, রেলওয়ে, আইসিটি, সড়ক, বন্দরসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অধিক হারে বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া বৈদেশিক সহায়তা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নীতি ও অঙ্গীকার এবং জাতীয় উন্নয়ন চাহিদা ও নীতিমালার আলোকে উন্নয়ন সহযোগিতা ব্যবস্থাপনা করা হবে। উন্নয়ন সহযোগিতার কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সরকার এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করছে। এটি অচিরেই চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় অর্থায়নের জন্য ইউএন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) এর আওতায় গঠিত গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের (জিসিএফ) সঙ্গে বাংলাদেশ সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করবে। সর্বশেষ কৌশল হচ্ছে, দীর্ঘ মেয়াদি ও সহজ শর্তের ঋণ গ্রহণের নীতি অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া হবে এবং ঋণের স্থিতির ক্ষেত্রে বর্তমানের সন্তোষজনক অবস্থা অক্ষুণ রেখে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের জন্য বাছাই করা কঠিন শর্তের ঋণ গ্রহণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি পুরো ইআরডির বিষয়ে বলতে পারছি না। তবে জাপান উইংয়ের কথা বলতে পারি। সেটি হচ্ছে- চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ও অর্থ ছাড়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ হয়ে যাবে। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এর চেয়ে অনেক বেশি প্রতিশ্রুতি ও অর্থ ছাড় করা সম্ভব হবে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) বৈদেশিক সহায়তার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি এসেছে ৬০১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে এসেছে ৪৮৯ কোটি ৩৪ লাখ ডলার এবং অনুদান হিসেবে ১১২ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। এ ক্ষেত্রে অর্থবছরের চার মাস বাকি থাকতে ৮ মাসেই লক্ষ্যমাত্রার বেশি অর্জন হয়েছে। অন্যদিকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অর্থ ছাড় হয়েছে ৪০৭ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে ছাড় হয় ৩৯০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার এবং অনুদান হিসেবে ছাড় হয় ১৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার। ইআরডি দাবি করেছে গত ৮ মাসে যে পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা ছাড় হয়েছে তা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। এটি বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহারে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত করে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগী দেশ বা সংস্থার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ৯৯ কোটি ২ লাখ ডলার। এর মধ্যে আসল হিসেবে শোধ করা হয় ৭৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার এবং সুদ হিসেবে দেয়া হয়েছে ২৪ কোটি ৬ লাখ মার্কিন ডলার।

ইআরডি জানায়, ইতোমধ্যেই বৈদেশিক সহায়তার ব্যবহার বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে শ্লথ গতির প্রকল্পগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর গতি বাড়াতে অর্থাৎ বৈদেশিক অর্থছাড় বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ত্রি-পক্ষীয় বৈঠক করা হচ্ছে। এসব বৈঠকে প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ, উন্নয়ন সহযোগী এবং ইআরডির কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: