ঢাকা | মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

সোনার উৎপত্তি সম্পর্কে জানেন কি?

Akbar | প্রকাশিত: ২২ মে ২০১৯ ১৩:৪৭

Akbar
প্রকাশিত: ২২ মে ২০১৯ ১৩:৪৭

ডেস্ক: সোনা এক মহামূল্যবান ধাতু। চকচকে হলুদ রঙ সোনার একটি ভৌত বৈশিষ্ট্য। সোনা কেন এত মূল্যবান তার পেছনে কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত, এ ধাতুটি বেশ দুর্লভ। দ্বিতীয়ত, অন্যান্য সাধারণ ধাতুর মতো সোনা সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। তৃতীয়ত, সোনার বিদ্যুৎ পরিবহণ ক্ষমতা, নমনীয়তা অন্যান্য যেকোনো সাধারণ ধাতুর তুলনায় বেশি। এর গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, সোনার সৌন্দর্য! সব কথার সার কথা, সোনার সৌন্দর্য, চাকচিক্য ও ক্ষয়হীন বৈশিষ্ট্য একে অন্য সব ধাতুর থেকে অনন্য করেছে।
কাউকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, সোনা কীভাবে আসে? সে হয়তো এক বাক্যে উত্তর দেবে সোনা খনি থেকে উত্তোলন করা হয়। অনেকেই ডিসকভারি চ্যানেলের গোল্ড রাশ আলাস্কা দেখে বলে থাকবেন, কাদামাটির স্রোত থেকে সোনা পৃথক করা হয়। কিন্তু আসলেই কি তাই? যে ধাতুটি এত মূল্যবান, তার উৎপত্তি কি এতটাই সহজ? বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, সৌরজগৎ তৈরির বহু আগে এক সুপারনোভা ও নিউট্রন স্টারের সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীর যাবতীয় সোনার উদ্ভব হয়েছিল। সোনা উৎপত্তির সেই মহাজাগতিক প্রক্রিয়া বিজ্ঞানীদের কাছে আর-প্রোসেস নামে পরিচিত। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, পৃথিবী এমনকি সৌরজগৎ সৃষ্টির আগে সোনা তৈরি হয়ে থাকলে তা পৃথিবীতে এলো কীভাবে? উত্তরটা সহজ, পৃথিবীর অন্যতম গঠন উপাদান হলো এই সোনা। পৃথিবীর কেন্দ্র, যাকে ‘কোর’ বলা হয়ে থাকে, সেটি গঠিত হওয়ার সময় সময়ই তার অন্যতম গঠন উপাদান হিসেবে সোনা অন্তর্ভুক্ত হয়।

আবারো মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, তাহলে পৃথিবীর একদম গভীরে; একেবারে কেন্দ্রে যে বস্তু ছিল সেটা আমরা উদ্ধার করলাম কীভাবে? আমরা আসলে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে সোনা তুলে আনিনি, বরং বিভিন্ন সময় বিশেষ করে পৃথিবীর বয়স যখন কম, তখন এর সাথে বিভিন্ন গ্রহাণুর সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ভয়াবহ সংঘর্ষের কারণে ভূ-অভ্যন্তর থেকে অনেক সোনা আমাদের হাতের নাগালের দূরত্বে এসে পৌঁছেছে, যা আমরা এখন খনিতে গর্ত খুলে উত্তোলন করে থাকি। তাত্ত্বিকভাবে পারদ বা মারকিউরি থেকে নিউক্লিয়ার ফিউশন ও তেজস্ক্রিয় ক্ষয় বিক্রিয়ার সাহায্যে সোনা উৎপাদন করা সম্ভব। তবে পরীক্ষামূলকভাবে এমন চেষ্টা এখনো করা হয়নি। করা হলেও তা হবে অনেক খরচের বিষয়। তার চেয়ে কীভাবে নতুন সোনার খনি পাওয়া যায়, সেদিকে দৃষ্টি দেয়া অনেক সুবিধাজনক।

সূর্যের মধ্যে অনবরত ফিউশন বিক্রিয়ার ফলে বিভিন্ন পদার্থ উৎপন্ন হচ্ছে। তবে সূর্যের পক্ষে ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে সোনা উৎপাদন সম্ভব নয়, এ ধাতুটি তৈরিতে যে পরিমাণ শক্তি দরকার তা আমাদের সৌরজগতের সকল শক্তির আধার সূর্যের পক্ষেও সরবরাহ করা সম্ভব হয় না! এ শক্তি তখনই পাওয়া সম্ভব যখন কোনো সুপারনোভায় নক্ষত্রের বিস্ফোরণ ঘটে অথবা নিউট্রন স্টারের সাথে এর সংঘর্ষ হয়। শুধুমাত্র এমন পরিস্থিতিতেই নিউট্রন ক্যাপচার প্রোসেস বা আর-প্রোসেসের মাধ্যমে সোনার মত ভারী পরমাণুগুলো তৈরি হতে পারে। পৃথিবীর সকল সোনার উৎপত্তি হয়েছে মৃত নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষ থেকে। পৃথিবী সৃষ্টির সময় এর কেন্দ্রে লোহা ও সোনার মতো ভারী ধাতুগুলো আশ্রয় নেয়। তারপর থেকে সকল পরিস্থিতি শান্ত থাকলে আমরা কোনোদিনই সোনার সন্ধান পেতামনা।

আজ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর সাথে নিয়মিত বিভিন্ন গ্রহাণুর সংঘর্ষ হতো। এসব সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীর অনেক গভীর পর্যন্ত কেঁপে উঠত এবং বেশ কিছু সোনা পৃথিবীর উপরিভাগের স্তরগুলোতে এসে আশ্রয় নিত। বিভিন্ন আকরিক শিলাতেও সোনার সংমিশ্রণ থকতে পারে। বিভিন্ন শিলার মধ্যে খাদ হিসেবে সোনা ও রূপা মিশ্রিত থাকতে পারে। যখন ওই শিলার ক্ষয় হয়, তখন সেখান থেকে সোনা ও অন্যান্য ধাতুসমূহ অবমুক্ত হয়। সোনা অনেক ভারী হওয়ায় তা ডুবে যায় এবং কাদামাটির স্রোত অথবা সমুদ্রের স্রোতে অবস্থান করতে পারে। এছাড়া ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমেও প্রস্তরগাত্রে সোনা সঞ্চিত হতে পারে!

পৃথিবীতে কতটুকু সোনা রয়েছে?
পৃথিবীর কেন্দ্রে যে পরিমাণ সোনা সঞ্চিত রয়েছে তার কিয়দংশই উত্তোলন করা সম্ভব হয়েছে। ২০১৬ সালে ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) কর্তৃক প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয় সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩২০ টন সোনা উত্তোলন করা হয়েছে। এগুলোর ৮৫ শতাংশই পুনঃব্যবহার হয়ে আসছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। সোনা তার ভরের তুলনায় বেশি জায়গা দখল করেনা। ১ ঘনসেন্টিমিটার সোনার ওজন মাত্র ১৯ দশমিক ৩২ গ্রাম! পৃথিবী থেকে এযাবতকালে উত্তোলিত সব সোনা একত্রিত করলে তা মাত্র ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কিউবের আকৃতির হবে। পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরের ১ কিলোমিটারের মধ্যে আরো ১ লাখ মেট্রিক টন সোনা আছে বলে ধারণা করেন ভূতাত্ত্বিকরা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: