ঢাকা | মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

কাশ্মিরি নি’র্যাতিত নারীর হৃদয় বিদারক চিঠি

odhikar patra | প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০১৯ ০০:৫৯

odhikar patra
প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০১৯ ০০:৫৯

 



পৃথিবীর ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীর উপত্যকার রাজধানী শ্রীনগর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে আমার বাড়ি। আমিও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালামের কন্যা। আমি ছাড়া আমার স্বামী আব্দুর রশিদ ও একটি ছোট ছেলে খালেদুর রশীদ। এ তিনজন নিয়েই ছিল আমাদের ছোট সাজানো- গোছানো সংসার। আমাদের বাড়ির চতুর্দিক ছিল কাশ্মীরী আঙ্গুর ও আপেলের বাগানে ঘেরা।সবুজ নয়নাভিরাম নৈসর্গিক সুন্দরের প্রাচুর্য ছিল সারাটা এলাকা জুড়ে, যার জন্য কাশ্মীরকে বলা হতো পৃথিবীর ভূস্বর্গ।



হে মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ! আমার মত হাজারো নি’র্যা’তিতা বোন আপনাদের দিকে চেয়ে আছে; আপনাদের সহযোগিতার আশা করছে। আল্লাহ পাক না করুন, এমন অবস্থা যদি আপনাদের হাজারো বোনের হয়ে যায়, তাহলে ঠিকই আপনাদের ঘুম ভা’ঙ্গবে, চে’তনাও জাগবে।

পবিত্র সত্তার.ক’সম! নিজেদের শত মতবি’রোধ পেছনে ফেলে ঐক্যবদ্ধ হোন। জেগে উঠুন। সিং’হ শা’বকদের ভী’রু শৃগালের মত কাপু’রুষো’চিত জীবন শোভা পায় না।

জা’লেম ব্রাহ্মণ্যবাদের ভ’ন্ডামির আড্ডায় মুহম্মদ বিন কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত গর্জে উঠুন, ওদের কুঠারাঘাত হানুন ।এখনো সময় আছে, আপনার মুসলিম বোনদের ই’জ্জত রক্ষা করুন। এ দু’র্যোগেও যদি আপনার ঘুম না ভা’ঙ্গে, আপনার পৌ’রুষ’ত্বের ধমনীতে আ’গুন না লাগে, ব্যা’ঘ্র হুং’কার দিয়ে বেরিয়ে আসতে না পারেন তাহলে আপনার এ অ’চেতনতা, মনের দিবানি’দ্রা কোনদিন ভাং’বে না। বোধোদয় হবে না কোনদিন।

হে মুসলিম বিশ্বের শেরদিল ভ্রাতৃবৃন্দ! আপনার এক নি’র্যাতি’তা ভাগ্যাহ’তা বোনের নি’র্মম কাহিনী আপনাদের কাছে বিধৃত করছি।



১৯৯৩-এর ১৫ জুলাই। আমি আমার ছোট্ট নিষ্পাপ শিশু খালেদকে কোলে নিয়ে উঠানে বসেছিলাম। আমার স্বামী আব্দুর রশীদ বৈঠকখানায় তার এক বাল্য বন্ধুর সাথে আলাপ করছিলেন।

তার বাল্য বন্ধুটি পুরো এক বছর গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের বাড়ি বেড়াতে এসে আমার স্বামী আব্দুর রশীদকে জি’হাদী প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা শুনাচ্ছিল। এমন সময় আমার ছোট ভাই ঘরে প্রবেশ করে কুশল বিনিময়ের পর খালেদকে কোলে নিয়ে সোহাগ করতে লাগলো। খালেদ তার মামার কোলে খেলতে লাগলো।
মাগরিবের নামাযান্তে আমার স্বামী আব্দুর রশীদ এবং গোলাম মুহিউদ্দীন বৈঠকখানার ঘরে অনেক রাত পর্যন্ত আলাপ করে ইশার নামায পড়ে সেখানেই খাবার খেয়েছিলেন। অধিক রাতে শু’য়েও সবাই আযানের অনেক আগেই উঠে ফযরের নামাযের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আমিও অযু করে মাত্র আল্লাহ পাক উনার দরবারে সিজদা দিচ্ছি। এমন সময় পাশের বাড়ি থেকে ভেসে এল মেয়েদের কা’ন্নার রোল।



ভারতীয় জ’ঙ্গী ব’র্বর হা’য়েনারা পুরো গ্রাম অ’বরোধ করে লু’ট, স’ম্ভ’ম হ’রণ, হ’ত্যা আর অ’গ্নিসং’যোগে অল্পক্ষ’ণের মধ্যে ভূস্বর্গ তুল্য গ্রামটিকে ন’রকে পরিণত করে ফেললো। কয়েক শ’ বাড়িতে আ’গুন ধ’রিয়ে বিশজন মেয়ের শ্লী’লতা’হানি করে ৩০ জন মানুষকে হ’ত্যা করার পর যখন আমাদের ঘরে প্রবেশ করলো; তখন প্রথম তাদের উ’ন্মত্ত’তায় বাঁ’ধা পড়ল।

আমার দিকে হাত বাড়াতেই দেখতে দেখতে চারজন ভারতীয় সৈন্য গোলাম মুহিউদ্দীনের ক্লা’শনিকভের নি’শানায় পরিণত হয়ে মাটিতে লু’টিয়ে পড়ে। আমার স্বামীর হাতে ছিল পি’স্তল। আর ভাই আব্দুল হামিদ ক্লাশ’নিকভের ম্যা’গাজিন ভ’রে দিচ্ছিল। গোলাম মুহিউদ্দীনের প্রতিটি গু’লিতে একাধিক ভারতীয় জ’ঙ্গি ব’র্বর হা’য়েনা জা’হান্না’মের অ’তল গ’হ্বরে চলে যাচ্ছিল।

আমি তখন শিশুপুত্র খালিদকে বুকে জড়িয়ে তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় অ’কস্মাৎ একটা গু’লি আমার ভাই আব্দুল হামিদের মাথায় বি’দ্ধ হলে সে পড়ে গেল। সাথে সাথে সে শ’হীদ হয়ে গেল। এ সময় ভারতীয় জা’নোয়ারগুলো এলোপাথাড়ি গু’লি চালাতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যে স্বামী আব্দুর রশীদও চিরদিনের মত আমাদেরকে ছে’ড়ে জা’ন্নাতে চলে গেলেন ।

গোলাম মুহিউদ্দীন খালিদকে নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে আমাকে পালিয়ে যেতে বললেন, কিন্তু আমার পা এক ইঞ্চিও নড়লো না। দশ-বারোটা হা’য়েনা একসাথে ঘরে ঢুকে গোলাম মুহিউদ্দীনের বু’কে কয়েকশ’ বু’লেট বি’দ্ধ করলো। আমার চোখের সামনে বিদায় হয়ে গেলেন সবাই। ব’র্ব’র পা’ষ- জ’ঙ্গী হা’য়েনারা আমার কোল থেকে শিশুপুত্র খালিদকে ছিনিয়ে নিয়ে বু’টের আ’ঘাতে পি’ষে ফেললো, আর ঘরের সমস্ত মা’ল সম্পদ লু’টে নিল। চোখে অন্ধকার নেমে এলো ।ই’জ্জত রক্ষার্থে প্রাণপণ চেষ্টা করলাম। কিন্তু চারটি ভারতীয় হিং’স্র জানোয়ার একসাথে আমার ওপর ঝাঁ’পিয়ে পড়লো।

আমার প্রিয় ভাই! এরপর কী হতে পারে তা শুনলে আপনাদের চে’তনায় অবশ্যই আ’ঘাতলাগবে। ভি’জে যাবে চোখের পাতা।

বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ! কাশ্মীরের হাজারো বিপন্ন অসহায় বোন আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। যদি আপনাদের সা’হস না থাকে, যদি আপনাদের মধ্যে গাজী সালাহুদ্দীন আইউবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জজবার অ’ভাব হয়, মুহম্মদ বিন কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দীপ্ততেজ জমে গিয়ে থাকে, ভীরুতায় যদি আপনারা বুযদিল হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের হাতে ট্যাং’ক-অ’স্ত্র দিন; যেন আমরা নিজেরাই আমাদের ই’জ্জত রক্ষা করতে পারি।

এতো মাত্র একজন ম’জলুম বোনের আ’র্তনাদ। এমন হাজারো কাশ্মীরী বোন আজ লা’ঞ্ছিতা, নি’র্যাতি’তা। বর্ব’র পা’ষন্ড ভারতীয় স’ন্ত্রাসী হা’য়েনা’দের মুসলিম মা বোনদের স’ম্ভ্রমলু’ট, হ’ত্যা-নি’র্যা’তনে সন্তানহা’রা মা, স্বামী হা’রা বি’ধবা বোন, আর নি’পী’ড়িতা অসহায় রমণীর ফরিয়াদে কাশ্মীরের বাতাস ভা’রী হয়ে গেছে।

তারা আজ খাদ্য চায় না, বস্ত্র চায় না, চায় অ’স্ত্র। নিজেদের ই’জ্জত বাঁ’চিয়ে রাখার জন্য তাদের শুধুমাত্র একটু সাহায্যের প্রয়োজন। কাশ্মীরী নি’র্যাতি’তা হাজারো বোনের এ নি’ষ্করুণ আ’র্তনাদ আপনাদের কর্ণ কুহরে প্রবেশ করবে কী, প্রভাব ফেলবে কী আপনাদের মনে ? আমরা অসংখ্য নি’র্যা’তিত মুসলিম বোন চেয়ে রইলাম আপনাদের আগমন অপেক্ষায়।

সূত্রঃ পূর্বপশ্চিমবিডি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: