ঢাকা | মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২
কানাডায় গাজা সেবন বৈধ

গাঁজাখোরদের জন্য সু খবর

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২৩:০৪

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২৩:০৪

ক্যানাডা হবে প্রথম কোন শিল্পোন্নত দেশ যেখানে বিনোদনের জন্য গাঁজার ব্যবহার বৈধ করা হবে।

অবশ্য চিকিৎসায় রোগের উপশম হিসেবে এই দেশটি ২০১১ সালেই গাঁজা ব্যবহারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল।

ক্যানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, বিশেষভাবে তৃতীয় বৃহত্তম শহর ভ্যাঙ্কুভারে গাঁজা ব্যবহারের চল রয়েছে বহুদিন ধরে।

ভ্যাঙ্কুভারকে বলা হয় ক্যানাডার গাঁজার রাজধানী। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাঁজার ফার্মও রয়েছে এই শহর থেকে সামান্য দূরে ফ্রেজার ভ্যালিতে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তের কাছাকাছি এটি।

হিলারি ব্ল্যাক হলেন ক্যানোপি গ্রোথ-এর রোগীদের শিক্ষা এবং প্রচার বিভাগের পরিচালক।

ক্যানোপি গ্রোথ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে গাঁজা চাষে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানি।

তিনি বলছেন, একবার এক মহিলার সাথে তার দেখা হয়েছিল। আর্থ্রাইটিস রোগে তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। তিনি তার বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং একসাথে বসে গাঁজা খেয়েছিলেন। ঐ রোগীর ওপর গাঁজার প্রতিক্রিয়া ছিল বিস্ময়কর।

সেবনের কিছুক্ষণ পর তিনি তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করতে শুরু করলেন। হাত-পা ছড়িয়ে দিতে শুরু করলেন। এবং তিনি কেঁদে ফেললেন।

আইন তাকে এতদিন এই ভেষজ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে এটা মনে করে তিনি খুবই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন বলে জানালেন হিলারি ব্ল্যাক।

গাঁজা ফার্মের পরিবেশ খুবই নিয়ন্ত্রিত। এখানে ঢুকতে হলে উপযুক্ত পোশাক পড়তে হয়, মাথায় নেট পড়তে হয়, বুট এবং গ্লাভস পড়তে হয়।

 

এই ফার্মে প্রায় এক লক্ষ টব রয়েছে যেখানে বিভিন্ন বয়সের গাঁজা গাছের চারা রয়েছে।

মাথার ওপর দিনরাত জ্বলছে হাজার হাজার ইলেকট্রিক বাল্ব। দিনের মতো আলো ছড়াচ্ছে এগুলো।

আর রয়েছে বহু ধরনের টিউব, যেগুলো থেকে গাঁজা গাছে পানি, তরল পুষ্টি এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড সরবরাহ করা হচ্ছে।

রোগ উপশমে কিভাবে গাঁজা ব্যবহার করা হচ্ছে তা দেখা গেল ভ্যাঙ্কুভার থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে এক মেডিকেল ক্লিনিকে।

দেখা হলো এক রোগীর সাথে। তিনি জানালেন তার নাম লিন জনস্টন।

সারাটা জীবন তিনি কাটিয়েছেন ব্যথার মধ্য দিয়ে।

তার বয়স যখন ১৩ তখন তার মা তাকে নিয়ে যান কাইরোপ্র্যাকটরের কাছে। কিন্তু তাতেও কোন ফল হয়নি।

লিন জনস্টনের বয়স এখন ৫৮। মাত্র ২০১৫ সালে তার রোগের সফল ডায়াগনোসিস হয়েছে।

তাকে জানানো হয়েছে যে তার শরীরে তিন ধরনের আর্থ্রাইটিস রয়েছে।

এই রোগে যে ব্যথা, তা সহ্য করা কঠিন। আর্থ্রাইটিস মানুষকে একেবারে দুর্বল করে ফেলে বলে তিনি বললেন।

এই ক্লিনিকের চিকিৎসা বিভাগের পরিচালক হলেন ড. ক্যারোলাইন ম্যাকালাম।

শরীরের জটিল ব্যথা, বিশেষভাবে যে ব্যথার কোন চিকিৎসা নেই, সেই ধরনের কেসে তিনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন।

তিনি বলছিলেন, তাদের অফিসে এমন রোগীও আসেন যারা নানা ধরনের চিকিৎসা করেও কোন ফল পাননি।

Image copyright AFP চিকিৎসায় ব্যবহৃত গাঁজার প্যাকেট।
Image caption চিকিৎসায় ব্যবহৃত গাঁজার প্যাকেট।
তাদের চোখের সামনে এই রোগীরা ব্যথায় কাতরাতে থাকেন। তাদের কী হয়েছে তা জানা যায় না, তাদের কী চিকিৎসা দেয়া যায়, তাও তারা জানেন না।

তখন তাদের ভাবতে হয় যে তারা কী সত্যি রোগীদের কোনভাবে সাহায্য করতে পারছেন?

গাঁজা আইনসিদ্ধ করার ফলে যেসব সমস্যা তৈরি হতে পারে, তা দূর করার লক্ষ্যে নিয়ে ক্যানাডার সরকার বড় ধরনের প্রচারাভিযান শুরু করেছে।

জাতীয় জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে ৭০% ক্যানাডিয়ান গাঁজাকে আইনসিদ্ধ করার পক্ষে।

যারা সরকারের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন, তারাও গাঁজার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার পক্ষপাতী।

তারা বলছেন, গাঁজা সেবনের ওপর আইনটি সঠিকভাবে তৈরি করতে হবে।

ইওনা মার্টিন ক্যানাডার সংসদের উচ্চকক্ষ সেনেটে কনজারভেটিভ পার্টির উপ প্রধান।

তিনি বলছেন, এই খসড়া আইনের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের তরুণ সমাজকে রক্ষা করা।

টরন্টোর সাবেক পুলিশ প্রধান বিল ব্লেয়ার একজন এমপি।

তাকে বিবিসির সংবাদদাতা জিজ্ঞেস করেছিলেন, তারা কী পরিস্থিতি ভালর দিকে না নিয়ে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন?

মি. ব্লেয়ার জবাবে বলেন, তারা শুধু এই মাদককে বৈধই করছেন না। নতুন আইনের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়ে এর উৎপাদন, বিক্রি এবং বণ্টনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে যাচ্ছেন।

তারা একই সাথে নিশ্চিত করতে চাইছেন যে এই মাদক যেন শিশুদের কাছে বিক্রি করা না হয়।

আগে আইন না থাকায় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব ছিল না বলে তিনি জানান।

গাঁজার ব্যবহার বৈধ করার প্রশ্নে ক্যানাডার এই পরীক্ষানিরীক্ষা কতখানি সফল হয় সে দিকে তাকিয়ে থাকবে সারা বিশ্ব।

ক্যানাডার নেতারাও সেটি বোঝেন। সুতরাং, তারা যাতে সফল হতে পারেন, সেই চেষ্টাই তারা করবেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: