ঢাকা | মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
জলবায়ু পরিবর্তন

জাতিসংঘের 'রেড-অ্যালার্ট' পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে

odhikar patra | প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:৫৪

odhikar patra
প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:৫৪

 

২১০০ সাল নাগাদ সাগর-পৃষ্ঠের উচ্চতা ১.১ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।২১০০ সাল নাগাদ সাগর-পৃষ্ঠের উচ্চতা ১.১ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

জাতিসংঘের একটি বিজ্ঞানী প্যানেল হুঁশিয়ার করেছে - মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের পরিণতিতে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন দ্রুত হারে সাগর-পৃষ্টের উচ্চতা বাড়ছে এবং বরফ গলছে।

সেই সাথে, জীব-জন্তুর বিভিন্ন প্রজাতি তাদের আবাসস্থল বদলাচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বরফের আচ্ছাদন বিলীন হওয়ার কারণে কার্বন নি:সরনের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। যার ফলে, পরিস্থিতি দিনকে দিন বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে।

আইপিসি বা জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্যানেলের সর্ব-সাম্প্রতিক একটি বিশেষ রিপোর্টে এসব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গত এক বছরের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এটি তাদের তৃতীয় রিপোর্ট।

এর আগে বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেছেন, এই শতকের শেষভাগে গিয়ে যদি বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫ শতাংশ বেড়ে যায়, তার পরিণতি কী হতে পারে।

সর্বশেষ এই রিপোর্টে দেখা হয়েছে, তাপমাত্রার বাড়ার কারণে সমুদ্র এবং বরফে আচ্ছাদিত অঞ্চলের ওপর তার প্রভাব কী হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা এবার যা পেয়েছেন, তা আগের রিপোর্টগুলোর তুলনায় অনেক বেশি ভীতিকর।

কী পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা এবং তা কতটা খারাপ

যেভাবে বেড়ে যেতে পারে সাগর-পৃষ্ঠের উচ্চতা
যেভাবে বেড়ে যেতে পারে সাগর-পৃষ্ঠের উচ্চতা

খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে - সাগর-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে, বরফ গলছে দ্রুতহারে, এবং এর প্রভাব পড়ছে পুরো বিশ্বের প্রাণীজগতের ওপর।

"ব্লু-প্ল্যানেট (পৃথিবী) এখন মহা-সঙ্কটে। বিভিন্ন দিক থেকে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, এবং এর জন্য আমারাই দায়ী।," বলছেন ড. জ্যঁ পিয়ের গুাত্তুসো, যিনি এই রিপোর্টের প্রধান প্রণেতা।

বিজ্ঞানীদের এখন কোনো সন্দেহ নেই যে সাগর-মহাসাগরে উষ্ণতা ১৯৭০ সাল থেকে অব্যাহত-ভাবে বাড়ছে।

মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের ফলে পরিবেশে যে বাড়তি তাপ তৈরি হচ্ছে, তার ৯০ শতাংশই শুষে নিচ্ছে সাগর। ১৯৯৩ সাল থেকে শুষে নেওয়ার এই মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে।

সেই সাথে গলছে গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকার বরফ। বাড়ছে সাগর পৃষ্ঠের উচ্চতা

২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যে হারে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলেছে তার আগের ১০ বছরের তুলনায় তিনগুণ।

অ্যান্ডিজ, মধ্য ইউরোপ এবং উত্তর এশিয়ায় যেসব হিমবাহ রয়েছে, সেগুলোর বরফ ২১০০ সাল নাগাদ ৮০ শতাংশ গলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বরফ গলার পরিণতি কী

বরফ গলা পানি গিয়ে পড়ছে সাগরে। ফলে, আগামী দশকগুলোতে সাগর-পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েই চলবে।

আইপিসিসির নতুন এই রিপোর্টে বলা হয়েছে ২১০০ সাল নাগাদ সাগর-পৃষ্ঠের উচ্চতা ১.১ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

আগের ধারণার চেয়ে এই উচ্চতা ১০ সেমি বেশি।

ড. গাত্তুসো বলছেন, "নিচু জায়গাগুলোতে সাগরের উচ্চতা বাড়ার পরিণতি হবে ব্যাপক। ৭০ কোটি মানুষ এরকম নিচু উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করে। ফলে বিষয়টি খুবই উদ্বেগের।"

বরফ গলছে আশংকজনক হারেবরফ গলছে আশংকজনক হারে

আপনার ওপর এর প্রভাব কী হবে?

কার্বন নির্গমন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা যদি বেশি হয়, তাহলে নিউ ইয়র্ক বা সাংহাইয়ের মত বিত্তশালী নগরগুলোও সাগর-পৃষ্টের উচ্চতা বাড়ার কারণে ঝুঁকিতে পড়বে।

রিপোর্টে সাবধান করা হয়েছে - সাগরে তাপ বাড়ার ফলে আবহাওয়া দিনকে দিন বিপজ্জনক আচরণ করবে। সামুদ্রিক ঝড় বেশি হবে, জলোচ্ছ্বাস বাড়বে।

বিধ্বংসী জলোচ্ছ্বাসের নজির ইতিহাসে খুবই কম। শত বছরে গড়ে একটি করে এরকম দুর্যোগ হয়। কিন্তু নতুন এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের বেশ কিছু জায়গায় খুব বড় মাসের জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

"আমরা নজিরবিহীন কিছু বিপদের ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি," বলছেন আইপিসিসি প্যানেলের অধ্যাপক ডেরা রবার্টস।

"আপনি যদি স্থলভাগের খুব ভেতরেও বসবাস করেন, তাহলেও সাগর এবং পরিবেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আপনি নিরাপদে থাকতে পারবেন না।"

যেভাবে আপনার জীবনযাপন প্রভাবিত হতে পারে - বন্যার ক্ষতির মাত্রা দুই থেকে তিনগুণ বাড়তে পারে। সাগরের তাপমাত্রা বাড়ার ফলে ৯০ শতাংশ প্রবাল বিলীন হয়ে যেতে পারে।

সাগরের তাপমাত্রার বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে মাছ এবং জলজ উদ্ভিদের ওপর। মাছের শরীরে ভেতর পারদের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ায় জলজ প্রাণী আবাসস্থল বদলাবে। মাছের দেহে পারদের মাত্রা বাড়বে।

রিপোর্টে কোনো আশাবাদ কি রয়েছে?

কিছু আশাবাদ তো অবশ্যই রয়েছে।

রিপোর্ট বলা হয়েছে যে সাগরের ভবিষ্যৎ এখনও আমাদের হাতে রয়েছে।

কিন্তু তার জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে এখনকার তুলনায় কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমপক্ষে ৪৫% কমাতে হবে।

আইপিসিসি প্যানেলের চেয়ারম্যান হোসুং লি বলেছেন, "কার্বন নির্গমনের মাত্রা অনেক কমালেও চরম ঝুঁকির মধ্যে থাকা মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা চ্যালেঞ্জিং হবে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এর জন্য রাজনীতিকদের ওপর জনগণের চাপ বাড়ানো খুবই জরুরি।

বিবিসি 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: