odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫

রোগীদের গর্ভে চিকিৎসকের সন্তান!

Admin 1 | প্রকাশিত: ৮ June ২০১৭ ২৩:৫১

Admin 1
প্রকাশিত: ৮ June ২০১৭ ২৩:৫১

সন্তান হয় না—এমন দম্পতিরা নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত এক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) করানোর জন্য নারীরা নিজেরাই স্বামী বা শুক্রাণুদাতাকেও নিয়ে আসতেন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দেখা গেল, সন্তান দেখতে তার বাবার মতো নয়, হুবহু ওই চিকিৎসকের মতোই। এমন একজন নারী নয়, অনেক নারী এ অভিযোগ করেছেন। কারণ, ওই চিকিৎসক নির্দিষ্ট দাতার শুক্রাণুর পরিবর্তে রোগীর গর্ভে নিজের শুক্রাণু প্রতিস্থাপন করতেন।

মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, নেদারল্যান্ডসের আইভিএফ বিশেষজ্ঞ জ্যঁ কারবাতের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার এ অভিযোগ দায়ের করেছেন ২২ জন অভিভাবক ও তাঁদের সন্তানেরা। কারবাত ওই হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন। রটারডাম আদালতে অভিযোগকারীরা কারবাতের ডিএনএ পরীক্ষা করানোর আবেদন করেছেন। তবে চিকিৎসক কারবাত আর পৃথিবীতে নেই। গত মাসে ৮৯ বছর বয়সে মারা গেছেন তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কারবাত কয়েক দশক ধরে ডাচ ফার্টিলিটি সেন্টার নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন। রোগীদের গর্ভে শুক্রাণু বদলের ঘটনা তিনি হয়তো অনেক আগে থেকেই করতেন।

বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতালটি চালু থাকা অবস্থায় কারবাতের শুক্রাণু দিয়ে ৬০ জন সন্তানের জন্ম হয়েছে।

অভিযোগ জানানো নারীদের মধ্যে ৩৬ বছর বয়সী মনোবিদ মনিয়েক ওয়াসেনার আছেন। তিনি নিজেকে জ্যঁ কারবাতের শুক্রাণুর কারণে জন্ম নেওয়া সন্তান হিসেবে দাবি করেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে বিচারক ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দেবেন। আহলে নিশ্চিত হতে পারব, আসলেই আমরা তাঁর (কারবাত) সন্তান কি না।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজেদের জ্যঁ কারবাতের শুক্রাণুর কারণে জন্ম নেওয়া সন্তান হিসেবে দাবি করা নারী ও পুরুষের সংখ্যা ১২ জন। তাঁদের বয়স আট থেকে ৩৬ বছর। আর কারবাতের তত্ত্বাবধানে আইভিএফ পদ্ধতিতে মা হওয়া ১০ নারীর সন্তানেরা এখনো অনেক ছোট। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কারবাত রটারডেমের কাছে একটি শুক্রাণু ব্যাংক পরিচালনা করতেন। তাঁর ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে প্রায় ১০ হাজার সন্তানের জন্ম হয়েছে। ২০১৫ সালে নীতিগত কারণে ওই হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মনিয়েক ওয়াসেনার বেশ কয়েক বছর আগে বাড়িতে চিকিৎসক কারবাতের ছবি দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। দেখতে প্রায় একই রকম তাঁরা। এ থেকে তিনি নিশ্চিত হন কারবাতই তাঁর জন্মদাতা বাবা। একদিন কারবাতের সঙ্গে দেখাও করেছেন তিনি। সব বলার পর কারবাত তাঁকে বলছিলেন, ‘তোমার হাত দেখাও, সম্ভবত তুমি আমারই সন্তান হবে।’ এরপর কারবাতকে তিনি ডিএনএ পরীক্ষা করানোর কথা বলেন। কিন্তু কারবাত অস্বীকার করেন। এরপর আর খোঁজ নেননি মনিয়েক। সম্প্রতি আরও অনেকেই একই অভিযোগ তুললে বিষয়টি জোরদার হয়ে ওঠে। সন্দেহ থেকে দুই নারী তাঁদের সন্তানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন, তাঁদের দুজনের সন্তান হাফ বায়োলজিক্যাল ব্রাদার। তাঁরাও সোচ্চার হয়ে ওঠেন। মনিয়েক তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়ে মামলা করেন।

শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক একটি সংস্থার আইনজীবী লরা বস। তিনিই এই মামলাটি পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, ‘দাতার শুক্রাণু থেকে জন্ম নেওয়া শিশুদের সমাজে অন্য শিশুদের মতোই একই ধরনের অধিকার রয়েছে। আমরা একটি মামলা করেছি। কারণ, সমাজে তাঁর প্রকৃত বাবার পরিচয় জানার অধিকার আছে।’

মনিয়েক ওয়াসেনার বলেন, ‘আমার ধারণা, আমি তাঁর (কারবাত) সন্তান। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হবই, এটা আমার বিশ্বাস।’

ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডাম একাডেমিক মেডিকেল সেন্টারের সেন্টার ফর রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিন বিভাগের প্রধান সোয়েরড রেপিং বলেন, ২০০৪ সালে নেদারল্যান্ডসে একটি আইন পাস হয়েছে। ওই আইনে বলা হয়েছে, শুক্রাণুদাতার শুক্রাণু থেকে কোনো সন্তানের জন্ম হলে ওই সন্তানের বয়স ১৬ বছর হলেই তাকে তা জানাতে হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: