odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Wednesday, 19th November 2025, ১৯th November ২০২৫

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্টের পদ আঁকড়ে রাখতে চান লি পেন

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১ April ২০২৫ ২২:৪৫

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১ April ২০২৫ ২২:৪৫

আদালতের নির্দেশে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ফরাসি প্রেসিডেন্ট লি পেন মঙ্গলবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট পদে জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে লড়াই করেছেন।

ইইউ পার্লামেন্টে তার ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) দলের পক্ষ থেকে ভূয়া চাকরি তৈরির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর দণ্ডিত লি পেনকে হতবাক করে দেয়। কারণ, বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার নির্দেশ দেন। তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এই শাস্তি ফরাসি রাজনীতিতে এক নতুন ঝড় হিসেবেও এসেছিল এবং বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ মামলার বিচারকদের বিরুদ্ধে দেওয়া হুমকির নিন্দা জানিয়েছে।

যদি এটি বহাল থাকে, তাহলে তাদের রায়ের অর্থ হবে লি পেন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রচারণা চালাতে পারবেন না। যদিও  বিশ্লেষকরা বলেছেন, ২০২৭ সালের নির্বাচন হবে তার জন্য সেরা সুযোগ।

একটি টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন আপিল আদালতের রায় বাতিল করার জন্য এখনো সময় আছে।

যদি তিনি নির্র্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, তাহলে আরএন পার্টির নেতা জর্ডান বারডেলা (২৯) সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন। লি পেন বলেছেন, তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার ‘সক্ষমতা’ আছে।

আন্তর্জাতিক উষ্ণ পরিবেশে ক্রেমলিন বিলিয়নিয়ার টাইকুন ইলন মাস্ক এবং হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান থেকে শুরু করে নেদারল্যান্ডসের গির্ট ওয়াইল্ডার্স পর্যন্ত কট্টর ডানপন্থী ইউরোপীয় রাজনীতিবিদরা এই রায়ের নিন্দা জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনও এই বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে আগ্রাসী ও দুর্নীতিগ্রস্ত আইন চালু রয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে লোকজনকে বাদ দেওয়া বিশেষভাবে উদ্বেগজনক’।

প্যারিসের আদালত লি পেনকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। দুই বছরের কারাদণ্ড স্থগিত করা হয়েছে এবং বাকি দুই বছর একটি ইলেকট্রনিক ব্রেসলেটসহ কারাগারের বাইরে কাটাতে হবে।

লি পেনসহ চব্বিশ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। সকলেই আরএন পার্টির কর্মকর্তা বা সহকারী।
সোমবার রাতে টিএফ-১ নেটওয়ার্কের সাথে এক ঝাঁঝালো  সাক্ষাৎকারে লি পেন বলেছেন, তিনি ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের’  বিরুদ্ধে আপিল করবেন এবং অঙ্গীকার করেছেন, ‘কোনোভাবেই’  তিনি রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর নেবেন না।

তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজেকে এভাবে নির্মূল হতে দেব না। আমি যতটা সম্ভব আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো। একটি ছোট পথ আছে। এটি অবশ্যই সংকীর্ণ, কিন্তু এটি বিদ্যমান’।

লি পেন বলেছেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ আপিল করা হবে এবং বিচার বিভাগের ‘এগিয়ে যাওয়া উচিত’।

২০২৭ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য নিজেকে ‘জনপ্রিয়’ হিসেবে বর্ণনা করে লি পেন রায় প্রদানকারী বিচারককে উদ্দেশ্যে করে বলেছেন, ‘আমি মেরিন লি পেনকে নির্বাচিত করতে চাই না’ এবং ‘আমরা যে অনুশীলনগুলোকে কর্তৃত্ববাদী শাসনের জন্য বলে মনে করতাম’ তার তীব্র সমালোচনা করেন।

লি পেন বলেছেন,  ‘আমি আপিল করব কারণ আমি নির্দোষ’ এবং স্বীকার করেছেন যে, পরিস্থিতি এখন যেভাবে দাঁড়িয়েছে তাতে মনে হচ্ছে ‘আমি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বাদ পড়েছি’।

বিচারক কারাদণ্ড ঘোষণার আগেই লি পেন আদালত ত্যাগ করেন এবং তার দলের প্যারিস সদর দপ্তরে একটি সংকট সভা ডাকা হয়।

২০২৪ সালের আইনসভা নির্বাচনের পর থেকে আরএন ফ্রান্সের পার্লামেন্টে এককভাবে সবচেয়ে বড় দল। জরিপে দেখা গেছে, লি পেন ২০২৭ সালের প্রথম রাউন্ডের ভোটে সহজেই এগিয়ে যাবেন এবং দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রবেশ করবেন।

সাংবিধানিকভাবে দুই মেয়াদের সীমার কারণে বর্তমান রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

মস্কোর প্রতিক্রিয়া ছিল দ্রুত, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ইউরোপীয় রাজধানী গণতান্ত্রিক রীতিনীতি লঙ্ঘনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।’

টেসলার বিলিয়নিয়ার মালিক ইলন মাস্ক, যিনি জার্মানিতে একটি অতি-ডানপন্থী দলকে সমর্থন করেছেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, বলেছেন এই পদক্ষেপ ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনি আক্রমণের মতোই বিপরীতমুখী হবে’।

ফ্রান্সে, ডানপন্থী রিপাবলিকানদের সংসদীয় নেতা লরেন্ট ওয়াউকিয়েজ বলেছেন, ‘রাজনৈতিক বিতর্কের নিষ্পত্তি ব্যালট বাক্সে হওয়া উচিত‘।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি এএফপিকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেরু এই রায়ে ‘বিচলিত’।

বিচার বিভাগের সুপ্রিম কাউন্সিল, যারা বিচারকদের নামকরণ এবং আচরণ পর্যবেক্ষণ করে, একটি বিরল বিবৃতি জারি করে মামলায় বিচারকদের বিরুদ্ধে ‘মারাত্মক হুমকি’ দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছে।

এটি ‘বিচারিক কর্তৃপক্ষের স্বাধীনতা’ সমালোচনার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিচারমন্ত্রী জেরার্ড ডারমানিনও বিচারকদের বিরুদ্ধে ‘অগ্রহণযোগ্য’ হুমকির নিন্দা করেছেন।

২০১১ সালে লি পেন তার বাবা জিন-মেরি লি পেনের কাছ থেকে প্রাক্তন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এফএন) এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তারপর থেকে এর ভাবমূর্তি পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। জানুয়ারিতে মারা যাওয়া তার বাবাকে প্রায়শই বর্ণবাদী এবং ইহুদি-বিরোধী মন্তব্য করার জন্য অভিযুক্ত করা হতো। 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: