odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Thursday, 13th November 2025, ১৩th November ২০২৫

বিখ্যাত সাময়িকী ‘পারসিয়ানা’-এর ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে?

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১৪ September ২০২৫ ১৯:৫৫

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১৪ September ২০২৫ ১৯:৫৫

এই বছর অক্টোবরে ভারতের প্রভাবশালী পার্সি সাময়িকী পার্সিয়ানা ৬০ বছরের পথচলার ইতি টানছে। তার মানে আগামী অক্টোবর থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পার্সি সম্প্রদায়ের জীবন, সংস্কৃতি ও বিতর্কিত ইস্যুগুলোকে সাহসের সঙ্গে তুলে আনার জন্য পরিচিত এই পত্রিকার বন্ধ হয়ে যাওয়া পার্সি সমাজে এক গভীর শূন্যতা তৈরি করেছে। ১৯৬৪ সালে চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী পেস্টনজি ওয়ার্ডেনের হাত ধরে শুরু হয়েছিল পার্সিয়ানা। প্রথমদিকে এটি ছিল মূলত প্রবন্ধভিত্তিক, যেখানে পার্সি লেখকদের লেখা বা ওয়ার্ডেনের চিকিৎসা-বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশিত হতো। ১৯৭৩ সালে মাত্র এক রুপিতে পত্রিকাটি কিনে নেন জেহাঙ্গির প্যাটেল। এরপর তিনি এটিকে রূপ দেন পূর্ণাঙ্গ সাংবাদিকতামূলক সাময়িকীতে।

পত্রিকার প্রথম দিকেই কমিউনিটির উচ্চ বিবাহবিচ্ছেদের হার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আলোড়ন তোলে। পরে আন্তঃধর্মীয় বিবাহের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে আরও বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল পার্সিয়ানা— যা ছিল পার্সি সমাজে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে শুধুই বিতর্ক নয়, পত্রিকাটি ধারাবাহিকভাবে আলোচনায় এনেছে কমিউনিটির জনসংখ্যা হ্রাস, টাওয়ার অব সাইলেন্সের সংকট, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পরিবর্তন এবং বিশ্বব্যাপী পার্সি সাফল্যের গল্প। সম্প্রতি এটি কাভার করেছে মুম্বাইয়ের আলপাইওয়ালা মিউজিয়ামের উদ্বোধন, যা বিশ্বের একমাত্র পার্সি জাদুঘর। আজ ৮০ বছর বয়সী সম্পাদক জেহাঙ্গির প্যাটেল জানান, দীর্ঘ ছয় দশকের পর অর্থসংকট সাথে সাবস্ক্রাইবার কমে যাওয়া এবং উত্তরসূরি না থাকায় তারা পত্রিকা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমানে প্রায় ১৫ সদস্যের টিমের অধিকাংশই ৬০–৭০ বছরের প্রবীণ সাংবাদিক যারা একসঙ্গে বিদায় নিতে যাচ্ছেন।এটি একটি দুঃখজনক মুহূর্ত। আমরা হয়তো অফিসে একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করব, কিন্তু কোনও কেক বা উদযাপন নয়,” বলেন প্যাটেল। পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বিশ্বজুড়ে পার্সি পাঠকরা আবেগঘন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। মুম্বাইয়ের এক পাঠক লিখেছেন, এত ছোট একটি সম্প্রদায়কে এত দক্ষতা ও আবেগ নিয়ে তুলে ধরা সত্যিই বিস্ময়কর। পার্সিয়ানা সেটি করে দেখিয়েছে।

পাকিস্তান থেকে এক পাঠক জানিয়েছেন, এটি শুধুমাত্র একটি প্রকাশনা নয়, বরং ছিল বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা জরথুষ্ট্রীদের মধ্যে এক সেতুবন্ধন। আরেকজন মার্কিন পাঠক বলেছেন, পার্সিয়ানা শুধু খবরই দেয়নি, বরং কঠিন বিষয়গুলোতেও বাস্তবতার ছোঁয়া দিয়েছে। পুরনো ভবনে গাদাগাদি করে রাখা আর্কাইভ, দেয়ালের খসে পড়া রঙ আর ভাঙা ছাদের নিচে চলতে থাকা এই যাত্রার সমাপ্তি ঘটছে শীঘ্রই। তবু শেষ ক’টি সংখ্যায় পত্রিকাটি তুলে ধরবে নিজের দীর্ঘ পথচলার স্মৃতি ও ঐতিহ্যের দলিল। “এটি সত্যিই এক যুগের অবসান,” বলেছেন ১৮ বছর বয়সী পাঠক সুশান্ত সিংহ। “আমরা মজা করে বলতাম- পার্সিয়ানা না জানলে কেউ আসল পার্সি নয়।” ষাট বছরেরও বেশি সময় ধরে পার্সি সমাজের ইতিহাস, বিতর্ক, আনন্দ ও দুঃখের সাক্ষী হয়ে থাকা পার্সিয়ানা বন্ধ হয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে এক যুগের সমাপ্তি। এটি শুধু একটি সাময়িকী নয়, বরং ছিল বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পার্সিদের জন্য স্মৃতি, সংযোগ আর পরিচয়ের সেতুবন্ধন। আগামী দিনে পার্সিয়ানা আর ছাপা হবে না, কিন্তু এর পাতায় লিপিবদ্ধ কাহিনি ও সাহসী সাংবাদিকতা প্রমাণ করে যাবে- একটি ছোট্ট সম্প্রদায়ের কণ্ঠও কত বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

-লেখক: মো. সাইদুর রহমান বাবু, স্পেশাল করোসপন্ডেন্টস, অধিকারপত্র

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: