
✍️ সম্পাদকীয়:
বাংলাদেশের জাতীয় খেলা—কাবাডি। একসময় গ্রামবাংলার মাঠে মাঠে ছিল তার দাপট, ছিল তার গর্জন। ধুলো উড়িয়ে, শ্বাস আটকে, "কাবাডি কাবাডি" ধ্বনিতে মুখরিত হতো বাংলার বিকেল। অথচ আজ, সেই কাবাডি যেন রাষ্ট্রীয় স্মৃতির গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে। নেই কোনো বার্ষিক রাষ্ট্রীয় আয়োজন, নেই কোনো সম্মাননা, নেই কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা। জাতীয় খেলা হয়েও যেন জাতীয় অবহেলার শিকার।
যেখানে ক্রিকেটে কোটি কোটি টাকা ঢালা হয়, ফুটবলে বিদেশি কোচ আনা হয়, সেখানে কাবাডি পড়ে থাকে কোণায়। খেলোয়াড়রা অনুশীলন করেন নিজেদের খরচে, পুরস্কার পান না, স্বীকৃতি পান না। যেন তারা খেলছেন, কিন্তু কেউ দেখছে না। যেন তারা লড়ছেন, কিন্তু কেউ শুনছে না।
জাতীয় খেলা মানে শুধু একটি খেলার নাম নয়—তা একটি জাতির আত্মপরিচয়, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য। কাবাডি সেই পরিচয়ের প্রতীক, যা বাংলার মাটি থেকে জন্ম নিয়েছে। অথচ আজ, সেই খেলাকে ঘিরে নেই কোনো রাষ্ট্রীয় ভালোবাসা। নেই কোনো কাবাডি দিবস, নেই কোনো জাতীয় প্রতিযোগিতা, নেই কোনো মিডিয়া কাভারেজ।
এই নীরবতা কি কেবল অবহেলা? নাকি আমাদের মূল্যবোধের সংকট? কাবাডি শুধু একটি খেলা নয়, এটি বাংলার প্রাণ। এটি সেই খেলা, যেখানে শারীরিক শক্তি, কৌশল, সাহস ও ঐক্য একসাথে মিশে যায়। এটি সেই খেলা, যা বাংলার প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি স্কুলে, প্রতিটি মাঠে একসময় ছিল জীবনের অংশ।
আজ প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ, প্রয়োজন কাবাডিকে ঘিরে পরিকল্পনা, প্রয়োজন খেলোয়াড়দের সম্মান। প্রয়োজন সেই গর্জন ফিরিয়ে আনা—"কাবাডি কাবাডি" যেন আবার বাংলার মাঠে মুখরিত হয়।
জাতীয় খেলা কাবাডি যেন আর কাবারতি না হয়। রাষ্ট্রের উচিত তার ছেঁড়া জার্সি সেলাই করে, গর্বের পতাকা উড়ানো। কারণ কাবাডি শুধু খেলা নয়, এটি আমাদের শিকড়।
লেখক: অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান লিটু, উপদেষ্টা সম্পাদক, odhikarpatranews@gmail.com
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: