odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Thursday, 13th November 2025, ১৩th November ২০২৫
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৪৬তম জন্মজয়ন্তিতে বাংলাদেশে কোনো সরকারি অনুষ্ঠান রাখা হয়নি। সমাজ সংস্কারক ও নারীশিক্ষার পথিকৃৎ এই মহাপুরুষের প্রতি রাষ্ট্রীয় অবহেলা প্রশ্ন তুলছে জাতীয় স্মৃতিচর্চায় আমাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে।

দয়ার সাগরে বিস্মৃতির ঢেউ: বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে রাষ্ট্রের নীরবতা

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৩ September ২০২৫ ২৩:৫৮

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৩ September ২০২৫ ২৩:৫৮

সংবাদপ্রতিবেদন

১৪৬ বছর আগে, বাংলার এক নিভৃত গ্রামে জন্মেছিলেন এক আলোকবর্তিকা—ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ – ২৯ জুলাই ১৮৯১)। যাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জ্ঞান, দয়া, সংস্কার ও সাহস। যিনি ছিলেন একাধারে পণ্ডিত, সমাজ সংস্কারক, নারীশিক্ষার পথিকৃৎ, এবং বাংলা গদ্যের নবজন্মদাতা। অথচ আজ, তাঁর জন্মদিনে বাংলাদেশ রাষ্ট্র যেন নিঃশব্দে বসে আছে—নেই কোনো সরকারি অনুষ্ঠান, নেই কোনো শ্রদ্ধাঞ্জলি, নেই কোনো আলোচনার আয়োজন। যেন বিস্মৃতির ছায়া ঢেকে দিয়েছে দয়ার সাগরের দীপ্ত স্মৃতি।

বিদ্যাসাগর ছিলেন সেই মানুষ, যিনি বিধবা বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দিতে লড়েছেন, যিনি বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন, যিনি নিজের অর্থ দিয়ে স্কুল গড়েছেন, যিনি নিজের দারিদ্র্য ভুলে অন্যের দুঃখ মোচনে এগিয়ে এসেছেন। তাঁর গদ্য ছিল যেমন মধুর, তেমনি তীক্ষ্ণ। তাঁর চরিত্র ছিল যেমন কঠিন, তেমনি কোমল। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁকে বলেছিলেন—“প্রাচীন ঋষির প্রজ্ঞা, ইংরেজের কর্মোদ্যম, আর বাঙালি মায়ের হৃদয়বৃত্তি।”

তবু আজ, এই বাংলায়, তাঁর জন্মদিনে রাষ্ট্রীয় ক্যালেন্ডার নীরব। যেন বিদ্যাসাগর শুধু পশ্চিমবঙ্গের, বাংলাদেশে তাঁর কোনো স্থান নেই। অথচ এই ভূখণ্ডেও তাঁর আদর্শের ছায়া পড়েছিল—নারীশিক্ষার প্রসারে, সমাজ সংস্কারে, ভাষার শুদ্ধতায়। তাঁর বর্ণপরিচয় দিয়ে আজও শিশুরা অক্ষর চিনে, অথচ তাঁর জন্মদিনে রাষ্ট্র অক্ষরহীন।

এই নীরবতা কি কেবল বিস্মৃতি? নাকি আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয়? বিদ্যাসাগরের মতো মানুষদের স্মরণ না করা মানে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইতিহাসহীন করে তোলা। রাষ্ট্র যখন নীরব, তখন নাগরিক সমাজের উচিত তাঁর আদর্শকে জাগিয়ে তোলা।

আজ প্রয়োজন বিদ্যাসাগরের মতো সাহস, তাঁর মতো দয়া, তাঁর মতো জ্ঞান। প্রয়োজন তাঁর আদর্শে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলা। কারণ বিদ্যাসাগর ছিলেন না কেবল একজন ব্যক্তি—তিনি ছিলেন এক যুগ, এক আন্দোলন, এক আলোকরেখা।

রাষ্ট্র হয়তো নীরব, কিন্তু ইতিহাস চুপ করে না। বিদ্যাসাগর আজও বেঁচে আছেন তাঁর গদ্যে, তাঁর আদর্শে, তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে, আর আমাদের বিবেকের গভীরে।

লেখকঅধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান লিটু, উপদেষ্টা সম্পাদক, odhikarpatranews@gmail.com



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: