
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত নতুন নির্বাহী আদেশে এইচ-১বি ভিসার আবেদন ফি ১,০০,০০০ ডলার নির্ধারণের ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা ও স্টার্টআপগুলো তীব্র সংকটে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি দক্ষ জনশক্তি দিয়ে খাতগুলো চালিয়ে আসা এই প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, নতুন নীতি তাদের জন্য কার্যত অচলাবস্থা তৈরি করবে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার অভিষেক সিংহ যিনি গত ১০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছেন, এই সিদ্ধান্তে তিনি চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। সিয়াটলভিত্তিক তার স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, অতিরিক্ত এক লাখ ডলার ফি বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতি বছর নতুন ৮৫ হাজার এইচ-১বি ভিসা ইস্যু হয়। এর মধ্যে অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, অ্যাপল, মেটা ও গুগলের মতো বড় টেক কোম্পানিগুলোই প্রায় ৪০ শতাংশ নিয়োগ নেয়। এদের পক্ষে নতুন ফি পরিশোধ করা তুলনামূলক সহজ হলেও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তা বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন স্ক্রেন্টনি মন্তব্য করেন, যদি আপনি নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা স্টার্টআপ হন, তবে এই ব্যয় আপনাকে শেষ করে দিতে পারে। শুধু প্রযুক্তি নয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। সিয়াটলভিত্তিক নন-প্রফিট প্রতিষ্ঠান রাইথারের প্রধান নির্বাহী ক্যারেন ব্র্যাডি বলেন, আমরা কোনোভাবেই ১ লাখ ডলার ফি বহন করতে পারব না। ভবিষ্যতে তাই আর এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে না। তিনি আরও জানান, তাদের দলে দুইজন চীনা থেরাপিস্ট রয়েছেন, যারা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের সঙ্গে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিকভাবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এদের ছাড়া আমাদের অনেক ক্লায়েন্ট কার্যত সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। বেরেনবার্গ ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ আতাকান বাকিসকান নতুন ফি-কে ‘অ্যান্টি-গ্রোথ’ নীতি হিসেবে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.৫ শতাংশ করেছেন। তিনি সতর্ক করেন এটি শ্রমবাজারকে সংকুচিত করবে, এবং উৎপাদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তবে সবাই এই ফি নিয়ে সমালোচনায় একমত নন। নেটফ্লিক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিড হেস্টিংস একে চমৎকার সমাধান বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, বড় টেক কোম্পানিগুলোর কাছে এ ব্যয় তেমন কোনো সমস্যা নয়। করপোরেট অভিবাসন বিশেষজ্ঞ এলিস ফিয়ালকোস্কি জানান, নতুন নীতির পর থেকে বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি বিদেশে বিশেষত কানাডা ও যুক্তরাজ্যে নিয়োগের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি কার্যত মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে অফশোরিং এর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত এক লাখ ডলারের এইচ-১বি ভিসা ফি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিকে নতুন এক বিতর্কের মুখে দাঁড় করিয়েছে। বড় টেক কোম্পানিগুলো হয়তো এই ব্যয় বহন করতে পারবে, কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য খাতের জন্য এটি বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় একদিকে যেমন উদ্ভাবন ও প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে, অন্যদিকে “ব্রেইন ড্রেইন”এর কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে। শেষ পর্যন্ত নীতিটি কতটা সফল হবে তা সময়ই বলবে, তবে নিশ্চিতভাবেই এর প্রভাব শ্রমবাজার ও অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলবে।
- বিশেষ প্রতিনিধি (Special National Correspondent) মোঃ সাইদুর রহমান (বাবু)
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: