odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২
International Day for Universal Access to Information

আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস: “তথ্য অধিকার” — স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও গণতন্ত্রের পথ

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:১৭

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:১৭

ঢাকা, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ – আজ ২৮ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস (International Day for Universal Access to Information, IDUAI)। এই দিনে বিশ্বজুড়ে তথ্যের অধিকার, সরকারি তথ্যের স্বচ্ছতা এবং জনগণের অংশগ্রহণমূলক শাসনবিধানের গুরুত্বকে তুলে ধরা হয়।

দিবসটির ইতিহাস ও তাৎপর্য

  • ২০১৫ সালের ১৭ নভেম্বর, UNESCO ঘোষণা করে প্রতি বছর ২৮ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস হিসাবে পালন করা হবে।
  • ২০১৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ সভা এই দিনকে औপচারি ভাবে অন্তর্ভুক্ত করে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে।
  • তবে “Right to Know Day” হিসেবে প্রথমকথা শুরু হয় ২০০২ সালে সোভিয়া, বুলগেরিয়ায়, তথ্য স্বচ্ছতা ও তথ্য অধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে।

এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো:

  1. তথ্য অধিকারকে একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা,
  2. সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার আহ্বান,
  3. জনগণের অংশগ্রহণমূলক শাসন নিশ্চিত করা,
  4. তথ্যপ্রবাহের বাধাগুলি নিরসন করা।

২০২৫ সালের থিম ও চ্যালেঞ্জ

২০২৫ সালের দিবসের থিম নির্ধারণ করা হয়েছে:

“Ensuring Access to Environmental Information in the Digital Age”
অর্থাৎ, ডিজিটাল যুগে পরিবেশ বিষয়ক তথ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার গুরুত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

কেন এই থিম? কারণ পরিবেশ সংক্রান্ত তথ্য যেমন — জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুদূষণ, জৈববৈচিত্র্য, দুর্যোগ-ঝুঁকি — সীমান্ত পেরিয়ে প্রবাহিত হয়। সেজন্য তথ্য ভাগাভাগি, উন্মুক্ত ডেটা ও আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা অপরিহার্য।

তবে বাস্তবতায় অনেক বাধা রয়েছে:

  • প্রযুক্তিগত ডিজিটাল বিভাজন (Digital Divide)
  • সরকারি তথ্যপ্রদানের ক্ষেত্রে ধীরতা ও জটিল পদ্ধতি
  • গোপনীয়তা ও সুরক্ষা যুক্ত যুক্তি
  • আইনগত জটিলতা ও বাস্তবায়ন অভাব
  • অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদ সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশে পরিস্থিতি

বাংলাদেশে “তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯” প্রযোজ্য রয়েছে, যা সরকারী নথি, অনুরোধ এবং তথ্য প্রদান প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিধান নির্ধারণ করে।
তবুও, অনেক ক্ষেত্রে তথ্য প্রাপ্তি বিলম্বিত হয়, এক্তিয়ারবাদ এবং নানা অদৃশ্য বাধা কাজ করে, বিশেষ করে গ্রামীন অঞ্চলে ও সংবেদনশীল তথ্য ক্ষেত্রে।
নাগরিক সংগঠন ও মিডিয়া প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় যে, জনপ্রশাসন, পরিবহন, পরিবেশ বিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য প্রাপ্তিতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।

আজকের দিনে বাংলাদেশে বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ, আলোচনা সভা ও সামাজিক মাধ্যম আয়োজন থাকতে পারে, যেখানে তথ্য অধিকার, আইনশৃঙ্খলা, ডিজিটাল উদ্যোগ ও সাংবাদিকতা সংক্রান্ত বিষয়ে মানুষ সচেতন হবে।

মানুষ, প্রযুক্তি ও অংশগ্রহণ

ডিজিটাল ভারতের মতো অনগ্রসর দেশগুলোর জন্য তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ওপেন ডেটা প্ল্যাটফর্ম, তথ্য প্রযুক্তি এবং সাইবার অবকাঠামোর উন্নয়ন অত্যাবশ্যক।
এছাড়া, তথ্যপ্রাপ্তি প্রক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুত করার জন্য পোর্টাল ভিত্তিক অনুরোধ পদ্ধতি, স্বয়ংক্রিয় প্রকাশ, ও অনলাইনে জানার অধিকার রেকর্ড রাখা জরুরি।
একই সঙ্গে, সরকারকে প্রযুক্তিগত ও প্রশিক্ষণমূলক সরঞ্জাম দিয়ে তথ্য কার্যপ্রণালী সর্বজনীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে।

  • সরকারকে দেওয়া আহ্বান: তথ্য প্রকাশ নীতিতে আরও সরলীকরণ, তথ্য অনুরোধের সময়সীমা কঠোরভাবে পালন, গোপনীয়তার অযথা ব্যর্থ দাবি বন্ধ করা।
  • নাগরিক ও মিডিয়া: তথ্য চাওয়ার অধিকারে সক্রিয় থাকা, অনুরোধ প্রক্রিয়া জানানো, তথ্যোধিকার আন্দোলন চালিয়ে দেওয়া।
  • বেসরকারি সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা: তথ্যসেবা, প্রযুক্তি সমর্থন, আইনগত সহায়তা ও প্রচারমূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি।

আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস শুধু একদিনের উদযাপন নয়, বরং বছরের ৩৬৫ দিন ধরে কাজ করার মনোভাব।
তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করলে জনগণ শাসনব্যবস্থায় অংশ নিতে সক্ষম হবে; সরকারের দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা বাড়বে; দুর্নীতি ও অপচয় কম হবে; এবং সামাজিক অধিকার, পরিবেশ সুরক্ষা ও মানবাধিকার রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

আজকের দিনে, প্রতিটি মানুষ ভাবুক: “আমি কি তথ্য জানতে পারছি? যদি না পারি, সে বাধা কোথায়?”
তথ্য অধিকারের প্রতি সচেতনতা বর্ধন করেই একটি দায়িত্ববোধপূর্ণ ও জবাবদিহিমূলক সমাজ গড়া সম্ভব।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: